অনেক সময় বিভিন্ন কারণে মাসিকের রক্ত কালো হতে দেখা যায়। যেটা কম বেশি সবার মনে ভয় সৃষ্টি করে। সকল মেয়েদের এই বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত কারণ মাসিকের রক্তের রং দেখে বুঝতে পারবেন আপনার শরীরে কোনো সমস্যা আছে কিনা। আজকে আমরা এই পোষ্টে মাসিকের রক্তের রং কালো হওয়ার কারণ ও করনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
মাসিকের রক্ত কালো হয় কেন
মাসিকের রক্ত কালো হওয়ার কারণ হলো মাসিকের রক্তের সাথে সাদা স্রাব কোনো কারণে মিশ্রিত হয়ে গেলে তখন রক্তের রং কালচে বা কালো হয়।
এখন অনেকের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে, মাসিকের সময় কালো রক্ত যাওয়া সস্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক?
উত্তর: মাসিকের রক্ত কালো হওয়া স্বাভাবিকও হতে পারে আবার অস্বাভাবিকও হতে পারে। তাহলে চলুন যেনে নেওয়া যাক মাসিকের রক্ত কালো হওয়ার স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক কারণ সমূহ।
স্বাভাবিক কালো রক্ত
মাসিকের সময় কালো রক্ত যাওয়ার স্বাভাবিক কারণ গুলো নিচে তুলে ধরা হলো-
- মাসিকের শুরু ও শেষের দিকে অনেকের কালো রক্ত যায়। কারণ মাসিক শুরু হওয়ার সময় এবং শেষের দিকে মাসিকের রক্তের বেগ কম থাকে, তখন জরায়ু থেকে রক্ত বের হতে দেরি হয়। ফলে রক্ত কালো হয়ে যায়।
- মাসিকের সময় অনেক সময় ধরে শুয়ে থাকলে মাসিকের রক্ত কালো হয়ে যায়।
- যৌনিতে কোন কিছু আটকে থাকলে (যেমন; কনডন, সারভিক্যাল ক্যাপ, কন্টাসেপটিক ইত্যাদি) মাসিকের রক্ত কালো হতে পারে।
- বাচ্চা হওয়ার পর ৪ – ৬ সপ্তাহ অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরন হয় ফলে রক্ত জমাট বেধে যায় ফলে রক্ত কালচে বা কালো হয়ে যায়। আর্থাৎ কোনো কারণে যদি মাসিকের রক্ত জমাট বেধে যায় তাহলে রক্ত কালো হয়ে যায়।
অস্বাভাবিক কালো রক্ত
মাসিকের রক্ত কালো হওয়ার অস্বাভাবিক কারণ গুলো নিচে তুলে ধরা হলো-
- গর্ভাবস্থায় যদি কালো রক্ত দেখা যায় তাহলে সেটি ভয়ের কারণ (হতে পাড়ে এটি গর্ভপাতের লক্ষন)।
- জরায়ুতে কোন ব্লোক থাকলে মাসিকের রক্ত কালো হতে পারে।
- জরায়ুতে কোন ইনফেকশন বা টিউমার থাকলেও মাসিকের রক্ত কালো হতে পারে।
- জরায়ুতে ক্যানসার থাকলেও মাসিকের রক্ত কালো হতে পারে।
মাসিকের রক্ত কালো হলে করনীয়
মাসিকের রক্ত কালো হলে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেয়। তবে আবশ্যয় খেয়াল রাখতে হবে এর সাথে সাথে আপনার অনান্য আর কোন সমস্যা আছে কিনা যেমন;
- মাসিক যদি অনিয়মিত হয়।
- মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরন বা বড় চাকা চাকা রক্ত যাওয়া বা প্রতি ২ঘন্টা পর পর প্যাট চেজ্ঞ করতে হয়।
- মাসিকের সময় যদি যোনিতে ব্যাথা, চুলকানি বা ফোলাভাব থাকে।
- দূরগন্ধ যুক্ত স্রাব হয়।
- শরীরে জর বা পেটে প্রচুর ব্যাথা হয়।
- প্রাসাব করতে সমস্যা হয়।
উপরের উল্লেখিত সমস্যা গুলো দেখা দিলে অবশ্যয় একজন গাইনোকোলজি ডাক্তারের সরনাপর্ন হতে হবে। উপরের সমস্যা গুলো না থাকলে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেয়।
মাসিকের রক্ত কালো হলে কি খেতে হবে
মাসিকের রক্ত কালো হওয়ার পাশাপাশি আর কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে এটি নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেয় এবং এর জন্য আলাদা করে কোন খাবার বা মেডিসিন গ্রহন করতেও হবে না। তবে মাসিকের সময় গুলোতে নিচের উল্লেখিত খাবার গুলো গ্রহন করা খুবি জরুলি। কারণ নিচের উল্লেখিত খাবার গুলো মাসিক চলাকালীন শরীরের ক্ষয় পূরণ করতে সহায্য করে।
- পিরিয়ডের সময় প্রচুর পানি পান করতে হবে (তবে, কোনো প্রকার পানীয় বা ড্রিংকস গ্রহন করা থেকে বিরত থাকুন)।
- ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম যুক্ত খাবার গ্রহন করতে হবে (মিষ্টি কুমড়ার বিচি, কলা, হোল গ্রেইন খাবার, মিষ্টি আলু, অ্যাভোকাডো, বিনস ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়ামের অন্যতম উৎস)।
- ভিটামিন বি৬ ও ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন করুন (ব্রকলি, লেবু, টমেটো, কমলা, ডিম, কর্ণ, আখরোট, চিয়া বীজ ইত্যাদি খাবার ভিটামিন বি৬ ও বি১২ সমৃদ্ধ খাবার)।
- আয়রন সমৃদ্ধ খাবার প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে (মাছ, ডিম, মাংস, কলিজা, পুঁইশাক, কচুশাক, ডাঁটাশাক, ছোলাশাক, তরমুজ, ধনেপাতা, কালো জাম, পাকা তেঁতুল, খেজুর, আমড়া ইত্যাদি খাবারে প্রচুর আয়রন পাওয়া যায়)।
- ভিটামিন-সি যুক্ত ফল বেশি বেশি খান। কারণ শরীরে আয়রনের ঠিকঠাক শোষণ ও যথাযথ কার্যকারিতার জন্য ভিটামিন-সি’র প্রয়োজন। পেয়ারা, আমলকী, আমড়া, মাল্টা, লেবু, জলপাই, পাকা টমেটো, জাম্বুরা, কামরাঙা, আনারস, পাকা পেঁপে ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
- এছাড়াও ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।