শ্রীকৃষ্ণের বাঁশিতে মকর মাছ কিভাবে স্থান পেল

শ্রীকৃষ্ণের বাঁশিতে মকর মাছ কিভাবে স্থান পেল

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের লীলা বোঝা বড় দায় এই ধরাধামে তিনি কতই না লীলা করেছিলেন। এমনই এক লীলার কাহিনী আপনাদের সাথে আজ আলোচনা করবো। অনেকে হয়তো খেয়াল করেছেন শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির একটা মাথা মাছের মত দেখতে, তবে একটু মোড়ানো থাকে সে জন্য সহজে বোঝার উপায় থাকে না এটা একটা মাছ। এই মুড়ানো থাকা অংশটি হল মকর মাছ। এখন হয়তো ভাবছেন শ্রীকৃষ্ণের বাঁশিতে মকর মাছ কিভাবে স্থান পেল, তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

যেভাবে শ্রীকৃষ্ণের বাঁশিতে মকর মাছ স্থান পেল

শ্রীকৃষ্ণের বাঁশিতে মকর মাছ মাতা যশোদার কারণে স্থান পেয়েছিল। কিন্তু কারণটা কি তা জানতে অনুগ্রহ করে নিচের লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ুন।

মা যশোদা ও নন্দরাজের গৃহে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার লীলা-খেলা করতে করতে সধারন মানুষের ন্যায় বেড়ে উঠছিলেন। এড়ি মাঝে একদিন ভুল করে মা যশোদা "একাদশীর দিনে" ভাত রান্না করে ফেলেন। রান্নার পর তার মনে পড়ে যায় আজ একাদশী কেউ ভাত গ্রহন করবে না, এ নিয়ে ভীষন চিন্তায় পড়েন মা যশোদা কারণ এতো গুলো ভাত ফেলে দিলে তার পাপ হবে। আবার কেউ সেই ভাত খেলে তারও পাপ হবে কি করবে বুঝতে না পেড়ে মা যশোদা ভাত নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লেন।

ভাত নিয়ে পথে পথে ঘুরতে থাকলেন কিন্তু মানুষ তো থাক দূরের কথা কোনো পশু-পাখিও সে ভাত গ্রহণ করতে রাজি হলেন না। শেষে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে একটি জলাশয়ের কাছে গিয়ে বসে রইলেন, আর মনে মনে ভাবতে লাগলেন একাদশীতে ভাত রান্না করে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছেন। এমন সময় তিনি জলাশয়ের মধ্যে একটি মকর মাছকে লাফালাফি করতে দেখতে পেলেন। তখন মা যশোদা ভাবলেন একবার মকর মাছকে জিজ্ঞাসা করে দেখি সে এই ভাত গ্রহন করে কিনা। তারপরে তিনি মকর মাছকে বললেন, হে মকর মাছ তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছ আমি আজকে ভুল করে রান্না করে ফেরেছি। আজকের দিনে এই ভাত গ্রহন করা মানে সহস্র পাপ গ্রহন করে নেওয়া কিন্তু আমি যে বড় নিরুপায়। কেউ আমার রান্না করা ভাত আজকে গ্রহণ করতে চাচ্ছে না, তুমি কি আমাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করবে। হে মকর মাছ তুমি কি গ্রহণ করবে এই ভাত?

সব শুনে মকর মাছ উত্তরে বললেন, আমি যদি এই ভাত গ্রহন করি তার ফলে আমার যে পাপ হবে, সেই পাপ থেকে আমি কোনো দিন মুক্তি পাব না। তবে আমার একটি শর্ত যদি আপনি রাখতে পারেন তাহলে আমি এই ভাত গ্রহণ করব। তখন মা যশোদা বল্লেন তোমার কি শর্ত আছে বল আমাকে আমি তোমার সব শর্ত মানতে রাজি আছি। উত্তরে মকর মাছ বল্লেন "একাদশী তিথিতে" ভাত গ্রহণ করলে আমার সহস্র পাপ হবে, আর আমাকে সেই পাপ থেকে একমাত্র মুক্তি দিতে পারে তোমার গোপাল। গোপালের বাঁশিতে আমাকে স্থান দিতে বলো, তার বাঁশি স্পর্শ করলে আমরা সহস্র পাপ পুণ্যে পরিণত হবে। তখন মা যশোদা তাকে কথা দেন যে আজ থেকে তোমার স্থান হবে গোপালের বাঁশিত এবার তুমি এই ভাত গ্রহণ করো। মা যশোদা কথা শুনে মকর মাছ সব ভাত গ্রহণ করেন এবং তার পর তার সাথে শ্রীকৃষ্ণের কাছে গেলেন।

গোপালকে মা যশোদা বললেন "একাদশী তিথিতে" আমি ভাত রান্না করে পাপের ভাগীদার হয়েছি, এই মকর মাছ আমার রান্না করা সমস্ত ভাত গ্রহণ করে আমাকে পাপমুক্ত করেছে এবং নিজে সহস্র পাপের ভাগী হয়েছে। তোমার বাঁশিতে তুমি এই মকর মাছকে স্থান দাও, আর তাকে পাপমুক্ত কর। শ্রীকৃষ্ণ মকর মাছের উদারতা দেখে মুগ্ধ হলেন, তখন শ্রীকৃষ্ণ বললেন আজ থেকে আমার বাঁশিতে মকর মাছ সর্বদা স্থান পাবে। যেখানেই আমার বাঁশি থাকবে সেখানেই মকর মাছ থাকবে। মকর মাছ ছাড়া আমার বাঁশি সম্পন্ন হবে না আমি কথা দিলাম। সেই কারণেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাঁশিতে সব সময় মকর মাছ থাকেন।

আশা করছি উপরের আলেচনা থেকে বুঝতে পেরেছেন কিভাবে মকর মাছ শ্রীকৃষ্ণের বাঁশিতে স্থান পেল। এতোক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জয় শ্রীকৃষ্ণ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url