খালি চোখে আমরা নানা ধরনের উদ্ভিদ ও জীবজন্তু দেখতে পায়। কিন্তু এমন কিছু ক্ষুদ্র অনুজীব রয়েছে যা খালি চোখে দেখা একেবাড়েই অসম্ভব। তবে এদের প্রভাব মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদের উপর রয়েছে। এই সব অণুজীব পৃথিবী সৃষ্টি থেকে থাকলেও বিজ্ঞানীরা এদের সন্ধান পেয়েছেন মাত্র ২০০ বছর আগে।
তবে বর্তমানে আমরা এসব অণুজীবের সাথে খুব ভালো ভাবে পরিচিত। অণুজীবকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও অ্যামিবা)। এইসব ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা অ্যামিবার নাম শুনলেই আমরা ভয়ে ভীত হয়ে পরি। আমারা মনে করি অণুজীব মানেই যক্ষ্মা, এইডস, বার্ড ফ্লু মত রোগ সৃষ্ট কারি ভয়ানক অণুজীব। তবে মজার বিষয় হল অধিকাংশ অণুজীব আমাদের শরীরের উপকার করে থাকে। কিন্তু অনুজীবের কি কি উপকারিতা বা উপকাইতা রয়েছে আপনি কি তা জানেন? না জানলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
অনুজীবের অনেক উপকারিতা থাকা সত্তেও এর বেশ কিছু অপকারিতাও রয়েছে। কিছু ভালো অনুজীব রয়েছে যা আমাদের মানব জীবনের অনেক উপকার করে থাকে। আবার কিছু ক্ষতিকর অনুজীব রয়েছে যেগুলোর কারণে আমাদের শরীরে নানা ধরনের রোগ বাসা বাধে। নিচে অনুজীবের উপকারিতা ও অপকারিতা আলোচনা করা হলো।
অনুজীবের উপকারিতা
অনুজীবের উপকারিতা এক কথায় মুখে বলে শেষ করা যাবে না। আমরা দৈনন্দিন জীবনে অণুজীবের অনেক উপকারিতা একটু লক্ষ্য করলেই দেখতে পারি। কিন্তু অনেকেই জানেন না অনুজীবের কাজ কি? যদি আপনি নাই জানের আনুজীব আসলে কি করে তাহলে কি এই বা লক্ষ্য করবেন তাই না।
সত্যি বলতে অনুজীবের অনেক উপকারিতা রয়েছে তার সব বলতে গেলে দিন শেষ হয়ে যাবে। যে কারণে আমরা অনুজীবের কয়েকটি উপকারিতার কথা তুলে ধরব আজকের এই পোষ্টে।
নিচে অনুজীবের উপকারিতা সমূহ তুলে ধরা হলো-
- অনুজীবের সাহায্যে মারাত্বক সব রোগের বা বিভিন্ন রোগের অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ তৈরি করা হয়। যার মাধ্যমে আমরা রোগ থেকে মুক্তি পায় এবং সুস্থ হয়ে উঠি।
- যেসব অনুজীব মাটির মধ্যে থাকে তারা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে সহায্য করে।
- মাটিতে অবস্থান করা অণুজীব গুলো জৈব ও বর্জ্য পদার্থ গুলিকে পচিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- সেই সাথে বায়ু, মাটি, পানিসহ নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নষ্ট করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। কিছু কিছু অণুজীব সালোকসংশ্লেষণের কাজেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যা জীব জগতের খাদ্য ও অক্সিজেন সরবরাহে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে।
- আমরা প্রতিদিন যে খাবার গ্রহণ করি তা হজম হয়ে আমাদের শরীরে শক্তি উৎপান্ন হয়। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ন করে অণুজীব।
- অণুজীব আমাদের অন্ত্রে অবস্থিত খাদ্য হজম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সাহায্য করে।
- ভিটামিন-বি বিপাকের জন্য অণুজীবের প্রয়োজন হয়।
- ভিটামিন-কে রক্তজমাট বাঁধতে সাহায্য করে। আর এই ভিটামিনকে সংশ্লেষণ করার জন্য অণুজীব সাহায্য করে।
- কিছু এমনও অনুজীব রয়েছে যেগুলো শাক-সবজি ও ফল-মূলে হওয়া পোকার আক্রমন রোধ করতে সাহায্য করে।
- আবার এমন কিছু অনুজীব রয়েছে যেগুলো কৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- এছাড়াও ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে আচার, ভিনেগার, এলকোহলিক বেভারেজ, মদ, সয়া সস, দই, পনির, পাউরুটি ইত্যাদি জাতীয় খাদ্য তৈরিতে অণুজীব ব্যবহার করা হয়।
বিঃদ্রঃ: আপনি জানলে অবাক হবেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অণুজীবের সাহায্যে উৎপন্ন “এসিটোন দিয়ে কর্ডাইট” (এক ধরনের ধোঁয়া বিহীন বারুদ) তৈরি করা হয়। যা যুদ্ধে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
অনুজীবের অপকারিতা
কিছু ভালো অনুজীবের মাধ্যমে মানব সমাজে যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি কিছু ক্ষতিকর অনুজীবের কারণেও বেশ কিছু আপকারিতাও রয়েছে। সেই সব অনুজীব গুলো আমাদের বিভিন্ন ভাবে ক্ষতি করে থাকে, ফলে আমাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
কেননা ভালো অণুজীব গুলো যেমন সব সময় আমাদের উপকার সাধন করে চলে। ঠিক তেমনি ক্ষতিকর অনুজীব গুলো সব সময় সুযোগ খুবে আমাদের ক্ষতি করার জন্য। কিন্তু সবাই যেমন এটা জানেন না অনুজীবের ভালোর দিকটা ঠিক তেমনি অনেকে অনুজীবের খারাপ দিকটাও জানেন না। আনুজীবের ভালো দিকটা না জানলেও সমস্যা নেই কিন্তু খারাপ দিকটা অবশ্যয় জানতে হবে। না হলে আপনিও খারাপ অনুজীবের সিকার হতে পারেন। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক অনুজীবের অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক গুলো।
নিচে অনুজীবের অপকারিতা সমূহ তুলে ধরা হলো-
- কিছু অনুজীব আমাদের শরীরে জটিল রোগ সৃষ্টি করে থাকে (যেমন: যক্ষ্মা, এইডস, বার্ড ফ্লু ইত্যাদি)। যার জন্য মানুষের মৃত্যুও ঘটে।
- এমন কিছু অণুজীব রয়েছে যাদের কারণে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ফসল ভালো হয় না, পড়তে হয় বিপাকে।
- কিছু অণুজীবের আক্রমণের ফলে গাছ-পালা ও ফসল নষ্ট হয়ে যায়।
- কিছু অনুজীব পানিকে দূষিত বা নষ্ট করতে সাহায্য করে। যে পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
- কিছু এমনও অনুজীব রয়েছে যেগুলো শুধু পানিই নষ্ট করে না বরং বিভিন্ন ধরনের পানি বাহিত রোগ ছড়াতে সাহায্য করে থাকে।
- অণুজীবের আক্রমণ ফল-মূল ও শাক-সবজি নষ্ট হয়ে যায়।
- আবার শরীরের কোন অংশে কেটে গেলে অনুজীবের কারনে সেখানে পচন ধরতে শুরু করে।
- কিছু অনুজীবের কারণে প্রাণী বা গবাদি পশু বিভিন্ন রোগে আক্রমণ হয়ে থাকে।
যে কোন জিনিসের ভালো এবং খারাপ দুটি দিকই রয়েছে। যে জিনিসের খারাপ দিক নেয়, সে জিনিসের ভালো দিকো থাকতে পারে না। এটি শুধু ক্ষতিকর জীবানু বা অনুজীরের জন্য নয়, এটি মানব জীবনের সব ক্ষেত্র প্রযোজ্য।