ঘুম নিয়ে মাঝে মধ্যে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ঘুম না আসার অনেক কারণ থাকতে পারে, তবে এর প্রধান কারণ হলো টেনশন। কারো মাথায় যদি এক বোঝা টেনশন থাকে, তাহলে তার পক্ষে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া খুবই কষ্টকর। কিন্তু ঠিকমতো ঘুম না হলে শরীরে নানান রোগ বাসা বাধতে শুরু করবে। এই আবস্থায় কি করলে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুম আসবে বা ঘুমাতে পারবেন তা অনেকেরই অজানা। আপনিও কি এই সমস্যার সমাধান চান তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য আশা করি এই পোস্ট থেকে আপনি আপনার সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।
রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপায়:
রাতে ঘুম না আসার জন্য অনেকেই ঘুমের ঔষধ খেয়ে থাকেন, যা স্বাস্থের জন্য খুবি খারাপ। আবার নিয়মিত ঘুমের ঔষধ গ্রহন করার ফলে, দেখা যায় কিছু দিন পর আর ঐই ঔষধে কাজ করছে না। কিন্তু আপনি যদি চান তাহলে ঔষধ না খেয়েও তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরতে পারবেন, তার জন্য থাকতে হবে ইচ্ছে শক্তি। চলুন যেনে নেয়া যাক রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপায়।
- বিছানায় সোজা হয়ে শোবেন তারপর নাক দিয়ে ১০ সেকেন্ড সময় ধরে ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস গ্রহন করবেন (সময় কাউন্ট করার জন্য মনে মনে ১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮,৯,১০ গণনা করতে পারেন)। তার পর নিঃশ্বাসটাকে ১০ সেকেন্ড সময় ধরে পেটের মধ্যে আটকে রাখুন (পেট ফুলিয়ে রাখতে হবে)। এর পর মুখ দিয়ে ১০ সেকেন্ড সময় ধরে ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হবে। এভাবে কয়েকবার করুন ঘুম চলে আসবে এবং এর সাথে সাথে আপনার ফুসফুসিকেও ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
- প্রথমে আপনার চোখের ভ্রু ১০ সেকেন্ডের জন্য উপরের দিকে তুলে রাখুন। এভাবে দশ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন, তার পর ছেরে দেন। এরপরে দুই গাল চওড়া করে হাসার ভান করুন, এভাবে ১০ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন। তার পর মুখ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনুন। তারপর শরীরের বিভিন্ন অংশ শিথিল করুন। এভাবে কয়েকবার করুন ঘুম চলে আসবে।
- আপনি যে ধর্মের এই হোন না কোনো আপনি আপনার god কে এক মনে সরন করুন এবং পজেটিব কিছু কল্পনা করুন ঘুম চলে আসবে, কখন ঘুমিয়ে পরবেন তা আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন না।
এছাড়াও নিয়মিত ভালো ঘুমের জন্য নিচের কাজ গুলো করতে পারেন-
- ঘুমানোর সময় রুম আরামদায়ক ও অন্ধকার রাখার চেষ্টা করুন।
- ঘুমানো বা বিশ্রাম নেওয়া ছাড়া বিছানায় অন্য আর কোন কাজ করবেন না।
- ঘুমাতে যাওয়ার আগে টিভি বা মোবাইল দেখা থেকে বিরত থাকুন।
- দিনে ঘুমানোর অভ্যাস থাকলে তা বাদ দেওয়ার চেষ্টা করুন।
- রাতে ঘুমানোর ১ ঘন্টা আগে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করে নিতে পারেন।
- প্রতিদিন সকালে কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন।
- মানসিক প্রশান্তির জন্য মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম করতে পারেন।
- ঘুমানোর আগে যেকোনো ছোটোখাটো কাজ বা বই পড়তে পারেন।
- ঘুমাতে যাবার কমপক্ষে ছয় ঘন্টা আগে থেকে চা, কফি বা ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকুন।
- রাতে ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় খাওয়ার পরিবর্তে গরম দুধ পান করুন।
- ঘুমানোর অন্তত দুই ঘন্টা আগে রাতের খাবার গ্রহণ করুন।
- প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটি সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
রাতে তাড়াতাড়ি ঘুম না আসার কারণ:
রাতে ঘুম না আসা বা ঘুমিয়ে গেলেও বারবার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়, ফলে ঠিকমত ঘুম হয় না। এই ঘুম না আসা বা ঘুম ভেঙ্গে যাওয়াকে মেডিকেল ভাষায় ইনসমনিয়া বা অনিদ্রা রোগ বলা হয়। তবে রাতে ঘুম না হওয়ার অনেক গুলো কারণ থাকতে পারে। নিচে সেইসব কারণ গুলো তুলে ধরা হলো-
- টেনশন বা চিন্তা করা।
- অস্থকর খাবার গ্রহণ করা।
- নিয়মিত সূর্যের আলো বা রোদ থেকে দূরে থাকা।
- ঘুমাতে যাওয়ার আগে কফি, চা বা নিকোটিন জাতীয় কিছু গ্রহণ করা।
- ঘুমানোর টাইম মেইনটেন না করা (প্রতিদিন এক টাইমে ঘুমাতে না যাওয়া)।
- নিয়মিত ব্যায়াম না করা (বিশেষজ্ঞদের মতে, ভালো ঘুমের জন্য দিনের শুরুতে কমপক্ষ্যে ১৫ মিনিট হলেও হালকা ব্যয়াম করা উচিৎ)।
- শোয়ার ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ করতে না পারা।
তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপকারিতা:
একজন মানুষকে স্বাস্থ্যবান থাকতে হলে, প্রথমেই তাকে নিয়মিত সঠিক মাত্রায় ঘুমাতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার এবং ব্যায়ামকে আমরা যেমন সুস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি, ঠিক তেমনি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর। নিচে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপকারিতা উল্লেখ করা হলো-
- ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
- বিষন্নতা ও হতাশা কমাতে সাহায্য করে।
- চেহারায় লাবন্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
- স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- মস্তিস্কের কার্যকারিতা ও কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- কিডনি রোগ, হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
- রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমালে মেটাবলিজম ভালো থাকে। ফলে ক্যালোরিও দ্রুত বার্ন হতে শুরু করে এবং শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
- ভাল ঘুম হলে মেজাজ ভালো থাকে, ফলে আপনি অনেক বেশি ধৈর্যশীল, ইতিবাচক ও সুন্দর মনের একজন মানুষ হয়ে উঠবেন।
Advertisement