বোম্বাই মরিচ এর চাষ পদ্ধতি, গাছের যত্ন, উপকারিতা ও দাম

বোম্বাই মরিচ

বোম্বাই মরিচ বাড়ির আঙ্গিনায়, ছাদে বা বারান্দায় চাষ করতে পারেন। এছাড়াও পতিত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বোম্বাই মরিচ চাষ করতে পারেন। বোম্বাই মরিচ মূলত মরিচেরই একটি প্রজাতি, তবে এই মরিছটির সুগন্ধ, স্বাদ আর প্রচণ্ড ঝালের কারণে এটি মানুষের কাছে অধিক পরিচিত। এই মরিছের বহু নাম রয়েছে যেমন: নাগা মরিচ, কামরাঙা মরিচ বা ভূত জলোকিয়া নামেও পরিচিত।

বোম্বাই মরিচ চাষ পদ্ধতি

বোম্বাই মরিচ গ্রীষ্ম ও শীত উভয় মৌসুমে বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ করা যায়। তবে ফসলের প্রাথমিক অবস্থায় অল্প পরিমানে বৃষ্টি ও ফসলের বাড়ার সময় পরিমিত বৃষ্টি হলে মরিচ খুব ভালো হয়। অতিরিক্ত বা পরিমাণের কম বৃষ্টি মরিচের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে গাছের ফুল-ফল ধরা কমে যায় এবং অধিক আর্দ্রতায় ফল পচে যায়।

  1. বীজ বা চারা: যে কোনো হর্টিকালচার সেন্টার, নার্সারি বা গ্রামের হাট বাজার থেকেও বোম্বাই মরিচ চারা কিনতে পারবেন। তবে বিশ্বস্ত কোনো মাধ্যম থেকে চারা কিনতে পারলে ভালো হয়। এতে করে চারা জাত ও মান সম্পর্কে নিশ্চিত থাকা যায়।
    • বীজ থেকেও চারা তৈরি করে রোপণ করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে আপনাকে আবশ্যয় ভালো মানের প্যাকেট জাত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
  2. জমি নির্বাচন: জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ উর্বর দোআঁশ মাটি বোম্বাই মরিচ চাষের জন্য বেশি ভালো। তবে অম্লমাটিতেও বোম্বাই মরিচের চাষ করা যায়। কিন্তু ক্ষারীয় মাটিতে বোম্বাই মরিচের ফলন ভালো হয় না (অর্থাৎ মাটির পিএইচ ৫.৫ হতে ৭.০ এর মধ্যে থাকতে হবে)।
    • বৃষ্টির সময় পানি দাঁড়ায় না এবং ছায়ামুক্ত উঁচু জমি বোম্বাই মরিচ চাষের জন্য উপযোগী জমি।
    • সেচ এলাকায় অথবা নদী-নালা, খাল-বিল বা দীঘির আশপাশে, পানের বরজ, বাগানের রাস্তা, লেবু কমলা, কলা, পেঁপেসহ অন্যান্য দ্রুতবর্ধনশীল ফল বাগান বা সবজি বাগানের পাশে উঁচু ভিটায় বোম্বাই মরিচ চাষ করা যায়।
  3. জমি তৈরি: নির্বাচিত জমিতে উঁচু করে মাটি তুলে প্লট বানিয়ে নিতে হবে তার পর সারি সারি করে বোম্বাই মরিচের চারা রোপণ করতে হবে। ৩ ফুট চওড়া বেডে ২ লাইন বোম্বাই মরিচের চারা লাগাতে হবে।
    • যদি নিজে চারা তৈরি করে রোপন করেন তবে আগেই বীজতলায় পলিথিনে চারা তৈরি করে নিতে হবে।
    • সরাসরিও বীজ বপন করতে পারেন, সে ক্ষেত্রে বীজ বেশি প্রয়োজন হবে এবং সময়ও বেশি লাগবে, সাথে আর্থিক ক্ষতি হবে।
  4. পরিচর্যা: পারিবারিকভাবে অল্প পরিমাণে চাষ করলে তেমন একটা পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে না। তবে বাণ্যিজ্যিকভাবে চাষ করলে জমি তৈরি করার প্রয়োজনীয় সকল জৈব ও রাসায়নিক সার ২ থেকে আড়াই ফুট দূরে লাইন করে দিতে হবে।
    • সারের পরিমাণ কিছুটা সাধারণ মরিচের মতো হবে তবে গাছ অনেকটা বড় ও বেশি দিন বাঁচে বলে প্রতি বছরই সার দিতে হবে।
    • যেহেতু বোম্বাই মরিচ বহুবর্ষজীবী তাই গাছ প্রতি যত্ন আবশ্যকীয়। বোম্বাই মরিচ পানিবদ্ধতা মোটেই সহ্য করতে পারে না।
  5. ফুল ও ফল আসা: চারা লাগানোর ৩০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যেই ফুল ধরে। ফুল আসার ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে মরিচ খাবার উপযোগী হয়।
  6. রোগবালাই: বোম্বাই মরিচের তেমন একটা রোগবালাই হয় না, অল্প কিছু পোকামাকড়ের সমস্যা মাঝে মাঝে দেখা যায়। এর মধ্যে পাতা কোঁকড়ানো, অতিক্ষুদ্র গাঢ় বাদামি মাকড়সা, থ্রিপস পোকা, জাবপোকা, ফলছিদ্রকারী পোকা অন্যতম।
    • রোগের মধ্যে কান্ড পচা ও মরিচপচা, ঢলেপড়া রোগ, ডগা শুকিয়ে যাওয়া ও ফল পচে যাওয়া উল্লেখযোগ্য।
    • আবাদের শুরু থেকে সুষম সার প্রয়োগ, সুস্থ সবল চারা রোপণ, সেচ নিকাশ, পানি সেচ, আগাছা দমন, রোগে আক্রান্ত পাতা বা ডাল ছিঁড়ে ফেলা বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারলে ফলন ভালো হবে।

ছাদ বাগানে বা বারান্দার টবে বোম্বাই মরিচ চাষ পদ্ধতি

প্রতিটি চারা লাগানোর আগে টবের মাটি প্রস্তুত করে নিতে হবে। প্রতিটি ১০ ইঞ্চি টবের জন্য ২ ভাগ মাটি ও ১ ভাগ শুকনো গোবর নিচে হবে সাথে ১ চিমটি ইউরিয়া, ২ চিমটি টিএসপি, ১ চিমটি পটাশ সার ও অল্প পরিমাণ সরিষার খৈল একত্রে মিশিয়ে মাটি টবে ভরে নিয়ে ৪ থেকে ৫ দিন রোদে শুকাতে হবে।

তারপর এই মাটিতে চারা লাগিয়ে দিন। চারা যদি সবল না হয় তাহলে দিনে ২ থেকে ৩ বার ইউরিয়া মিশ্রিত পানি স্প্রে করলে চারা সবল হয়ে যাবে।

বোম্বাই মরিচ গাছের যত্ন

প্রতি সপ্তাহে ১বার করে মাটি খুঁচিয়ে আলগা করে দিন, আর আগাছা তুলে ফেলুন। চারা লাগানোর ৩০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যেই ফুল ধরবে গাছে। ফুল আসার ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে মরিচ খাবার উপযোগী হয়। তবে আপনি চাইলে তার আগেও তুলে খেতে পারবেন। কারণ বোম্বাই মরিচ ছোট থেকেই ঝাল আর স্বাধ আটুট থাকে।

মরিচ গাছের একেবারের নিচের ডাল বা শাখাগুলো কেটে দিবেন, নাহলে গাছের জোর কমে যাবে এবং মরিচ ছোট হবে।

বোম্বাই মরিচ গাছ বহুবর্ষজীবী তাই ১টা মরিচ গাছ থেকেই অনেক দিন ফল পাবেন। সঠিক পরিচর্যা পেলে ১টা গাছে যে পরিমাণ মরিচ ধরবে তা খেয়ে শেষ করা কঠিন।

৩ থেকে ৫টা গাছ হলে পোকামাকড় দমন করার জন্য কীটনাশকের প্রয়োজন নেই হাতেই মেরে ফেলবেন। গাছ বেশি হলে অথবা কীটনাশক দিতে চাইলে মরটাস ব্যবহার করবেন। তবে শাকসবজিতে কীটনাশক ব্যবহার না করাই ভালো।

বোম্বাই মরিচের উপকারিতা

বুদ্ধির বিকাশে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, লোহিত কণিকার গঠনে, হৃদরোগের ঝুঁকি প্রতিরোধে, পেট ব্যথা ও সর্দি উপশমে, চোখের জ্যোতি বাড়াতে বোম্বাই মরিচ উপকারিতা অপরিসীম।

  1. ডায়াবেটিসের রোগীদের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে ক্যাপসেইসিনের ভূমিকা রয়েছে যা বোম্বাই মরিচে রয়েছে। তাছাড়ও এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
  2. বোম্বাই মরিচ পরিপাকতন্ত্রে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে, যা আমাদের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে ও বিপাকক্রিয়ায় সাহায্য করে।
  3. হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালির স্নায়ুগুলো সচল রাখতে বা স্নায়ুগুলোর সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে বোম্বাই মরিচ।
  4. বোম্বাই মরিচে রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি, রাইবোফ্ল্যাভিন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রনসহ আরো অনেক উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী।
  5. বোম্বাই মরিচে থাকা ক্যাপসেইসিন একধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা রক্তনালিতে চর্বি জমতে বাধা দেয়।

বোম্বাই মরিচের দাম

বোম্বাই মরিচের দাম পার পিচ ২ থেকে ৫ টাকা করে।

বোম্বাই মরিচ বীজ ২০+ টি ৪৪টাকা

বোম্বাই মরিচ ১ গ্রাম বীজ প্রতি প্যাকেট ৮০ টাকা

বোম্বাই মরিচের বিজ ২ গ্রামের প্রতি প্যাকেটের দাম ১৫০ টাকা

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url