বাসমতি ধান এর বৈশিষ্ট্য ও চাষ পদ্ধতি

বাসমতি ধানের চাষ পদ্ধতি

বাসমতি ধান তার চমৎকার গুণাবলীর জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। বাসমতি ধান হল একটি বিশেষ ধরনের ধান যা শুধুমাত্র ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে উৎপন্ন হয়। তবে, নেপালের কাঠমান্ডু উপত্যকা ও তরাই অঞ্চলে প্রধানত বাসমতী চাল উৎপাদিত হয় (বাসমতী চালের স্বতন্ত্র নেপালি জাতগুলি বিশ্বব্যাপী রপ্তানি করা নিষিদ্ধ। তবে, এই নিষেধাজ্ঞা খুব শীঘ্রই প্রত্যাহার করা হতে পারে)। সুগন্ধ ও সুস্বাদের জন্য এ ধানের চালের ভাত সবার কাছে প্রিয়। বাসমতী হলো একটি সংস্কৃত শব্দ যার মানে সুগন্ধযুক্ত। সাদা বাসমতী চাল ছাড়াও বাদামী ধরনের বিশেষ বাসমতী চালও পাওয়া যায়।

বাসমতি ধানের বৈশিষ্ট্য

বাসমতি ধানের চাল দেখেননি এমন মানুষ খুজে পেতে কষ্ট হবে। বাসমতী চালের ভাত বা বিরিয়ানী দেখলেই খিদে যেন বহু গুন বেড়ে যায় মহুর্তের মধ্যে। কিন্তু আমরা অনেকেই আমাদের প্রিয় বাসমতী ধানের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না। আপনাদের সুবিদার্থে বাসমতি ধানের বৈশিষ্ট্য গুলো নিচে তুলে ধরা হলো-

  1. বাসমতি ধানের জীবনকাল ১৩৫ থেকে ১৫০ দিন।
  2. বাসমতি ধান গাছের গড় উচ্চতা ৩৬ থেকে ৪৮ ইঞ্চি।
  3. বোরো এবং আমন দুই মৌসুমেই বাসমতি ধান চাষ করা যায়।
  4. বাসমতি ধানের প্রতি গাছে ১০ থেকে ১২টি কুশি হয়।
  5. বাসমতি ধান লাম্বা ও চিকন হয়।
  6. বাসমতি ধান একটি সুগন্ধি জাত।
  7. বাসমতি ধানের চাল চিকন ও ধবধবে সাদা হয়।
  8. রান্না করা ভাত ঝরঝরে হয় এবং দীর্ঘক্ষন সংরক্ষন করা যায়।
  9. বাসমতি ধানের গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৫.৮ থেকে ৮.৭১ মেট্রিক টন হয়ে থাকে।
  10. সব থেকে বড় গুন হল এটি খেতে খুবই সুস্বাদু ও মজাদার, যে কারণে এটি সবার কাছে প্রিয়।

বাসমতি ধানের চাষ পদ্ধতি

আমাদের দেশের অনেক চাষী এখন বাসমতি ধান চাষ করছেন এবং তারা অনেকটা সফলও হয়েছেন। তাদের মতে বাসমতি ধান চাষের খরচ কম এবং আন্যান্য ধানের তুলনায় এর জীবন কাল কিছুটা কম। নিচে বাসমতি ধানের চাষ পদ্ধতি তুলে ধরা হলো-

  1. বীজ তলায় বীজ বপন:
    • বোরো মৌসুমের জন্য: ০১ অগ্রহায়ণ থেকে ২০ অগ্রহায়ণ (১৫ নভেম্বর থেকে ০৫ ডিসেম্বর)।
    • আমন মৌসুমের জন্য: ০১ আষাঢ় থেকে ২৩ আষাঢ় (১৫ জুন থেকে ০৭ জুলাই)।
  2. চারা রোপণ: ২৫ থেকে ৩৫ দিন বয়সী চারা রোপণ করতে হবে।
  3. রোপণ দূরত্ব: সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০ সে.মি. (৮ ইঞ্চি) এবং গুছি থেকে গুছির দূরত্ব ২০ সে.মি. (৮ ইঞ্চি)।
  4. সার ব্যবস্থাপনা (বিঘা প্রতি):
    • ইউরিয়া ৩০ থেকে ৪০ কেজি, টিএসপি ০৭ থেকে ১৪ কেজি, এমপি ০৮ থেকে ১৬ কেজি, জিপসাম ০৮ থেকে ৩৫ কেজি এবং দস্তা ০.৯ থেকে ৩.০ কেজি।
      • ইউরিয়া সার তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।
      • চারা রোপণের ১৫ থেকে ২০ দিন পর প্রথম উপরি প্রয়োগ করতে হবে, দ্বিতীয় উপরি প্রয়োগ চারা রোপণের ৩৫ থেকে ৪০ দিন পর এবং তৃতীয় উপরি প্রয়োগ চারা রোপণের ৫০ থেকে ৫৫ দিন পর।
      • ইউরিয়া সার প্রয়োগ করার পর সার হাত দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
      • ইউরিয়া সার প্রয়োগ করার সঠিক সময় নির্ণয় করার জন্য লিফ কালার চার্ট ব্যবহার করতে হবে।
  5. আগাছা দমন: চারা রোপণের পর ৪৫ দিন পর্যন্ত জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
  6. সেচ ব্যবহার: চারা রোপণ করার পরথেকে ধানে দুধ আশা পর্যন্ত জমিতে প্রয়োজন মাফিক পানি রাখতে হবে।
  7. ধান উপযুক্ত সময়ে কাটা এবং মাঠ থেকে তোলার ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

বাসমতী চালে কি কি পুষ্টি রয়েছে?

যে কোন চালের আসল পুষ্টিগুণ সেই চালের উপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে প্রতি এক প্লেট বাসমতি চালের ভাতে উচ্চ মাত্রার ক্যালরি এবং কার্বোহাইড্রেটের সাথে কিছু মাইক্রোনিউট্রিইয়েন্টস (ফোলেট, থায়ামিন এবং সেলেনিয়াম) থাকে। নিচে এক কাপ (অর্থাৎ ১৬৩ গ্রাম) রান্না করা বাসমতী চালের পুষ্টিগুন তুরে ধরা হলো-

  • ক্যালরি
  • প্রোটিন
  • ফ্যাট
  • কার্বোহাইড্রেট
  • ফাইবার
  • সোডিয়াম
  • ফোলেট
  • থায়ামিন
  • সেলেনিয়াম
  • নিয়াসিন
  • কপার
  • আয়রন
  • ভিটামিন বি৬
  • জিঙ্ক
  • ফসফরাস
  • ম্যাগনেসিয়াম

বাসমতি ধান কোথায় চাষ হয়?

প্রধানত বাসমতি ধান ভারত ও পাকিস্তানে চাষ হয়। এটি হিমালয়ের পাদদেশের অঞ্চল গুলো, যেমন- পাঞ্জাব, হিমাচলপ্রদেশ, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, দিল্লি, জম্মু ও কাশ্মীরে চাষ হয়। এছাড়াও আমাদের দেশে বিভিন্ন আঞ্চলে এখন বাসমতি ধানের চাষ করা হয়।

কত প্রকারের বাসমতি চাল পাওয়া যায়?

বাজারে বর্তমানে বিভিন্ন প্রকারের বাসমতি চাল পাওয়া যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাসমতি চাল হলো পাঞ্জাব, কের্নাল, ডেরাদুন, সফিদন, হরিয়ানা, কস্তুরি, বাসমতী ১৯৮, বাসমতী ২১৭, বাদামী বাসমতি ইত্যাদি। তবে সাদা এবং বাদামী এই দুই কালারের বাসমতী চাল হয়ে থাকে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url