বিনা ধান-২৫ এর বৈশিষ্ট্য ও চাষ পদ্ধতি

বিনা ধান ২৫

দেশের চাহিদা অনুসারে সরু ও চিকন (প্রিমিয়াম কোয়ালিটি) চালের জোগান না থাকায় এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বিনা ধান ২৫ মূলত বিদেশে রফতানির উদ্দেশ্যে উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ এটি উদ্ভাবন করে। বিদেশে রপ্তানিযোগ্য হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এবং আমদানি নির্ভরতা কমাবে।

বিনা ধান ২৫ প্রিমিয়াম কোয়ালিটি সম্পন্ন এবং আগাম পরিপক্ক হওয়ায় বানিজ্যিক ভাবে কৃষক পর্যায়ে সারাদেশে চাষাবাদের জন্য ২০২২ সালে অবমুক্ত করা হয়।

বিনা ধান ২৫ এর বৈশিষ্ট্য

বিনা ধান ২৫ প্রিমিয়াম কোয়ালিটির উন্নত গুণাগুণ সম্পন্ন উচ্চফলনশীল একটি জাত। নিচে বিনা ধান ২৫ এর বৈশিষ্ট্য সমূহ তুলে ধরা হলো-

  1. বিনা ধান ২৫ জাতের গাছ অনেক লম্বা হয়।
  2. গাছের কান্ড অনেক শক্ত যে কারণে হেলে পড়ে না।
  3. পূর্ণ বয়স্ক একটি গাছের গড় উচ্চতা ১১৬ সেন্টিমিটার।
  4. বিনা ধান ২৫ এর ডিগ পাতা খাড়া, সরু ও মাধ্যম হয় এবং গাঢ় সবুজ রঙের হয়।
  5. ধান পাকার পরেও ডিগপাতা গাঢ় সবুজ রঙের থাকে এবং ডিগপাতা খাড়া থাকে।
  6. আলোক অসংবেদনশীল ও স্বল্প মেয়াদী বোরো ধানের এই জাতটির জীবনকাল ১৩৮ থেকে ১৪৮ দিন।
  7. এ জাতের প্রতি গাছে ১০ থেকে ১২টি কুশি হয়।
  8. ধানের প্রতিটি ছড়ার দৈর্ঘ্য গড়ে ২৭.০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়।
  9. প্রতি শীষে পুষ্ট দানার পরিমাণ থাকে ১৫০ থেকে ১৫৫টি।
  10. ১০০০ টি পুষ্ট ধানের গড় ওজন ১৯.৭ গ্রাম।
  11. ধানের দানায় "অ্যামাইলোজের" পরিমাণ শতকরা ২৫.১ ভাগ এবং "প্রোটিনের" পরিমাণ শতকরা ৬.৬ ভাগ।
  12. ভাত দেখতে সাদা, ফুরফুরে হয় এবং খেতে খুব সুস্বাদু। যে কারণে এর বাজারমূল্য বেশি এবং রপ্তানী উপযোগী।

বিশেষ বৈশিষ্ট্য

  • এখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত সকল ধানের মধ্যে বিনা ধান ২৫ সর্বাধিক লম্বা ও সরু হয়।
  • জমিতে পানি বেশী জমে থাকলে এবং বৈরী আবহাওয়ায় প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টির কারণে গাছ সময়িক ভাবে হেলে পড়লেও জমি থেকে পানি সরে গেলে ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে পুনরায় পূর্বের আবস্থায় ফিরে আসে এবং স্বাভাবিক ফলন দিতে সক্ষম।

বিনা ধান ২৫ চাষ পদ্ধতি

বিনা ধান ২৫ জাতটির চাষাবাদ পদ্ধতি অন্যান্য সকল উচ্চ ফলনশীল বোরো জাতের মতই। নিচে বিনা ধান ২৫ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

  1. জমি ও মাটি নির্বাচন: এটেল দো-আঁশ এবং বেলে দো-আঁশ মাটির জমি এই জাতের চাষের উপযোগী। লবণাক্ত এলাকা ছাড়া দেশের প্রায় সকল উঁচু ও মধ্যম উঁচু জমিতে এ জাতটি চাষের উপযোগী।
  2. বীজ তলায় বীজ বপন: অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পৌষ মাসের প্রথম সপ্তাহ (নভেম্বর মাসের ৩য় সপ্তাহ হতে ডিসেম্বরে ৩য় সপ্তাহ) পর্যন্ত বীজতলায় বীজ বপন করার উপযুক্ত সময়।
  3. চারার বয়স: ৩০ থেকে ৪০ দিন বয়সী চারা রোপন করতে হবে।
  4. চারার সংখা: গোছা প্রতি ২ থেকে ৩টি করে দিতে হবে।
  5. রোপণ দূরত্ব: ২০ সেন্টিমিটার x ১৫-২০ সেন্টিমিটার।
  6. সার ব্যবস্থাপনা (বিঘা প্রতি): ইউরিয়া- ২২ থেকে ২৭ কেজি, টিএসপি/ডিএপি- ১৪ থেকে ১৭ কেজি, এমওপি- ১৭ থেকে ২০ কেজি, জিপসাম- ১১ থেকে ১৫ কেজি, জিংক সালফেট (মনোহাইড্রেট)- ১.০ থেকে ১.৩ কেজি।
    • সর্বশেষ জমি চাষের সময় অর্ধেক এমওপি, সম্পূর্ণ টিএসপি/ডিএপি, জিংক সালফেট (মনো) ও জিপসাম সমভাবে জমিতে ছিটিয়ে দিতে হবে এবং ভালভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
    • ইউরিয়া সার সমান তিন কিস্তিতে দিতে হবে প্রথম কিস্তি চারা রোপনের ১০ থেকে ২৫ দিন পর, ২য় কিস্তি চারা রোপনের ২৫ থেকে ৩০ দিন পর এবং শেষ কিস্তি চারা রোপনের ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর উপরি প্রয়োগ করে দিতে হবে।
    • বাকি অর্ধেক এমওপি ইউরিয়ার ২য় কিস্তির সাথে প্রয়োগ করতে হবে।
    • ডিএপি ব্যবহার করলে বিঘা প্রতি ৫ কেজি এবং হেক্টর প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ কেজি ইউরিয়া কম লাগবে।
  7. আগাছা দমন: চারা রোপনের পর থেকে শুরু করে ৪০ দিন পর্যন্ত জমি আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
  8. সেচ ব্যবস্থাপনা: চারা রোপনের পর থেকে জমিতে ৩ থেকে ৫ সেন্টিমিটার পানি রাখতে হবে এবং গাছ বড় হবাব সাথে সাথে পানির মাত্রাও বাড়িয়ে দিতে হবে। মাঝে মাঝে জমির পানি বের করে জমি শুকিয়ে নিতে হবে এবং পরে আবার পানি দিতে হবে। তবে ধান গাছে থোড় আসার সময় জমিতে অবশ্যই ৩ থেকে ৫ সেন্টিমিটার পানি রাখতে হবে। ধান পাকার ১০ থেকে ১২ দিন আগে জমি থেকে সব পানি বের করে দিতে হবে।
  9. রোগ বালাই বা পোকামাকড় দমন: বিনা ধান ২৫ ধানের জাতে রোগ বালাই বা পোকা-মাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের তুলনায় অনেক কম হয়। তবে রোগবালাই বা পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে সাথে সাথে অনুমোদিত দমন ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করতে হবে।
  10. ফসল কাটা: ১৯ চৈত্র থেকে ০৭ বৈশাখ (০২ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল) পর্যন্ত ধান কাটার উপযুক্ত সময়। শীষের ৮০% ধান পরিপক্ক হলে এবং বাকি ২০% ধান অর্ধ-স্বচ্ছ ও অর্ধ-পরিপক্ক হলে দেরী না করে ধান কেটে ফেলা উচিত।

বিশেষ সতর্কতা

  1. মাত্রা অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার করা যাবে না।
  2. টিএসপি ও ডিএপি কোন ভাবেই একসাথে ব্যবহার করা যাবে না। যেকোন একটি ব্যবহার করতে হবে।
  3. সারাক্ষন পানি জমে থাকে এমন জমিতে চাষ করলে ফলন ভালো হবে না।
  4. সর্বোচ্চ ফলন পেতে বা ফলনের পার্থক্য কমাতে বিঘা প্রতি ১০০ গ্রাম সলুবর বোরন ও ৬৬ গ্রাম চিলেটেড জিংক কাইচ থোড় পর্যায়ে স্প্রে করতে হবে।

বিনা ধান ২৫ এর ফলন

বিনা ধান ২৫ এর গড় ফলন ৭.৬ টন প্রতি হেক্টরে এবং সর্বোচ্চ ফলন ৮.৭ টন পার হেক্টর।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url