রামের কয়েকটি গুণাবলী

রামের কয়েকটি গুণাবলী

রাম হিন্দু ধর্মের দেবতা বিষ্ণুর সপ্তম অবতার। রাম সূর্যবংশীয় রাজা দশরথ ও কৌশল্যা পুত্র হয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি হিন্দুধর্মের জনপ্রিয় একজন দেবতা। রামনবমী তিথিতে ভগবান রামচন্দ্রের জন্ম-উৎসব পালন করা হয়। রামকে "সর্বময়মর্যাদা পুরুষোত্তম" বলা হয় (অর্থাৎ "সর্বশ্রেষ্ঠ সুপুরুষ" বা "গুণাধীশ" বা "আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিপতি")।

রামের ১৫টি গুণাবলী নিচে উল্লেখ করা হলো-

  1. শ্রী রাম চন্দ একজন উত্তম চরিত্রের ও বৈশিষ্ট্যের মানব ছিলেন।
  2. রাম চন্দ একজন প্রকৃত বীর পুরুষ ছিলেন।
  3. তিনি সকলকে দান করতেন।
  4. অসহায় মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা যাপন করতেন।
  5. তিনি নির্ধারিত আচার-অনুষ্ঠানের সূক্ষ্ম অনুসারী ছিলেন।
  6. সকলের প্রতি ন্যায়পরায়ণ ছিলেন।
  7. দরিদ্র অসহায় মানুষের বিপদে নিজেকে বিলিয়ে দিতেন।
  8. তিনি কখনো মিথ্যা কথা বলতেন না এবং সদা সত্য কথা বলতেন।
  9. তিনি একবার যে সংকল্প করতেন তা কখনো ভূলে যেতেন না।
  10. পিতার সংকল্প পূরণ করতে তিনি ১৪ বছর বনবাস গ্রহন করেছিলেন।
  11. শ্রী রাম চন্দ কোনো অবস্থাতেই ক্রোধান্বিত হতেন না।
  12. তার মুখে সর্বদা হাসি লেগেই থাকত।
  13. মানুষের দুংখে কষ্টে তার মন আবেগ প্রবন হয়ে উঠত।
  14. কারো প্রতি ককনো ঈর্ষান্বিত হতেন না।
  15. তিনি নৈতিক আচরণের সাথে একজন মহান রাজা ছিলেন।

রাবণ কেন সীতাকে হরণ করেছিল?

রাবণ তার বোন শূর্পণখার জন্য সীতাকে হরণ করেছিলেন।

রাম, লক্ষণ ও সীতা যখন বনবাসে জীবন যাপন করছিলেন, তখন রাবণের বোন শূর্পণখা রামকে দেখে তার প্রেমে পড়ে যায়। তখন শূর্পণখা রামকে তার প্রেম নিবেদন করে তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু রাম তার প্রস্তাব প্রত্তাখান করেণ এবং তাকে জানান যে সে বিবাহিত। তখন শূর্পণখা রাগানিত হয়ে রামকে আধাত করে এবং সীতাকে বাজে কথা বলে। লক্ষণ এই সব সহ্য করতে না পেরে তার তরবারি দিয়ে শূর্পণখার নাক কেটে দেয়। আপমানিত হয়ে শূর্পণখা রাবণের কাছে যায় এবং তাকে সব কথা খুলে বলে সব শুনে রাবণ রাগে জ্বলে উঠে এবং সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি সিতাকে হরণ করবেন।

রামকে বনে যেতে হয়েছিল কেন?

পিতার সম্মান রক্ষার্থে রাম নিজ ইচ্ছায় সিংহাসনের দাবি ত্যাগ করে ১৪ বছরের জন্য বনে গিয়েছিলেন।

একবার দণ্ডকারন্যে অসুর ও দেবতাদের মধ্যে যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে অযোধ্যার রাজা দশরথ "দেবরাজ ইন্দ্রের" পক্ষ নিয়ে অসুরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। কথিত আছে, কৈকেয়ীর একটি হাত বরপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তিনি অসম্ভব শক্তিশালী নারী ছিলেন। যে কারণে রাজা দশরথ তাকে সেই যুদ্ধে তার সঙ্গী করেছিলেন। সেই সময় অসুরের সাথে প্রচন্ড যুদ্ধে রাজা দশরথ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। কৈকেয়ী সেই অবস্থায় রাজাকে রথে তুলে নেয় এবং দ্রুত রথ চালিয়ে রাজাকে সুরক্ষিত স্থানে নিয়ে যান। পরবর্তীতে সেবা শুশ্রষা করে রাজাকে সুস্থ করে তোলেন। তখন রাজা খুশি হয়ে কৈকেয়ীকে দু'টি বর দিতে চান। কিন্তু কৈকেয়ী তখন সে বর না নিয়ে বলেন আমি এই বর দুটি পরে সময় মত চেয়ে নেব। তারপর থেকে অনেক বছর পর, যখন রাজা দশরথ রামকে রাজা অভিষিক্ত করতে চান। ঠিক তখনি কৈকেয়ীর দাসী মন্থরার কুপরামর্শে সেই বর দুটি চেয়ে বসেন। প্রথম বরে রাম ১৪ বছরের জন্য বনবাসে যাবে এবং দ্বিতীয় বরে তার ছেলে ভরত অযোধ্যার রাজ সিংহাসনে বসবে।

যদিও রাজা দশরথ রামকে এই বিষয়ে কিছু বলেন নি, তিনি পিতার ভাবাক্রান্ত মনের কথা বুঝতে পারেন এবং তার কাছে কারণ জানতে চায়। কিন্তু রাজা তাকে বনে যাবার কথা কিছুতেই বলতে পারছিলেন না। তখন তার সৎ মা কৈকেয়ী রামকে তার মনের কথা জানান এবং তার পিতা কথা দিয়ে কথা রাখতে চাচ্ছেন না বলে তাকে উপহাস করেন। তখন রাম তার পিতার সংকল্প পূরন করার জন্য বনবাসে যান। যদিও রাজা দশরথ তাকে না যাওয়ার জন্য বাধা দিয়েছিলেন তবুও তিনি পিছু পা হননি।

রাম এবং রাবণকে নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন: রামের মাতা-পিতার নাম কি?
উত্তর: রামের মাতার নাম কৌশল্যা এবং পিতার নাম দশরথ। রামের আরো দুজন সৎ মা ছিলেন তাদের নাম হল কৈকেয়ী ও সুমিত্রা।

প্রশ্ন: রামের কয় ভাই ছিল?
উত্তর: রামের লক্ষ্মণ, ভরত ও শত্রুঘ্ন নামে তিন ভাই ছিল।

প্রশ্ন: রামের স্ত্রীর নাম কি?
উত্তর: রামের স্ত্রীর নাম সীতা (সত্যবতী)।

প্রশ্ন: রামের কয়জন সন্তান ছিল?
উত্তর: রামের লব ও কুশ নামে দুই জন পুত্র সন্তান ছিল।

প্রশ্ন: রাম কোন বংশীয় ছিল?
উত্তর: রাম রঘুবংশ - সূর্যবংশীয় ছিলেন।

প্রশ্ন: রাবনের বোনের নাম কি?
উত্তর: রাবণের দুই বোন ছিল। তাদের নাম হল কুম্ভিনী ও শূর্পণখা।

প্রশ্ন: রাবনের কয় ভাই ছিল?
উত্তর: রাবণ বাদে তার আরো ছয় জন ভাই ছিল। তাদের নাম হল কুবের, কুম্ভকর্ণ, বিভীষণ, খরা, দুষণ ও অহিরাবন।

প্রশ্ন: রাবনের পুত্রের নাম কি?
উত্তর: রাবনের ৭ জন পুত্র ছিল। তাদের নাম হল মেঘনাদ, অতিকায়, অক্ষয়কুমার, নরন্তক, দেবন্তক, ত্ৰিশিরা ও প্রহস্ত।

প্রশ্ন: রাবণ কি রাক্ষস?
উত্তর: হ্যা।

প্রশ্ন: রাবণের দুই স্ত্রীর নাম কি?
উত্তর: রাবণের দুই স্ত্রীর নাম হল মন্দোদরী ও ধন্যমালিনী।

প্রশ্ন: রামের জন্ম কত সালে?
উত্তর: ৫১১৪ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দের ১০ জানুয়ারি অযোধ্যা, কোশলে (বর্তমান উত্তরপ্রদেশ, ভারত) রাম জন্ম গ্রহণ করেন।

প্রশ্ন: রাম রাবণের যুদ্ধ কতদিন হয়েছিল?
উত্তর: রাম রাবণের যুদ্ধ ১০ দিন হয়েছিল।

প্রশ্ন: রাবণের কয়টি মাথা ছিল এবং সেগুলোর নাম কি?
উত্তর: পুরাণ মতে রাবণের দশটি মাথা ছিল। সেগুলো হলো- ভয়, কাম, ঘৃণা, মোহ, লোভ, হিংসা, ক্রোধ, অনুতাপ ও অহঙ্কার।

প্রশ্ন: রামায়ণের কয়টি খন্ডে বিভক্ত?
উত্তর: রামায়ণ ৭টি খণ্ডে বিভক্ত।

প্রশ্ন: রামায়ণ ৭টি খণ্ডের নাম কী?
উত্তর: রামায়ণ ৭টি খণ্ডের নাম হল আদিকাণ্ড, অযোধ্যাকাণ্ড, অরণ্যকাণ্ড, কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড, সুন্দরকাণ্ড, লঙ্কাকাণ্ড ও উত্তরকাণ্ড।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url