নিঝুম দ্বীপ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

নিঝুম দ্বীপ

নোয়াখালী নিঝুম দ্বীপ বাংলাদেশের ছোট্ট একটি দ্বীপ। দ্বীপটি নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায় অন্তর্গত তাই অনেকের কাছে হাতিয়া নিঝুম দ্বীপ নামেও পরিচিত। ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করেন বাংলাদেশ সরকার। এরপর ২০১৩ সালে "জাহাজমারা ইউনিয়ন" থেকে পৃথক হয়ে স্বতন্ত্র ইউনিয়নের মর্যাদা লাভ করেন এই দ্বীপটি। আগে নিঝুম দ্বীপের নাম ছিলো বাউল্লার চর, চর-ওসমান, আবার কেউ কেউ ইছামতীর চর নামে সম্বোধন করত। কারণ দ্বীপটিতে প্রচুর পরিমান ইছা মাছ (চিংড়ীর স্থানীয় নাম) পাওয়া যেত, ফলে একে ইছামতির চরও বলা হত। পরে হাতিয়া উপজেলার সাংসদ "আমিরুল ইসলাম কালাম" এই নতুন নাম করণ করেন নিঝুম দ্বীপ, সেই থেকে এই নামেই সারা দেশের মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়েছে। নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণ করার জন্য উপযুক্ত একটি স্থান।

নিঝুম দ্বীপ কোথায় অবস্থিত

নিঝুম দ্বীপ নোয়াখালী জেলায় অবস্থিত। এর তিন দিকে বঙ্গোপসাগরে ঘেরা আর এক দিক ঘিরে রয়েছে মেঘনা নদী। মূলত নিঝুম দ্বীপ মেঘনা নদীর মোহনায় বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে উঠা একটি চর।

নিঝুম দ্বীপের আয়তন

নিঝুম দ্বীপের আয়তন প্রায় ৯১ বর্গ কিমি। এই দ্বীপে ৯টি গুচ্ছ গ্রাম রয়েছে, এই গ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ছোটখাটো অনেক গুলো ঝুপড়ি ঘর। নিঝুম দ্বীপ ৩৬৯৭০.৪৫৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে অবস্থিত (১৯৯৬ সালের হিসাব অনুযায়ী)।

নিঝুম দ্বীপের দর্শনীয় স্থান

  1. দমার চর
  2. কমলার দ্বীপ
  3. ম্যানগ্রোভ বন
  4. নামার বাজার সমুদ্র সৈকত
  5. চৌধুরী খাল ও কবিরার চর
  6. চোয়াখালী ফরেস্ট ও চোয়াখালী সমুদ্র সৈকত

নিঝুম দ্বীপ কেন বিখ্যাত

নিঝুম দ্বীপ বর্ষা মৌসুমে ইলিশ মাছের জন্য বিখ্যাত। এই সময় ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারি ব্যবসায়ীরা মাছ কিনতে নিঝুম দ্বীপে আসে। এছাড়াও শীত বা শীতের পরবর্তী মৌসুমে চেউয়া মাছের জন্য নিঝুম দ্বীপ বিখ্যাত। সমুদ্র সৈকত, মৎস্য আহরণ, উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী অঞ্চল এবং অতিথি পাখির আগমনের জন্যও নিঝুম দ্বীপ বিখ্যাত।

নিঝুম দ্বীপে মহিষ এবং হরিণ ছাড়া অন্য কোনো হিংস্র প্রাণী নেই। এখানে প্রায় ২২,০০০ হরিণ ও (প্রেক্ষাপট ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দ), প্রায় ৩৫ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এছাড়াও শীতের মৌসুমে অজস্র প্রজাতির অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এখানে মারসৃপারি নামে একধরনের মাছ রয়েছে, যাদেরকে উভচর প্রাণী বলা হয়। ৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে এই মারসৃপারি মাছ এবং ৬ থেকে ৯ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। নিঝুম দ্বীপে রয়েছে আসংখ কেওড়া গাছ, এছাড়াও প্রায় ৪৩ প্রজাতির লতাগুল্ম এবং ২১ প্রজাতির অন্যান্য গাছ রয়েছে। ইদানীং বনবিভাগের পক্ষ্য থেকে কিছু নোনা ঝাউও রোপণ করা হয়েছে।

এই দ্বীপের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো মাইলের পর মাইল জুড়ে শুধু কেওড়া বন আর সেই বনের পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা চিত্রা হরিণ।

নিঝুম দ্বীপ হোটেল

হোটেল সোহেল

নামার বাজার, জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন
ভাড়া: ১,০০০ - ৪,০০০ টাকা
ফোন নাম্বার: ০১৮৩২-৮৮৮৫৩১

নিঝুম রিসোর্ট

নামার বাজার
ভাড়া: ১,০০০ - ৩,০০০ টাকা
ফোন নাম্বার: ০১৭২৪-১৪৫৮৬৪

অবকাশ হোটেল

নামার বাজার সী বীচ
ভাড়া: ১,৫০০ - ৩,০০০ টাকা
ফোন নাম্বার: ০১৭২৪-১৪৫৮৬৩, ০১৮৪৫-৫৫৮৮৯৯, ০১৭৩৮-২৩০৬৫৫

হোটেল শাহীন

নামার বাজার
ভাড়া: ১,০০০ - ২,৫০০ টাকা
ফোন নাম্বার: ০১৮৬৩-১৫০৮৮১

হোটেল দ্বীপ সম্পদ

নামার বাজার
ভাড়া: ১,০০০ - ২,৫০০ টাকা
ফোন নাম্বার: ০১৭২০-৬০১০২৬, ০১৭৬০-০০৮১০৬

মসজিদ বোর্ডিং

নামার বাজা
ভাড়া: ৫০০ - ৬০০ টাকা
ফোন নাম্বার: ০১৭২৭-৯৫৮৮৭৯

নিঝুম ড্রিমল্যান্ড রিসোর্ট

বন্দরটিলা
ভাড়া: ১,০০০ - ২,৫০০ টাকা
ফোন নাম্বার: ০১৮৪৭-১২৩৫৭২

এছাড়াও রয়েছে হোটেল শেরাটন, জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, বন বিভাগের ডাকবাংলো, মাহমুদ বোডিং ও হোটেল আমেনা ইন্টারন্যাশনাল

নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান

বাংলাদেশের হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান অবস্থিত। বাংলাদেশ সরকার ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল পুরো দ্বীপটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করেন। চর ওসমান, বল্লারচর, চর মুরি ও কামলার চর এই চারটি চরের মোট ১৬,৩৫২.২৩ হেক্টর এলাকা নিয়ে গঠিত হয়েছে এই উদ্যানটি।

১৯৫০ সালের দিকে সমুদ্রবক্ষে নিঝুম দ্বীপটি জেগে ওঠে। কথিত আছে, একজন ওসমান নামের বাথানিয়া, তার মহিষের দল নিয়ে প্রথম এই দ্বীপে বসত শুরু করেন। তখন থেকে চর-ওসমান নামে এই দ্বীপটি পরিচিত ছিল। ১৯৭০ এর আগে এখানে কোনো জনবসতি ছিল না। পরে শাহবাজপুর, হাতিয়া, রাম গতির নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ গুলো এই দ্বীপটিতে আশ্রয় নেওয়া শুরু করে, তখন থেকে জনবসতি গড়ে উঠে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url