গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে আর কি কি খাওয়া যাবে না

গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে

গর্ভধারণের পর থেকে নিজের এবং গর্ভের সন্তানের যত্ন নিতে হবে। বিশেষ করে খাবার দাবারের ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। কারণ, গর্ভাবস্থায় সুষম খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, একজন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় সব ধরনের খাবার রাখা উচিত নয়। কেননা এমন অনেক খাবার আছে যেগুলো খেলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সে জন্য গর্ভবতী মায়ের খাবারের তালিকা থেকে সেই সব খাবার বাদ দিতে হবে।

গর্ভবতী মায়ের কোন খাবার খাওয়া যাবে না

গর্ভবতী মায়ের চিনিযুক্ত ও অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া একদম ঠিক নয়। এই জাতীয় খাবার গুলোতে স্যাচুরেটেড বা ক্ষতিকর ফ্যাট বেশি থাকে, যা শরীরের জন্য ভালো না।

গর্ভবতী মা ও গর্ভের সন্তানের জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি বা জটিলতা দেখা দিতে পারে, এমন কিছু খাবারের নাম নিচে তুলে ধরা হলো-

  • ক্রিম
  • চিপস
  • চকলেট
  • ঘি-ডালডা
  • কেক পেস্ট্রি
  • মাখন
  • মিষ্টি
  • পুডিং
  • ভাজাপোড়া
  • বিস্কুট
  • আইসক্রিম
  • কোমল পানীয়

এছাড়াও এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেওয়া উচিত। কেননা এই খাবার গুলো আপনার গর্ভের শিশুর ক্ষতি করতে পারে। যেমন-

  • ছাগল, গরু ও ভেড়ার কাঁচা দুধ।
  • অ্যালকোহল বা মদ জাতীয় পানীয়।
  • কাঁচা বা ভালোভাবে সিদ্ধ না হওয়া মাংস, মাছ ও ডিম।
  • কোনো প্রানীর যকৃত (লিভার)।
  • কাঁচা দুধ দিয়ে তৈরি করা খাবার।
  • ভেষজ ঔষধ বা হারবাল।
  • অর্ধ সিদ্ধ বা কাঁচা সামুদ্রিক মাছ দিয়ে তৈরি করা খাবার (যেমন: সুশি)।
  • আপনার শরীরে অ্যালার্জি হতে পারে এমন খাবার।
  • ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় (যেমন: চা, এনার্জি ড্রিংক, কফি ও ক্যাফেইন যুক্ত কোমল পানীয়)।
  • প্রক্রিয়াজাত বা ভালোভাবে সিদ্ধ না হওয়া ফ্রোজেন মাংস (যেমন: সালামি, সসেজ ও পেপারনি)।

গর্ভাবস্থায় কি কি শাকসবজি খাওয়া যাবে আর কি কি খাওয়া যাবে না

শাকসবজি আমাদের শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ, আঁশ এবং ভিটামিন রয়েছে। এসব পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ শাকসবজি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, খাবারে রুচি বৃদ্ধি করে, হজম সহায়তা করে এবং শর্করা, আমিষ ও তেলকে শক্তিতে পরিণত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

শাকসবজি উপকারী হলেও, গর্ভাবস্থায় সব ধরনের শাকসবজি খাওয়া উচিত নয়। তাই নিচে আপনাদের জন্য গর্ভাবস্থায় খাওয়া যাবে এবং খাওয়া যাবে না এমন কিছু শাকসবজির নাম তুলে ধরা হলো।

গর্ভাবস্থায় যে সকল শাকসবজি খাওয়া যাবে তা নিচে তুলে ধরা হলো-

  • গাজর
  • মটরশুঁটি
  • মিষ্টি কুমড়া
  • ধনেপাতা
  • পালং শাক
  • মিষ্টি আলু
  • মসুর ডাল
  • টমেটো
  • ক্যাপসিকাম
  • ব্রোকলি ইত্যাদি

গর্ভাবস্থায় যে সব শাকসবজি খাওয়া যাবে না তা নিচে তুলে ধরা হলো-

  • কাঁচা পেঁপে
  • করলা
  • কাঁচা মূলা
  • সজনে ডাটা
  • বেগুন

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে আর কি কি খাওয়া যাবে না

গর্ভাবস্থায় শরীরের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য ফল খাওয়া প্রয়োজন। তবে এই সময় সব ধরনের ফল খাওয়া উচিত নয়। কেননা এমন অনেক ফল আছে যার কারণে গর্ভের শিশু ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে, এমন কি গর্ভপাতও হতে পারে। তাই জেনে নিন গর্ভাবস্থায় খাওয়া যাবে এবং খাওয়া যাবে না এমন কিছু ফলের নাম।

গর্ভাবস্থায় যে সব ফল খাওয়া যাবে তা হলো-

  • আম
  • কলা
  • খেজুর
  • জাম্বুরা
  • ডালিম
  • কমলা
  • বাঙ্গি
  • আপেল
  • মাল্টা
  • পেয়ারা
  • অ্যাভোকাডো ইত্যাদি

গর্ভাবস্থায় যে সব ফল খাওয়া যাবে না তা হলো-

  • আঙুর
  • আনারস
  • পেঁপে
  • চেরি
  • স্ট্রবেরি
  • হিমায়িত
  • তরমুজ
  • ন্যাশপাতি ইত্যাদি

গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে আর কি কি খাওয়া যাবে না

মাছ হলো সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর একটি খাবার। তাই গর্ভকালীন সময়ে সপ্তাহে অন্ততপক্ষে ২৮০ গ্রাম মাছ খাওয়া প্রয়োজন। এই পরিমাণের মাছের মধ্যে অর্ধেক খাবেন তৈলাক্ত মাছ। কেননা তৈলাক্ত মাছে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, যা শিশুর সময়ের আগে জন্ম নেওয়া প্রতিরোধ করে। এছাড়াও মা ও শিশুর বিভিন্ন ধরনের জটিলতার সম্ভাবনা থাকলে তা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।

মাছ সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর খাবার হলেও গর্ভকালীন সময়ে সব ধরনের মাছ খাওয়া উচিত নয়। কেননা সব ধরনের মাছ খেলে শিশুর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর জন্য জেনে নিন কি কি মাছ খাওয়া যাবে আর কি কি মাছ খাওয়া যাবে না।

গর্ভাবস্থায় যে যে মাছ খাওয়া যাবে তা নিচে উল্লেখ করা হলো-

  • রুই মাছ
  • বোয়াল মাছ
  • বাটা মাছ
  • চাপিলা মাছ
  • শিং মাছ
  • কাতল মাছ
  • পুঁটি মাছ
  • টেংরা মাছ
  • ইলিশ মাছ
  • মহাশোল মাছ
  • কাজলি বা বাঁশপাতা মাছ ইত্যাদি

গর্ভাবস্থায় যে যে মাছ খাওয়া যাবে না তা নিচে উল্লেখ করা হলো-

  • টুনা মাছ
  • সুশী মাছ
  • সোর্ড মাছ
  • মার্লিন মাছ
  • সিভিচ মাছ
  • সাশিমি মাছ
  • হিমায়িত মাছ
  • কিং ম্যাকরেল মাছ ইত্যাদি

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসে অতিরিক্ত খাবারের প্রয়োজন পরে না। এই সময় গর্ভবতী মায়েদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় (মর্নিং সিকনেস, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, মাথা ঘোরানো, দূর্বল লাগা, খাবারে অরুচি ইত্যাদি)। চিকিৎসকের মতে এই সময় গর্ভপাত হতে পারে এমন খাবার বাদ দিয়ে যে খাবার খেতে তার ভালো লিগে তা অল্প অল্প করে খেলেই চলবে।

বিশেষ করে এই সময়ের খাদ্য তালিকা নির্ভর করে ওজন, উচ্চতা, ও দৈনন্দিন শারীরিক পরিশ্রমসহ বেশ কিছু বিষয়ের উপর। যদি গর্ভবতী মায়ের ওজন আতিরিক্ত বেড়ে যায় তাহলে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে ব্যায়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে ওজন স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে পারেন। আবার ওজন স্বাভাবিকের থেকে কমে গেলে ব্যায়ামের পরিমাণ স্বাভাবিক রেখে খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারেন। তবে, এসব বিষয়ে অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিতে হবে। তিনি বিশেষ ভাবে আপনার খাবারের তালিকা তৈরি করে দিবেন।

প্রথম ৩ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকার একটি নমুনা নিচে তুলে ধরা হলো।এই তালিকাটি গর্ভবতী মায়ের গর্ভধারণের পূর্বের ওজন ৫৫ কেজি, উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি এবং সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন হালকা ব্যায়াম করেন এমন গর্ভবতী মায়েদের জন্য প্রযোজ্য।

খাবারের ধরন খাবারের পরিমাণ
ভাত (লাল চালের হলে ভালো হয়) ২.৫-৩ কাপ (৫০০-৬০০ গ্রাম)
কমলা অথবা হলুদ ফল ও সবজি ১ বাটি (২৫০ গ্রাম)
রঙিন ও গাঢ় সবুজ শাক ১-১.৫ বাটি (২৫০-৩৭৫ গ্রাম)
মাছ অথবা মাংস ১ টুকরা (৫০ গ্রাম)
ডিম ১টি
ঘন ডাল ২ বাটি (৫০০ গ্রাম)
দুধ ১ গ্লাস (২৫০ গ্রাম)

উল্লেখ্য, এই সকল খাবার রান্না করার সময় সীমিত পরিমাণে তেল ব্যবহার করবেন। কেননা অতিরিক্ত তেল ব্যবহারে খাবারের পুষ্টিগুণ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ক্যালরির পরিমাণও বাড়িয়ে দেয়।

গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়

সকল গর্ভবতী মায়ের একই প্রত্যাশা যে তিনি যেন সুন্দর, ফর্সা এবং সুস্থ একটি সন্তান জন্ম দিতে পারেন। এই জন্য গর্ভবতী মায়েরা প্রচলিত সকল নিয়ম-কানুন মেনে চলেন। তারা গর্ভবতী সময়ে বিভিন্ন ধরনের সাদা খাবার খান, এই ভেবে যে তাদের গর্ভের সন্তান ফর্সা হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবার নির্বাচনের উপর সন্তানের রং কেমন হবে তা নির্ভর করে না। এটা নির্ভর করে বাবা মায়ের কাছ থেকে পাওয়া জিনের উপর। তবে প্রচলিত কিছু ধারণা রয়েছে, গর্ভাবস্থায় যে সকল খাবার খাবেন তার উপরে সন্তানের গায়ের রং নির্ভর করে। আপনার যদি বিশ্বাস থাকে পুরানো কথার উপরে তাহলে খাদ্য তালিকায় এসব সাদা খাবার যোগ করতে পারেন। যদিও এসব খাবার খেলে সন্তান ফর্সা হবে এটা কোনো চিকিৎসকই নিশ্চিয়তা দিতে পারছেন না। তবে আপনারা চাইলে নিচের খাবারগুলো খেতে পারেন।

  • নারকোল
  • জাফরান-দুধ
  • দুধ
  • ডিম
  • বাদাম
  • ঘি
  • টমেটো
  • মৌরি
  • কমলা লেবু ইত্যিদি
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url