কালো মরিচের বৈশিষ্ট্য, চাষ পদ্ধতি, বীজের দাম, উপকারিতা ও অপকারিতা

কালো মরিচ চাষ পদ্ধতি

আমাদের দেশের প্রায় সব জায়গায় বাণিজ্যিক ভাবে মরিচ চাষ করা হয়ে থাকে। তাছাড়া পরিবারের চাহিদা মিটাতে অনেকেই বাড়ির আঙ্গিনায় বা জমিতে অল্প পরিসারে মরিচ চাষ করে থাকেন। যারা পরিবারের চাহিদা মেটাতে অল্প পরিসরে মরিচ চাষ করে থাকেন তারা কালো মরিচ চাষ করতে পারেন।কারণ এই মরিচটি অধিক ফলন দিয়ে থাকে। নিচে কালো মরিচ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

কালো মরিচের বৈশিষ্ট্য

কালো মরিচ যে কেনে দিন জীবনে দেখেননি সেও একবার দেখলেই বুঝতে পারবেন যে এটি কালো মরিচ। কারণ এই মরিচটির নামই শুধু কালো মরিচ নয়, এটি দেখতেও কালো। নিচে কালো মরিচের বৈশিষ্ট্য গুলো তুলে ধরা হলো-

  1. বার মাস চাষ করা যায় এবং এটি
  2. একক প্রতি ফলন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ টন।
  3. প্রতিটি মরিচ ০৬ থেকে ০৮ সে.মি.লম্বা হয়।
  4. মরিচের রং আকর্ষণীয় কালো বেগুনী।
  5. দীর্ঘদিন পর্যন্ত সম পরিমাণ মরিচ পাওয়া যায়।
  6. একটা গাছ থেকে এক টানা ৪ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত মরিচ পাওয়া যায়।
  7. মরিচের প্রচুর ঝাল এবং স্বাদু।
  8. প্রতিটি মরিচ গাছ থেকে অত্যধিক ফলন পাওয়া যায়।
  9. জাতটা ভাইরাস মুক্ত।
  10. দুই থেকে চারটা মরিচ গাছ থাকলে পারিবারিক চাহিদা পূরন করা সম্ভব।

কালো মরিচ চাষ পদ্ধতি

কালো মরিচ সারা বছর ধরে চাষ করা যায়। এটি চাষ করার জন্য বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয় না। মাটি দোঁয়াশ হলে তেমন পরিচর্যা না করলেও ভালো ফলন পাওয়া যায়। কালো মরিচ চাষ পদ্ধতি নিচে আলোচনা করা হলো-

  1. উপযুক্ত জমি নির্বাচন: পানি, সেচ ও নিকাশের ব্যবস্থা রয়েছে এমন দো-আঁশ মাটির জমি কালো মরিচ চাষ করার জন্য উপযুক্ত।
  2. চারা তৈরি: জমি ভাল ভাবে চাষ ও মই দিয়ে আগাছা বাছাই করে বীজতলা প্রস্তুত করে সেখানে বীজ বপন করতে হবে।
    • শীতকালের জন্য ভাদ্র-আশ্বিণ মাসে এবং বর্ষা কালের জন্য ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বীজ তলায় বীজ বপন করতে হবে।
    • চারা ১০ সে.মি. উঁচু হলে তুলে জমিতে রোপণ করতে হবে।
  3. চারা রোপণ: জমির আগাছা পরিষ্কার করে ৪ থেকে ৫ টি চাষ ও মই দিয়ে জমি প্রস্তুত করে তার পর চারা রোপণ করতে হবে।
  4. দূরত্ব: সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৬০ থেকে ৭০ সে.মি. এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ৩০ থেকে ৪০ সে.মি.।
  5. সার ব্যবস্থাপনা: হেক্টর প্রতি মোট ১০ টন গোবর, ২৫০ কেজি ইউরিয়া, ২০০ কেজি টিএসপি এবং ১৫০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
    • জমি তৈরি করার সময় সমস্ত গোবর, ৫০ কেজি টিএসপি এবং ৫০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
    • তারপর চারা রোপণ করার ২৫ দিন পর ৮৪ কেজি ইউরিয়া, ৫০ কেজি টিএসপি এবং ৩৪ কেজি এমওপি সার প্রথম বার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
    • চারা লাগানোর ৫০ দিন পর ৮৩ কেজি ইউরিয়া, ৫০ কেজি টিএসপি এবং ৩৩ কেজি এমওপি সার দ্বিতীয় বার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
    • চারা লাগানোর ৭০ দিন পর ৮৩ কেজি ইউরিয়া, ৫০ কেজি টিএসপি এবং ৩৩ কেজি এমওপি সার তৃতীয় বার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
    • সার উপরি প্রয়োগের সময় কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে আলগা করে দিতে হবে।
  6. সেচ প্রয়োগ: মরিচের জমিতে প্রযাপ্ত পরিমানে রস না থাকলে সেচ প্রয়োগ করতে হবে এবং পানি নিকাশেরও ব্যবস্থা রাখতে হবে।
  7. আগাছা দমন: জমিতে আগাছা দেখা দিলে তা পরিষ্কার করতে হবে।
  8. রোগবালাই ও পোকামাকড়: কালো মরিচ একটি ভাইরাস মুক্ত জাত এবং এর রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমন কম হয়। তবে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে সাথে সাথে অনুমোদিত কিটনাশক অনুমোদিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
  9. ফসল সংগ্রহ: চারা রোপন করার ৩০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে গাছে ফুল আসে এবং ফুল আসার ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে কাঁচা মরিচ তুলতে পারবেন।

কালো মরিচের বীজের দাম কত

বাজারে কালো মরিচের বীজের অনেক দাম। কারণ বাজারে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। নিচে কালো মরিচের বীজের দাম তুলে ধরা হলো-

  • ৪০টি কালো মরিচের বীজের দাম ৪০ টাকা।
  • ০.৫ গ্রাম কালো মরিচের বীজের দাম ৫০ টাকা।
  • ১ গ্রাম কালো মরিচের বীজের দাম ৯০ টাকা।

পুষ্টিগুন:

মরিচে আমিষ, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন- সি ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে মুখে ঘা হয় না।

Advertisement

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top