বকুল ফল খাওয়ার উপকারিতা

বকুল ফল

বকুল হচ্ছে "Minasops" প্রজাতির একটি ফুল গাছ। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর তীরবর্তী এলাকার বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ইন্দো, চীন, বার্মা, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ এলাকা জুড়ে বকুল গাছ দেখতে পাওয়া যায়। তবে, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, মালয়েশিয়া, নিউ ক্যালিডোনিয়া (ফ্রান্স), উত্তর অস্ট্রেলিয়া ও ভানুয়াতুয়াতে বকুল গাছ চাষ করা হয়।

বকুল ফুল গাছ মাঝারি আকৃতির হয়ে থাকে। বকুল ফুল গুলো দেখতে আনেকটা ছোট ছোট তারার মতো। ফুলের মিষ্টি সুবাস সবার মন কেড়ে নেয়। ফুলের সুবাস ফুল শুকিয়ে যাবার পরেও অনেক দিন পর্যন্ত থাকে। এর ফলগুলোও খুব ছোট ছোট হয়। ফলের আকার বড় জোড় ১ সে.মি. প্রযান্ত হয়ে থাকে।

বকুল গাছের পাতা, ফুল, কাচা ফল, পাকা ফল, গাছের কাণ্ড, ছাল, কাঠ সব কিছুই কাজে লাগে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাবে এর ব্যবহার করা হয়। তবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে বকুল ফুলের জন্যেই পরিচিত। বকুলের অন্যান্য ব্যবহার এই দেশে তেমন নেই।

বকুল ফলের উপকারিতা

বকুল ফল খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। বকুল ফুল গাছের পাতা, কাণ্ড, ফুল ও ফল বিভিন্ন অসুখ নিরাময়ে আয়ুর্বেদিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নিচে বকুল ফল খাওয়ার উপকারিতা তুলে ধরা হলো-

  1. আমাশয় হলে প্রতিদিন একটি করে পাকা বকুল ফলের শাঁস খান আমাশয় ভাল হয়ে যাবে।
  2. অল্প বয়সে যাদের দাঁত নড়ে বা দাঁতের গোড়া নরম মনে হয়, তারা প্রতিদিন ২-৩ টি করে কাঁচা বকুল ফল কিছু দিন চিবিয়ে খেলে দাঁতের গোঁড়া শক্ত হয়ে যাবে। এছাড়াও শুকনো বকুল ফলের গুড়া দিয়ে দাঁত মাজলে উপকার পাবেন।
  3. ছোট শিশুর পায়খানা কষা হলে বা পায়খানা হচ্ছে না শুধু কান্নাকাটি করছে। এমন অবস্থায় বকুল ফলের বীজ থেকে শাঁস বের করে শুধু বীজের খোসা মিহি গুঁড়া করে, পুরোনো ঘিয়ের সাথে মিশিয়ে পানের বোঁটায় লাগিয়ে শিশুর মলদ্বারে দিন ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে পায়খানা হয়ে যাবে।
  4. অপুষ্টিজনিত শুক্রতারল্যের সমস্যায় প্রতিদিন খাওয়ার পর ১ বার ১ চা চামচ করে বকুলের সিরাপ খেলে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে শুক্রতারল্য কেটে যাবে।
    • পাকা বকুল ফল আধা কেজি নিয়ে তার বীজ ও খোসা ফেলে দিয়ে ভালে করে চটকে নিতে হবে, তারপর তার মধ্যে ১ পোয়া মধু মিশিয়ে ৩ দিনের জন্য ঢেকে রেখে দিতে হবে। তারপর একটি সুতি পাতলা কাপড়ে নিয়ে তা ঝুলিয়ে রেখে দিতে হবে। এর থেকে ১ ফোঁটা ১ ফোঁটা করে রস পড়বে তা একটি পাত্রে সংগ্রহ করে রাখুন। এটাকেই বকুলের সিরাপ বলা হয়।
  5. শ্বেতী রোগীর ক্ষেত্রে "ঘন ক্বাথ" এর সাথে বকুল বীজ চন্দনের মতো ঘষে নিয়ে আক্রান্ত দাগে আস্তে আস্তে ঘসতে হবে। এভাবে আস্তে আস্তে ঘসতে থাকলে আস্তে আস্তে দাগ বিলিন হয়ে যাবে (তবে মনে রাখবেন, যাদের শ্বেতী দুধের মত ধবধবে সাদা তাদের চিকিৎসা দুঃসাধ্য। যাদের শ্বেতী অল্প সাদা তাদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কাজ করবে।)।
এছাড়াও বকুল গাছের অন্যান্য অংশের উপকারিতা:
  1. বকুল পাতার রস চোখের জন্য খুব উপকারী।
  2. মাথা ব্যাথায় বকুলের পাতা সিদ্ধ করে মাথায় দিন উপশম পাবেন।
  3. শুকনা বকুল ফুলের গুঁড়া তেলের সাথে মাথায় ব্যবহার করলে মাথা ঠান্ডা রাখে।
  4. শুকনা বকুল ফুলের গুঁড়া মেধা শক্তি বাড়াতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
  5. হৃদযন্ত্রের অসুখ, লিউকোরিয়া, মেনোরেজিয়া নিরাময়ে বকুল ফুলের রস ব্যবহার করা হয়।
  6. মাথা ব্যথা কমাতে শুকনো বকুল ফুলের গুঁড়া নাক দিয়ে নিঃশ্বাসের সাথে টেনে নিন উপকার পাবেন।
  7. যাদের প্রস্রাবে সমস্যা আছে। তারা ১০ গ্রাম বকুলের ছাল ছেচে ১ পোয়া পানিতে সিদ্ধ করে অর্ধেক করে ভাল করে ছেঁকে দিনে ১ চামচ ৩ বার পান করুন। এভাবে ১৫ থেকে ২০ দিন পান করুন উপকার পাবেন।

বকুল ফুলের বীজ:

বকুল ফুল গাছে ফল আসে বর্ষাকালে। প্রতিটি ফলে একটি করে ডিম্বাকৃতির বাদামী বীজ থাকে। তবে কখনও কখনও দুটি বীজও দেখতে পাওয়া যায়। বকুল ফলের বীজ থেকে অনুদ্বায়ী তেল পাওয়া যায়।

বকুল ফল কি খাওয়া যায় ?

বকুল ফল খাওয়া যায় এবং এটি স্বাস্থের জন্য খুবি উপকারি। বকুল গাছের ফল ছোট ছোট কুলের মত ডিম্বাকৃতির হয়ে থাকে। ফলগুলো কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকে এবং পাঁকলে লাল বর্ণ ধারণ করে। বকুল ফলের স্বাদ কষ যুক্ত হালকা মিষ্টি।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url