ত্বকের যত্নে মধুর ব্যবহার ও উপকারিতা

মুখে মধু মাখার নিয়ম

মধু হল এক প্রকারের ঘন তরল মিষ্টি পদার্থ, যা মৌমাছি ও অন্যান্য পতঙ্গ ফুলের নির্যাস হতে সংগ্রহ করে মৌচাকে সংরক্ষণ করে। মধু উচ্চ ঔষধি গুণ সম্পন্ন একটি প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান। মধুর সব থেকে বড় গুন হল এটি কখনোই নষ্ট হয় না হাজার বছর পরেও মধুর গুণাগুণ ও মান ঠিক থাকে।

মুখে মধু মাখার নিয়ম

অনেকেই মধু ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান। কারণ মধুতে রয়েছে ভিটাইন বি, জিংক, ক্যালসিয়াম, লৌহ এবং পটাশিয়ামের মতো অনেক উপাদান। এছাড়াও উচ্চ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধক কার্যকর নির্যাস রয়েছে যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।

নিচে মুখে মধু মাখার নিয়ম সমূহ তুলে ধরা হলো-

  1. মুখের ব্রণ দূর করতে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধূয়ে নিন। তারপর আধা চা চামচ মধু মুখে গোলাকার করে মালিশ করে ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। এটা মুখের ব্রণ দূর করার সাথে সাথে লোমকূপ উন্মুক্ত করবে এবং বিরক্তি কর ব্ল্যাক হেডস থেকে মুক্তি দেবে। এছাড়াও সারাদিন ত্বক আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে।
  2. ত্বকের অস্বস্তিকর জ্বালাভাব দূর করতে ত্বক ভালো করে পরিষ্কার করে নিন। এরপর ত্বকে পাতলা করে মধুর প্রলেপ লাগিয়ে ৮ থেকে ১০ মিনিট অপেক্ষা করেন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং আলতো করে চাপ দিয়ে দিয়ে মুখের পানি মুছে নিন। এভাবে সপ্তাহে দুই একবার ব্যবহার করুণ।
  3. ত্বকের রুক্ষতা দূর করতে আধা চা চামচ মধুর সাথে এক টেবিল চামচ টক দই একটি মিশ্রন তৈরি করে নিন। তারপর এটি ত্বকে ম্যাসাজ করুন। কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করার পর ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  4. রোদে পোড়া দাগ দূর করতে মধুর সথে পাকা পেঁপে ও চন্দনের গুঁড়া মিশিয়ে ত্বকে লাগাল। তারপর ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফল পেতে এভাবে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন ব্যবহার করুণ।
  5. এছাড়াও শুধু মধু মুখে লাগিয়ে নিন। এরপর শুকিয়ে টানটান হয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধূয়ে ফেলুন। নিয়মিত এভাবে ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।

মুখে মধু মাখার উপকারিতা

মধুতে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। যে কারণে মধু খেলে বা ত্বকে ব্যবহার করলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। নিচে মুখে মধু মাখার উপকারিতা গুলো তুলে ধরা হলো-

  1. মধুতে এমন সব উপাদান রয়েছে যা তৈলাক্ত ও শুষ্ক দুই ধরনের ত্বকের জন্যই বেশ উপকারী।
  2. অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান মধুতে রয়েছে যা ব্রণ ও ব্রণের দাগ কমাতে সাহায্য করে।
  3. মধু ত্বক নরম ও মসৃণ রাখতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
  4. ত্বকের রোদে পোড়া দাগ ও বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে।
  5. মধু ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে অতুলনীয় একটি উপাদান।
  6. ত্বকে ভিতর থেকে ফর্সা ও ময়েশ্চারাইজার করতে সাহায্য করে।
  7. মধু লোম কূপের ভেতর থেকে ময়লা দূর করতে সাহায্য করে।
  8. মধু ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
  9. এছাড়াও মধুর আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। যে কারণে মধুকে মহাঔষধিও বলা হয়ে থাকে।

মধুর পুষ্টিগুন

মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান রয়েছে। ফুলের পরাগের মধুতে গ্লুকোজ রয়েছে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ, ফ্রুক্টোজ ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ, সুক্রোজ ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ এবং মল্টোজ ৫ থেকে ১২ শতাংশ। এছাড়াও অ্যামাইনো এসিড রয়েছে ২২ শতাংশ, খনিজ লবণ ২৮ শতাংশ এবং এনজাইম থাকে ১১ ভাগ । কোন চর্বি বা প্রোটিন নেই। প্রতি ১০০ গ্রাম মধুতে ২৮৮ ক্যালরি থাকে এবং ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, আয়োডিন, জিংক ও কপার সহ অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান রয়েছে।

মধু দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়

মধু ব্যবহার করে ত্বকের ব্রণ নিশ্চিন্তে দূর করার পারবেন। কিন্তু অনেকেই বুঝেন না কিভাবে মধু ব্যবহার করে ত্বকের ব্রণ দূর করবেন। যে কারণে আমরা আপনাদেরকে এই পোষ্টের মাধ্যমে মধু দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায় সম্পর্কে জানাব। চলুন তাহলে যেনে নেওয়া যাক মধু দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায় সমূহ-

  1. যাদের ব্রণের সমস্যা আছে তারা প্রথমে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধূয়ে নিন। তারপর পরিষ্কার সুতি কাপড় দিয়ে মুখ মুছে নিন। এরপর মুখে সরাসরি মধু লাগিয়ে সারারাত রেখে পরের দিন সকালে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করুন ব্রণ দূর হয়ে যাবে।
  2. একটি পাত্রে পরিমাণ মতো নিম পাতার গুঁড়া নিয়ে তার সাথে প্রয়োজন মতো মধু মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করে নিন। এরপর ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিট আপেক্ষা করুন। তারপর পরিষ্কার সুতি কাপড় দিয়ে ত্বক মুছে ঘুমিয়ে পড়ুন। পরের দিন সকালে উঠে ত্বক ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে ব্রণ দূর হয়ে যাবে।
  3. একটি পাত্রে আধা চা চামচ মধু নিয়ে তার সাথে ২ টেবিল চামচ পানি মেশান, এরপর এর সাথে আধা চা চামচ দই ভালো ভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর তাতে পরিষ্কার তুলোর টুকরা ভিজিয়ে নিয়ে ত্বকে ঘষে ঘষে লাগিয়ে সারারাত রেখে দিন এবং পরেরদিন সকালে ধুয়ে ফেলুন।

তৈলাক্ত ত্বকে মধুর ব্যবহার

মধু ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে "এক্সফোলিয়েট" করে যা ত্বকের অতিরিক্ত তেল বা তৈলাক্ত ভাব কমাতে সাহায্য করে। মধুর সথে কাঠ বাদামের গুঁড়া মিশিয়ে তৈলাক্ত মুখে বা ত্বকের উপর মালিশ করে পাঁচ থেকে দশ মিনিট আপেক্ষা করুন। তারপর হালকা গরম বা কুসুম গরম পানি দিয়ে তা ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সহায়ক।

শুধু মধু মুখে মাখলে কি হয়

মধুতে রয়েছে আরাম দায়ক কিছু পুষ্টিগুন বা ক্ষমতা যা ত্বকের ক্ষতি দ্রুত সারিয়ে দিতে পারে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রোবায়োটিক, পুষ্টি উপাদান এবং নির্যাস একসঙ্গে কাজ করে ত্বককে করে তোলে মসৃণ তার পাশাপাশি ত্বকে টানটান ও সুন্দর রাখতেও সাহায্য করে। মধু ত্বককে তৈলাক্ত করে না বরং ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url