কাঠ সিজনিং কি? কেন করা হয় ও কাঠ সিজনিং পদ্ধতি (A to Z)

কাঠ সিজনিং

কাঠ সিজনিং করার ফলে কাঠের গুণগত মান ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়। সঠিক ভাবে কাঠ সিজনিং করা হলে কাঠের আয়ুষ্কাল বাড়ায় সাথে সাথে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ও অণুজীবের আক্রমণ থেকে কাঠকে রক্ষা করতে সাহয্য করে।

কাঠ সিজনিং কি?

কাঠের যেকোনো জিনিস বানানোর আগে সঠিকভাবে কাঠ শুকিয়ে নেওয়ার পদ্ধতিকে কাঠ সিজনিং বলা হয়।

আরো সহজ করে বলতে গেলে, ভিজা বা কাঁচা কাঠের আর্দ্রতা অপসারণ বা কাঠ শুষ্ককরণকে কাঠ সিজনিং বলা হয়। আর্দ্রতা কাঠের ভিতরে মুক্ত পানি হিসেবে বা কোষপ্রাচীরে রাসায়নিকভাবে বা আবদ্ধ পানি হিসেবে জমা থাকে। ৩০ শতাংশের বেশি আর্দ্রতার পরিমাণ হলে সে কাঠকে সাধারণত কাঁচা কাঠ বলা হয়।

কাঠের সিজনিং কেন করা হয়?

কাঠের আয়ুষ্কাল ও গুনগুত মান ঠিক রাখার জন্য কাঠের সিজনিং করা হয়।

গাছ থেকে সরাসরি যে কাঠ পাওয়া যায় তা ব্যবহার করার আগে আবশ্যয় সঠিক ভাবে শুকিয়ে নেয়া প্রয়োজন। কারণ সদ্য চেরাই কাঠের মোট ওজনের ২০ - ৮৫% পানি থাকে। বর্ষাকালে যখন বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যায় তখন কাঠ বাতাস থেকে জলীয়বাষ্প গ্রহন করে ফলে কাঠ আকারে বড় হয়ে যায়। আবার শীতকালে বাতাসে যখন জলীয়বাষ্পের পরিমান কম থাকে তখন কাঠ তার নিজের অভ্যন্তরীণ পানি ত্যাগ করে বেঁকে যায়। কাঠের এই আয়তন বৃদ্ধি বা হ্রাস রোধ করার জন্যই সিজনিং করা হয়।

যদি কাঠ কেটে সরাসরি আসবাবপত্র তৈরি করা হয় তা কিছু দিন পর শুকিয়ে গিয়ে বেঁকে যাবে। যেমন ঘরের দরজা বা জানালা বানালেন কিছুদিন পড়ে দেখবেন দরজা বা জানালার এক পাশ বেঁকে গেছে ফলে আপনি ওই দরজা বন্ধ করতে পারবেন না। সে জন্য কাঠকে ব্যবহার করার আগে আবশ্যয় কাঠগুলো এমন ভাবে শুকিয়ে নিতে হবে, যাতে করে এই কাঠ গুলো সব ঋতুর সাথে সকল আবহাওয়া ও পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যতা রক্ষা করে চলতে পারে। আর এর জন্যই কাঠ সিজনিং করা হয়।

কাঠ সিজনিং পদ্ধতি:

কাঠ সিজনিং বিভিন্ন পদ্ধতি করা যায়। তবে আমাদের দেশে প্রচালিত যেসব কাঠ সিজনিং পদ্ধতি রয়েছে নিচে তার ব্যাখ্যা করা হল-

বাষ্পচালিত চুল্লি পদ্ধতি:

বাষ্পচালিত চুল্লি পদ্ধতি হল একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে আবদ্ধ একটি রুমে বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রিত গরম বাষ্প সঞ্চালনের মাধ্যমে সেই রুমের ভেতরের কাঠ শুকানো হয়। এক্ষেত্রে রুম বা সিজনিং চেম্বার দুই ধরণের হয়ে থাকে-
  • ঢালাই করা ফ্লোর ও ছাদ বা ইটের গাঁথুনি দেওয়া দেয়াল। প্রস্তুতকারক প্রদত্ত ড্রয়িং অনুসারে ঢালাই দিয় প্রস্তুত করা হয়।
  • প্রিফেব্রিকেটেড অবকাঠামো। এক্ষেত্রে স্টিলের তৈরি অবকাঠামো নিয়ে এসে স্থাপন করা হয়।
একত্রে কত CFT কাঠ সিজনিং করবেন তার উপর ভিত্তি করে বয়লারের ক্যাপাসিটি ও রুমের সাইজ নির্ধারিত করতে হবে। কাঠের পুরুত্ব অনুযায়ী এভাবে একবার সিজনিং করতে সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ দিন সময় লাগতে পারে। এই পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

হাই ফ্রিকোয়েন্সি ভ্যাকুয়াম ড্রায়ার (HFVD) পদ্ধতি:

কাঠ শুকানোর জন্য HFVD পদ্ধতিটি হল একটি সর্বাধুনিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে একটি ক্যাপসুল আকৃতির বায়ুশুন্য আবদ্ধ পাত্রে কাঠ রেখে তাতে উচ্চ মাত্রার বিদ্যুৎ তরঙ্গ প্রবাহিত করে কাঠ শুকানো হয়। অনেক সময় দেখা যায় অতিরিক্ত শুকানোর ফলে কাঠ ফেটে ও বেঁকে যায় কিন্তু এই পদ্ধতিতে কাঠ শুকানো কালীন কাঠ বেঁকে ও ফেটে যাওয়ার কোনো ভয় থাকে না। কারণ এই পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ ভাবে কাঠ ফেটে ও বেঁকে যাওয়া রোধ করা যায়। আধুনিক কাঠ শুকানোর সকল পদ্ধতির মধ্যে HFVD পদ্ধতিতে কাঠ শুকানোর ক্ষেত্রে সময় সবচেয়ে কম লাগে। কাঠের পুরুত্ব অনুযায়ী ৬ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে।

সৌর চুল্লি পদ্ধতি:

সৌর চুল্লি পদ্ধতি হল বহুল প্রচলিত বৈজ্ঞানিকভাবে কাঠ শুকানোর একটি সনাতন পদ্ধতি। অন্য যে কোন পদ্ধতির তুলনায় এই পদ্ধতিতে শুকনো কাঠ এর মান অধিক উন্নত ও গ্রহণযোগ্য। এই পদ্ধতিতে স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ সর্বনিম্ন হলেও আমাদের দেশে এই পদ্ধতিতে কাঠ শুকানোর প্রচলন নেই বললেই চলে। এই পদ্ধতিতে কাঠ শুকাতে দীর্ঘ সময় লাগে, ০১" পুরুত্বের মাঝারি শক্ত মানের কাঠ শুকাতে আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ দিন প্রযান্ত সময় লাগে।

প্রাকৃতিক পদ্ধতি:

প্রাকৃতিক পদ্ধতি হল আমাদের দেশের প্রচলিত কাঠ শুকানোর পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে কাঠ শুকানোর জন্য ০৩ থেকে ০৬ মাস বা তারো বেশি সময় প্রয়োজন হয়। এই পদ্ধতিতে খোলা জায়গায় কাঠ রেখে সূর্যের তাপে ও বাতাসে কাঠ শুকানো হয়। এই পদ্ধতিতে শুকানো কাঠের আর্দ্রতার হার ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে ফলে এই পদ্ধতিতে শুকানো কাঠ ব্যবহার করে যে আসবাবপত্র বা দরজা-চৌকাঠ প্রস্তুত করা হয় পরবর্তীতে তা ত্রুটি-বিচ্যুতি হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।

কাঠ সিজনিং করা হয় অনেক পদ্ধতিতে আমরা এখানে ৪টি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছি।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url