তীব্র ঝড়সহ বজ্রবৃষ্টির আশঙ্কা (থাকবে ৩ দিন)

তীব্র ঝড়সহ বজ্রবৃষ্টির আশঙ্কা

তীব্র ঝড়সহ বজ্রবৃষ্টির আশঙ্কা

আবহাওয়া অফিস আশঙ্কা করছেন আজকে দেশের কয়েকটি অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে। সেই সাথে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন (আজ শুক্রবার (১০ মে ২০২৪ তারিখের) দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেয়া এক পূর্বাভাসে জানিয়েছেন তীব্র ঝড়সহ বজ্রবৃষ্টির আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস)।

আবহাওয়া অফিসারের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, আজ খুলনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, মাদারীপুর ও ফরিদপুর জেলার উপর দিয়ে উত্তর-পশ্চিম বা পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেই সাথে বৃষ্টিপাত অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। যে কারণে এই সব এলাকার নদীবন্দর গুলোকে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এছাড়াও কুষ্টিয়া, যশোর, কুমিল্লা, ঢাকা এবং সিলেট জেলার উপর দিয়ে উত্তর-পশ্চিম বা পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেই সাথে বৃষ্টিপাত অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। যে কারণে এসব এলাকার নদীবন্দর গুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে আবহাওয়া অফিসের অন্য আর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, বরিশাল, সিলেট ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গাসহ চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে কোন কোন স্থানে বিক্ষিপ্তি ভাবে শিলাবৃষ্টিও হতে পারে।

ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা

আবহাওয়া অফিস দেশের সব বিভাগে ঝড় বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছেন। কোন কোন স্থানে শিলাবৃষ্টিও হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।

আবহাওয়া অফিসের অফাসারদের মতে, লঘুচাপের বাড়তি অংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এ অবস্থায় আজকে (১০ মে ২০২৪ তারিথ রোজ শুক্রবার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গাসহ চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এই সময়ে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। এমনকি কোন কোন জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে শিলাবৃষ্টিও হতে পারে। দেশের সব বিভাগে ঝড়-বৃষ্টির এই প্রবণতা পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা পর্যান্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

আবহাওয়া অফিস যশোরে গতকাল (৯ মে ২০২৪) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেন ৩৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কুড়িগ্রামের রাজারহাটে রেকর্ড করেন ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অফিস বলছেন, সারা দেশে শুক্রবার ও শনিবার (১০-০৫-২০২৪ ও ১১-০৫-২০২৪) দিনের তাপমাত্রা সামান্য পরিমান কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত আবস্থায় থাকতে পারে। তবে শনিবার রাতের তাপমাত্রা সামান্য কিছুটা বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন। পরেরদিন রোববার (১২-০৫-২০২৪) দিনের ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরের বর্ধিত ৫ দিনের তাপমাত্রা বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন।

বজ্রবৃষ্টি হলে একই এলাকার সব জায়গায় বৃষ্টি হয় না কেন?

আবহাওয়াবিদের মতে, বজ্রবৃষ্টির সময় একই এলাকার কিছু অংশে বৃষ্টি হতে পারে আবার কিছু অংশে বৃষ্টি নাও হতে পারে কারণ হলো এটাই নাকি "বজ্রবৃষ্টির মূল ধর্ম"। কিন্তু কেন এমন ধর্ম তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কী?

সর্বত্র বৃষ্টি না হওয়ার কারণ

সাধারণত আকাশে যখন প্রচন্ড বজ্রমেঘ তৈরি হয়ে যায় তখন তার গঠন থাকে "ত্রিমাত্রিক"। যে কারণে সব জায়গায় বৃষ্টি হয় না। “অর্থাৎ, বজ্রমেঘের গঠন থাকে ত্রিমাত্রিক যে কারণে একটি ত্রিমাত্রিক শক্তিশালী বজ্রঝড় অগ্রসর হওয়ার সময় তার আয়তন কম বেশি হতে পারে,” ফলে একই এলাকার সর্বত্র বৃষ্টি হতে পারে ন।

আবহাওয়াবিদের মতে, একটি তীব্র বজ্রমেঘের দৈর্ঘ্য ২২ থেকে ২৪ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে এবং এর প্রস্থ ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। তবে, মাঝারি বা ছোট আকারের বজ্রঝড়ের উচ্চতা হয় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার এবং বড় আকারের বজ্রঝড়ের উচ্চতা ১৮ থেকে ২২ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

সাধারণত বজ্রঝড়ের গতিবেগ থাকে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। জ্রঝড়ের আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বজ্রঝড় সরল পথে চলতে পারে না, আঁকাবাঁকা পথে চলে।

যেহেতু বজ্রঝড় জিগজ্যাগ মুভমেন্ট করে। আবার শহরের মাঝে অনেক স্থাপনা থাকার কারণে বা পাহাড় থাকলে বাতাস বিভিন্ন জায়গায় বাধাপ্রাপ্ত হয়ে দিক পরিবর্তন করে নেন। তাই, বজ্রঝড় অগ্রসর হওয়ার সময় সে কোন ভাবেই একটি এলাকাকে পূর্ণরূপে কভার করতে পারে না। সেই কারণেই, কোন কোন স্থানে তাণ্ডব কম হয় আবার কোন কোন স্থানে বেশি হয়। কোথাও বৃষ্টিপাত বেশি হয় আবার কোথাও একেবাড়েই বৃষ্টিপাত হয় না।

বজ্রঝড়ের সময় কি করবেন

বজ্রঝড় মানেই বজ্রপাত। বাংলাদেশে প্রতিবছরই বজ্রপাতে অনেক মানুষ মারা যায়। যে কারণে বর্তমান আবহাওয়ায় বজ্রঝড় শহরের মানুষদের জন্য স্বস্তির হলেও প্রান্তিক মানুষদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ। সাধারণত বাংলাদেশে এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যান্ত সর্বোচ্চ বজ্রপাত হয় (২০২১ সালের এক হিসাব অনুযায়ী, এতে প্রতিবছর গড়ে দেড়শো মানুষ মারা যান)। সুতরাং, বজ্রপাতে দুর্ঘটনা এড়াতে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।

একটি বজ্রঝড় সাধারণত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পর্যান্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। এ সময়টুকু ঘরে অবস্থান করুন। খুব বেশি প্রয়োজন হলে রাবারের জুতা পায় দিয়ে বের হবেন। কারণ এটি বজ্রঝড় বা বজ্রপাতের হাত থেকে সুরক্ষা দেয়।

বজ্রবৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিলে সাথে সাথে দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় গ্রহন করুন। ভবনের ছাদে বা উঁচু ভূমিতে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। খালি জায়গায় উঁচু গাছপালা, ধাতব পদার্থ, বৈদ্যুতিক খুঁটি বা মোবাইল টাওয়ার থাকে তার কাছাকাছি থাকা যাবে না।

বজ্রপাতের সময় ছাউনিবিহীন নৌকায় মাছ ধরতে যাওয়া যাবে না। সমুদ্রে বা নদীতে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে।

যদি কেউ গাড়ির ভেতর অবস্থান করেন, তাহলে গাড়ির ধাতব অংশের সাথে শরীরের সংযোগ রাখবেন না।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url