থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রায় এখন শীতের ছোঁয়া

বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রায় শীতের ছোঁয়া

চলতি মৌসুমে সারা দেশে তাপপ্রবাহ এতটায় বেড়ে গিয়েছিল যে দেশের বিভিন্ন সড়কের পিচ গলতে শুরু করেছিল। সেই পিচ গলা রোদ্দুরের তাপ এখন অনেকটায় কমে গেছে। গত দুই দিন ধরে বদলে গেছে দেশের বিভিন্ন এলাকার চিত্র, বৈশাখ মাস চললেও অনুভূত হচ্ছে শীত কাল। যেখানে দুই দিন আগেও মানুষ বৈদ্যুতিক পাখা বা এসি ব্যবহার করতে ব্যস্ত ছিল এখন বৈদ্যুতিক পাখা বন্ধ করে লেপ-কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাতে হচ্ছে। এ যেন এক অন্য রকম অনুভূতি।

দেশের অনেক জায়গায় গতপড়শু দুপুরের পর থেকেই মেঘে ঢাকা আকাশে সূর্যের তাপ তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। বিকেলের পর থেকে ধীরে ধীরে বইতে শুরু করে শীতল হাওয়া। কাল সকাল থেকে অনেক জেলায় সূর্যের দেখাই পাওয়া যায়নি। তার সাথে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ারর কারণে তাপমাত্রা কমে শীতল একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, কাল সিলেটে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় “১৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস” এবং কাল সিলেটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সিলেটে এর আগে ২৭ এপ্রিল ২০২৪ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল “২১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস”। এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত “৫৩ মিলিলিটার” সিলেটে রেকর্ড করা হয়।

গত চার দিন ধরে সিলেটের তাপমাত্রা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। ৩ মে সিলেটের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল “৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস”। ৪ মে সিলেটের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল “৩২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস”। ৫ মে সিলেটের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল “২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৬ মে সিলেটের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা “২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস”।

এছাড়াও সিলেটে বৈশাখ মাস জুড়েই কদিন পরপর বৃষ্টি হয়েছে, যে কারণে সিলেটের তাপমাত্রা আনান্যা এলাকার মতো অতোটা বাড়েনি। গত ২২ই এপ্রিল ২০২৪ সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যান্ত দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি ৫৬ মিলিমিটার সিলেটে রেকর্ড করা হয়েছিল। তবে সিলেটে কাল সকাল ৬টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত টানা ৭ ঘণ্টা বৃষ্টি হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় কয়েক দফাতে বৃষ্টি আরও হলে চলতি বৈশাখ মাসে দিনের বেলা সর্বোচ্চ বৃষ্টির পরিমাণ ছাড়িয়ে যেতে পারে সিলেট।

সিলেটের স্থায়ী বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক দিন ধরে সারা দেশে তীব্র তাপপ্রবাহ চললেও সিলেটের বাসিন্দারা তার কিছু টের পায়নি, তারা কিছুটা হলেও ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যে ছিল। এর মধ্যে কাল চলতি বৈশাখ মাসের সর্বোচ্চ ঠান্ডা আবহাওয়া অনুভব করছে তারা এবং অনেকে এই আবহাওয়াকে শীতকালের মতো বলছেন।

সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, এখন কাল-বৈশাখীর মৌসুম, এটি স্বাভাবিক আবহাওয়া। শীতকালের ঠান্ডার সঙ্গে বৈশাখ মাসের ঠান্ডার কোনো মিল নেই। বৈশাখ মাসে কেবল মাত্র বৃষ্টি হলেই ঠান্ডা অনুভূত হয় আর শীতকালে বৃষ্টি ছাড়াও ঠান্ডা থাকে। এছ্ড়াও চলতি মৌসুমে সারা দেশে তাপপ্রবাহ বইলেও সিলেটে তীব্র গরম পড়েনি।

বৃষ্টি হতে পারে আজ যেসব এলাকায়

বৈশাখ মাস মানেই ঝড় বৃষ্টির মাস। সেই নিয়মেই বৃষ্টির ধারায় ফিরেছে দেশ এবং এতে করে কমতে শুরু করেছে সারা দেশের তাপপ্রবাহ। রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা গতকাল সোমবার (০৬- ০৫-২০২৪) ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। এসময় দেশের অনান্য স্থানেও উল্লেখযোগ্য হারে তাপমাত্রা কমে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, আজ মঙ্গলবারও (০৭-০৫-২০২৪) দেশের বিভিন্ন স্থানে মুষলধারে বৃষ্টি হতে পারে। আর তাতে তাপমাত্রা আর অনেক কমে যেতে পারে।

গতকাল দেশের মাত্র তিনটি স্থানে (এলাকাগুলো হলো গোপালগঞ্জ, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা) মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। এর মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে রেকর্ড করা হয় ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগের ২৪ ঘণ্টায় মোট ১৮টি স্থানে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের অফিসারগন প্রতিদিন দেশের ৪৪টি স্টেশন থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে দেশের আবহাওয়া পরিস্থিতি তুলে ধরেন। গতকাল (০৬-০৫-২০২৪) ২৮টি স্টেশনেই কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয় ফেনীতে (১৩৮ মিলিমিটার)। তার আগের ২৪ ঘণ্টায় মোট ১৮টি স্টেশনে বৃষ্টি হয়েছিল।

গত রোববার (০৫-০৫-২০২৪) রাতে রাজধানীতে কালবৈশাখী বয়ে যায়, সেই সময় বৃষ্টির মোট পরিমাণ ছিল ৩৬ মিলিমিটার। গতকাল (০৬-০৫-২০২৪) রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগের দিন তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায় পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলেছেন, আজ ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গাসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে কোন কোন স্থানে বিক্ষিপ্ত ভাবে শিলাবৃষ্টিও হতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলামের মতে, আজ (মঙ্গলবার) দেশে বৃষ্টির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। ফলে তাপমাত্রাও আরো কমে যেতে পারে। যেসব এলাকায় এখনো মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে চলছে সেই সব এলাকায় স্বস্তি ফিরে আসতে পারে।

Advertisement

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top