ত্বকের যত্নে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করার নিয়ম ও উপকারিতা

কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম

হলুদ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। হলুদ শুধুমাত্র খাবারেই ব্যবহার করা হয় না, এটি প্রসাধনী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ কাঁচা হলুদ মুখের ব্রণ ও ব্রণের মতো অনেক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, গরমের মৌসুমে প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে মুখে হলুদ লাগালে তা ত্বকের গ্লো বাড়াতে সাহায্য করে।

রূপচর্চায় কাঁচা হলুদের ব্যবহার প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। কাঁচা হলুদ আমাদের ত্বকের জন্য খুবি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। ত্বকের অ্যান্টি-এজিং ফ্যাক্টর হিসেবে কাঁচা হলুদ খুব ভালো কাজ করে। ডার্ক স্পট, ফাইন লাইনস ও বলিরেখার মতো সমস্যা দূর করতে কাঁচা হলুদের ঝুড়ি মেলা ভার। এছাড়াও চোখের নিচে বা চারপাশে কালো দেখা গেলে রোজ ঘুমোতে যাওয়ার আগে কাঁচা হলুদ বেটে লাগাতে পাড়েন উপকার পাবেন।

শুধু কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম

শুধু কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়া একদমই উচিত নয়, কারণ কাঁচা হলুদের নিজস্ব শক্তিশালী জীবাণু নাশক ক্ষমতা রয়েছে। যে কারণে শুধু কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার ফলে বিপরীত লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। তাই শুধু কাঁচা হলুদ মুখে লাগানো থেকে বিরত থাকুন সুস্থ থাকুন।

কাঁচা হলুদ মুখে মাখার সময় অবশ্যই তার সাথে নিম পাতা, চন্দনের গুঁড়ো, মুলতানি মাটি, টক দই বা দুধ, এলোভেরা জেল, লেবুর রস অথবা বেসন ইত্যাদি উপাদান থেকে যেকোনো একটি রাখার চেষ্টা করবেন। কারণ শুধু কাঁচা হলুদ মুখে ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু এর সাথে যখন অন্যান্য উপাদান মেশানো হয় তখন এর ক্ষতিকর প্রভাব নষ্ট হয়ে যায় এবং উপকারিতা বহুগুন বেড়ে যায়।

কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম

কাঁচা হলুদ আমাদের ত্বকের সমস্যায় মজ্যাকিকের মত কাজ করে। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় কাঁচা হলুদের ব্যবহার ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। নিচে কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম সমূহ তুলে ধরা হলো-

  1. দুই চা চামচ পরিমান কাঁচা হলুদ বেটে নিন তাতে সামান্য গোলাপজল মিশিয়ে ভালো করে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে নিন (আপনি চাইলে এতে এক চা চামচ মধুও যোগ করতে পারেন)। রাতে শোবার আগে মুখ ভালো করে ধুয়ে তারপর এই পেস্টটি মুখে ভালো করে লাগিয়ে নিন। সারারাত এভাবেই রেখে দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে জল দিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন মুখ ফুরফুরে ও সতেজ লাগবে।
  2. ত্বকের উজ্জ্বলতা দ্বিগুণ করার জন্য কাঁচা হলুদের সাথে টমেটোর রস বা গাজরের রস আথবা অলিভ অয়েল মিশাতে পারেন। কাঁচা হলুদ ব্যবহারের পর মুখ উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধোয়ার চেষ্টা করবেন এবং মুখ ধোয়ার পর মশ্চারাইজার লাগাতে ভুলবেন না।

নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মুখে দিলে কি হয়

নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ আয়ুর্বেদিক হিসেবে কাজ করে। এই দুইটির মিশ্রন একসাথে ব্যবহারের অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিচে নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মুখে দিলে কি হয় তা নিয়ে আলোচনা করা হলো-

  1. দুই থেকে তিন টুকরো কাঁচা হলুদ ও কিছু নিমপাতা একসাথে সিদ্ধ করে পানি ছেঁকে আলাদা করে নিন। সিদ্ধ করা পানিতে সামান্য পরিমাণ কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। একটি তুলার সাহায্যে প্রতিদিন দুইবার চোখের নিচে এপ্লাই করুন ডার্ক সাইকেল দূর হয়ে যাবে।
  2. দুই চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা, এক টেবিল চামচ নিমপাতা বাটা, আধা চা চামচ চন্দনের গুঁড়ো একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন। তারপর এটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট আপেক্ষা করুন। এর পর পরিস্কার পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধূয়ে নিন। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন এভাবে ব্যবহার করলে ত্বক দুধের মত সাদা হবে।
  3. এক চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা, এক চা চামচ নিম পাতা বাটা ও পরিমাণ মতো পানি নিয়ে একটি পেষ্ট তৈরি করে নিন। এরপর এই পেষ্টটি ভালো করে মূখে লাগিয়ে নিন এবং ১০ মিনিট আপেক্ষা করুন। মূখের পেষ্টটি শুকিয়ে গেলে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দুইদিন এভাবে ব্যবহার করুন, ত্বকের উজ্জ্বলতা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
  4. এক চা চামচ হলুদ বাটা, এক চা চামচ নিম পাতা বাটা, এক টেবিল চামচ লেবুর রস ও পরিমাণ মতো মুলতানি মাটি নিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। তারপর ভালো করে সারা মূখে মেখে নিন এবং ৩০ মিনিট আপেক্ষা করুন। তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে মূখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দুইদিন এভাবে ব্যবহার করুন, ত্বকের রোদে পোড়া দাগ পুরোপুরি দূর হবে যাবে।
  5. পরিমাণ মতো কাঁচা হলুদ ও নিমপাতা বেটে নিয়ে তার সাথে দুই চা চামচ এলোভেরা জেল ভালোভাবে মিশিয়ে একটি পেষ্ট বানিয়ে নিন। পেষ্টটি ত্বকে রোদে পুড়ে যাওয়া কালো স্থান গুলোতে ভালো করে লাগিয়ে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট আপেক্ষা করুন। তারপর পরিষ্কার পানি গিয়ে ধূয়ে নিন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে রোদে পুড়ে যাওয়া স্থানগুলো আবার আগের মতো সাদা হয়ে যাবে।
  6. কয়েক টুকরো কাঁচা হলুদ ও পরিমান মত সিদ্ধ করা নিমপাতা একসাথে বেটে নিন বা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। তারপর এর মধ্যে তিন চা চামচ মধু ও এক টেবিল চামচ লেবুর রস দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে একটি পেষ্ট তৈরি করে নিন। এই পেষ্টটি মুখ, ঘাড়, গলা সহ হাত-পায়েও লাগিয়ে নিন। তারপর শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে যাওয়ার পর পরিষ্কার পানি দিয়ে গোসল করে নিন। ত্বক সতেজ রাখার জন্য এই পেষ্টটি সপ্তাহে একবার ব্যবহার করুন। তবে এটি ব্যবহার করার পর আবশ্যয় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন।
  7. খোঁচ-পাচরা ধূর করতে নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ এক সাথে বেটে মুখে ও সারা শরীরে ভালো করে লাগিয়ে নিন। তারপর ৩০ থেকে ৪০ মিনিট আপেক্ষা করে মিশ্রনটি শুকিয়ে নিন। এরপর গোসল করে নিন। নিয়মিত ৭ দিন এভাবে ব্যবহার করলে আপনার শরীরের খোঁচ-পাচরা ভালো হয়ে যাবে (যদি খোঁচ-পাচরার পরিমান বেশি হয় তাহলে আরো কিছুদিন ব্যবহার করুন)।

উপরিউক্ত টিপস গুলোর মধ্য থেকে আপনি আপনার স্কিনের জন্য যে কোন একটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে আপনার স্ক্রিন কেমন সেটা আমরা জানি না। তাই যে কোন কিছু ত্বকে ব্যবহার করার আগে আবশ্যয় ভেবে নিবেন এবং নিশ্চিত হয়ে নিবেন যে ঐ উপাদানটি আপনার ত্বকের সাথে মানানসই হবে কিনা।

ব্রণ দূর করতে কাঁচা হলুদ

ব্রণ দূর করতে পরিমাণ মতো কাঁচা হলুদ ও নিম পাতা একসাথে শিল পাটায় বেটে নিন বা ব্লেন্ড করে নিন। তারপর তার সাথে এক চা চামচ পরিমান মধু মিশিয়ে মুখে, ঘাড়ে ও গলায় লাগান। টানা দুই সপ্তাহ এভাবে ব্যবহার করলে ব্রণের প্রকোপ অনেকটা কমে যাবে।

ত্বকের যত্নে কাঁচা হলুদের উপকারিতা

ত্বকের যত্নে কাঁচা হলুদের অনেক উপকারিতা রয়েছে যা বলে শেষ করা যাবে না। নিচে ত্বকের যত্নে কাঁচা হলুদের কয়েকটি উপকারিতা তুলে ধরা হলো-

  1. কাঁচা হলুদ মুখের ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে।
  2. ত্বকের প্রদাহ দূর করতে কাঁচা হলুদের জুরি মেলা ভার।
  3. কাঁচা হলুদ মুখের দাগ দূর করে ত্বককে দাগহীন করতে সাহায্য করে।
  4. ফাইন লাইন বা বলিরেখার মত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
  5. গ্রীষ্মে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা পেতে কাঁচা হলুদ খুবি উপকারি।
  6. কাঁচা হলুদ ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url