সম্পতি অনেক কৃষক বিজলী প্লাস মরিচ চাষ করে অনেক লাভবান হয়েছেন। যে কারণে এই জাতের মরিচ চাষ করার প্রতি অনেক কৃষক ঝুঁকে পড়ছেন। বাম্পার ফলন ও গুণগত মান ভালো হওয়ায় তাদের আগ্রহ দ্বিগুণ বাড়ছে। বিজলী প্লাস মরিচ প্রতি একর জমিতে গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ টন প্রযান্ত ফলন পাওয়া যায়।
বিজলী প্লাস মরিচ যেভাবে চাষ করবেন
বাংলাদেশের সব অঞ্চল হাইব্রিড বিজলী প্লাস মরিচ চাষের জন্য উপযোগী। দোআশ, পলি দোআশ মাটি হাইব্রিড মরিচ চাষ করার জন্য বেশী উপযোগী। মরিচ চাষ করার জন্য মাটির কাঙ্খিত মান হতে হবে “পি এইচ ৫.৫ থেকে ৬.৭ এবং তাপমাত্রা ২৫° সেঃ থেকে ৩০° সেঃ প্রযান্ত। নিচে বিজলী প্লাস মরিচ চাষ পদ্ধতি তুলে ধরা হলো-
- বীজতলায় বীজ বপন: ;বিজলী প্লাস মরিচ সারা বছর চাষ করা যায়। তবে জুন থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত মরিচ বপণ করার উপযুক্ত সময়।
- চারা রোপণ: ;২০ – ২৫ দিন বয়সের চারা বীজতলা থেকে তুলে জমিতে রোপন করতে হবে। চারা রোপন করার আগে জমি ভালো ভাবে তৈরী করে নিতে হবে।
- দূরত্ব: ;চারা থেকে চারার দুরত্ব হবে ২২ – ২৪ ইঞ্চি এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব ;হবে ২০ – ২২ ইঞ্চি।
- সার প্রয়োগ: প্রতি শতাংশে সার প্রয়োগের হার দেওয়া হলো-
- জমি তৈরী করার সময়: গোবর- ৫০ কেজি, জিপসাম- ২০০ গ্রাম ও সালফার- ৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।
- শেষ চাষের সময়: ইউরিয়া- ২০০ গ্রাম, টিএসপি- ৮০০ গ্রাম, এমওপি- ৪০০ গ্রাম, জিংক- ৫০ গ্রাম, বোরণ- ৫০ গ্রাম ও দানাদার কীটনাশক- ৭৫ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।
- প্রথম উপরি প্রয়োগ: ইউরিয়া- ২০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।
- ২য় উপরি প্রয়োগ: ইউরিয়া- ২০০ গ্রাম, ডিএপি- ২০০ গ্রাম, জিপসাম- ২০০ গ্রাম ও সালফার- ৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।
- ৩য় উপরি প্রয়োগ: ইউরিয়া- ২০০ গ্রাম ও ডিএপি- ২০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।
- ফলন সংগ্রহ: চারা রোপন করার পর ৪০ – ৪৫ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করতে পারবেন। প্রথম ফসর সংগ্রহ করার পর থেকে প্রতি ১০ – ১৫ দিন পরপর মরিচ তুলতে পারবেন।
- পোকামাকড় ও বলাই দমন: মরিচের চারা গজানোর পর থেকে ফসল তোলার ২৫ দিন আগে পর্যন্ত নিয়মিত কার্বাডিজেম/ম্যানকোজেব ও কপার অক্সিক্লোরাইড জাতীয় ছত্রাক নাশক স্প্রে করে দিতে হবে।
- ঝিমিয়ে পড়া রোগ ও পাতা কোকড়ানো রোগ হয় না বললেই চলে।
বিজলী প্লাস মরিচ বীজের দাম
বাজারে প্রতি ৫ গ্রাম হাইব্রিড বিজলী প্লাস মরিচ প্যাকেটের দাম ৪৩৫ – ৬০০ টাকা।
বীজ থেকে চারা তৈরি খুব একটা কঠিন কাজ নয়। তবে আপনি যদি নতুন চাষী হয়ে থাকেন বা মনে করে থাকেন বীজ কিনে মাটিতে ছিটিয়ে দিলেই চারা হয়ে যাবে। তাহলে আপনার জন্য বীজ না কিনাই ভালো হবে, আপনি নার্সারি থেকে চারা কিনে রোপন করুন। কারণ একটি বীজ থেকে চারা হবার জন্য ভালো মানের বীজ সংগ্রহ করার পাশাপাশি মাটির আদ্রতা, আবহাওয়া, পরিবেশ সহ এমন অনেক বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে।
বিজলী প্লাস মরিচের বৈশিষ্ট্য:
বাজারে প্রচলিত যত হাইব্রিড মরিচের জাত পাওয়া যায় সেসব জাত থেকে বিজলী প্লাস মরিচের ফলন ৩০ গুন বেশি হয়। নিচে বিজলী প্লাস মরিচের বৈশিষ্ট্য সমূহ তুলে ধরা হলো-
- মরিচের চামড়া পুরু ও মসৃণ।
- মরিচ খুব ঝাল এবং সম আকৃতির হয়।
- বিজলী প্লাস মরিচ সারা বছর চাষ করা যায়।
- এই হাইব্রিড মরিচের জাতটি একটি আগাম জাত।
- প্রতি গাছ থেকে ২.৫ থেকে ২.৭৫ কেজি ফলন পাওয়া যায়।
- গাছ যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন একই ভাবে ফলন দিয়ে থাকে।
- চারা লাগানের ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ফলন তুলতে পারা যায়।
- কাঁচা মরিচ হাল্কা সবুজ বর্ণের হয় এবং পাকা মরিচ লাল বর্ণের হয়।
- গাছে থোকায় থোকায় মরিচ ধরে, যে কারণে খুব সহজেই মরিচ তোলা যায়
- মরিচ গাছ ছোট থেকে ফল দেওয়া শুরু করে এবং এক সাথে অনেক ফল ধরে।
- মরিচ গুলো সোজা ও সম আকৃতির হয় এবং প্রতিটি মরিচ প্রায় ৮/১০ সে.মি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- ঝিমিয়ে পড়া রোগ (ব্যাক্টেরিয়াল উইল্ট) ও পাতা কোকড়ানো রোগ (লিফ কার্ল) হয় না বললেই চলে।