ভাইরাসের উপকারিতা ও অপকারিতা

ভাইরাসের উপকারিতা ও অপকারিতা

“ভাইরাস” শব্দটি হলো ল্যাটিন ভাষা থেকে গৃহীত একটি শব্দ। ভাইরাসের শব্দের অর্থ হল বিষ। ভাইরাস বলতে এক প্রকার অতি ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক অকোষীয় রোগ সৃষ্টিকারী বস্তুকে বোঝায়। আণুবীক্ষণিক প্রাণী হলো এমন প্রাণী যা কেবল মাত্র মাইক্রোস্কোপে পর্যবেক্ষণ করা যায়।

কিছু ভাইরাস আছে যা মানুষকে সংক্রামিত করে এবং তা মানুষের শরীরে গুরুতর বা প্রাণঘাতী রোগ সৃষ্টি করে থাকে। তবে অন্যান্য কিছু ভাইরাস রয়েছে যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবি উপকারী। সেসব ভাইরাস ক্যান্সার নিরাময়, জিনগত ব্যাধি সংশোধন কিংবা প্যাথোজেনিক ভাইরাল সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। নিচে ভাইরাসের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো।

ভাইরাসের উপকারিতা

ভাইরাসের নাম শুনলেই আমরা মনে করি এটি একটি ক্ষতিকারক বস্তু। কিন্তু এমন অনেক ভাইরাস রয়েছে যা আমাদের জন্য সত্যিই অনেক উপকারি। নিচে ভাইরাসের উপকারিতা তুলে ধরা হলো-

  1. “জন্ডিস” রোগের টিকা ভাইরাস দিয়ে তৈরি করা হয়।
  2. ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্রে বা নিয়ন্ত্রণ করতে ভাইরাস ব্যবহার করা হয়।
  3. পোলিও, বসন্ত, জলাতঙ্ক ও প্লেগ রোগের প্রতিষেধক বা টিকা ভাইরাস দিয়ে তৈরি করা হয়।
  4. বর্তমানে বহুল আলোচিত “জেনেটিক প্রকৌশল” এর বাহক হিসেবে ভাইরাসকে ব্যবহার করা হয়।
  5. ফাজ ভাইরাস ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে মানুষকে ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
  6. টাইফয়েড, কলেরা, আমাশয় ইত্যাদি রোগের ওষুধ তৈরি করার জন্য ব্যাকটেরিওফাজ ভাইরাস ব্যবহার করা হয়।
  7. ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ ধ্বংস করতে ভাইরাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যুক্তরাষ্ট্রে, নিউক্লিয়ার পলিহাইড্রোসিস ভাইরাস (NPV) কে কীট পতঙ্গনাশক হিসেবে প্রয়োগ করা হয়।
  8. লাল টিউলিপ ফুলে ভাইরাসের আক্রমণের ফলে সাদা সাদা লম্বা লম্বা দাগ পড়ে। একে ব্রোকেন টিউলিপ বলা হয়। যার কারণে ফুলের সৌন্দর্য বহুগুন বৃদ্ধি পায় এবং ফুলের দাম ও বেড়ে যায়।

ভাইরাসের অপকারিতা

ভাইরাসের বেশ কিছু উপকারিতা থাকলেও এর অনেক অপকারিতা রয়েছে। নিচে ভাইরাসের অপকারিতা গুলো উল্লেখ করা হলো-

  1. হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের আক্রমণে মানুষের লিভার ক্যান্সার হয়ে থাকে।
  2. করোনা ভাইরাস যা সম্পতি গোটা বিশ্বে মারাত্মক আকার ধারন করেছিল।
  3. ইবোলা ভাইরাসের আক্রমণের কারণে কোষ লাইসিস হয় বা কোষ ফেটে যায়।
  4. এনোজেনিটাল (জরায়ুর মুখ) ক্যান্সার প্যাপিলোমা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে।
  5. বার্ড ফ্লু-একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এই রোগে প্রতি বছরই হাজার হাজার মুরগি মারা যায়।
  6. নিপা ভাইরাসের আক্রমণে শ্বসন জটিলতার কারণে মানুষসহ গৃহপালিত পশুপাখির মৃত্যু ঘটে।
  7. জিকা ভাইরাসের আক্রমণে মাইক্রোসেফালি ঘটে (মানে অপরিণত মস্তিষ্ক নিয়ে শিশু জন্ম গ্রহন করে)।
  8. মানুষের অসুস্থ হওয়ার সাধারণ একটি কারণ হলো সর্দি-জ্বর। যার জন্য অনেক গুলো ভাইরাস দায়ী।
  9. HIV ভাইরাস দ্বারা মানব শরীরে AIDS রোগ সৃষ্টি করে। ফলে মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
  10. চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের আক্রমণে জয়েন্টে ব্যথা, উচ্চ জ্বর, শরীরে রেশ ওঠা, দুর্বল লাগা, মাথা ব্যাথা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়।
  11. ফাজ ভাইরাস মানব শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করার সাথে সাথে বেশ কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়াকেও ধ্বংস করে দেয়।
  12. হাম, বসন্ত, পোলিও, ইনফ্লুয়েঞ্জা, জলাতঙ্ক, হার্পিস, চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, ক্যাপোসি সার্কোমা, ভাইরাল হেপাটাইটিস এর মতো মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে থাকে।
  13. উদ্ভিদের বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিতে যেমন: আলুর লিফরোল রোগ (পাতা কুচকিয়ে যাওয়া), সিমের মোজাইক রোগ, পেঁপের লিফকার্ল, ধানের টুংরো রোগসহ প্রায় ৩০০ রোগ ভাইরাস দ্বারা ঘটে থাকে। এতে ফসলের উৎপাদন বিপুলভাবে হ্রাস পায়।
Advertisement

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top