হাত পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

হাত পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

অনেক সময় মানুষের শরীরের স্নায়ু আকস্মিকভাবে আক্রান্ত হয়ে হাত-পা অবশ হয়ে পড়ে। এ রোগকে মেডিকেলের ভাষায় গুলেইন-বারি সিনড্রোম (জিবিএস) বলা হয়। ফরাসি স্নায়ুবিদ "জর্জ গুলেইন" এবং "জ্যাঁ আলেকজান্দ্রে বারির" মাধ্যমে ১৯১৬ সালে প্রথম এই রোগের কথা জানা যায়। এই রোগে যেকোনো বয়সের মানুষ যেকোনো সময় আক্রান্ত হতে পারে। হাত পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো।

হাত পা অবশ হওয়ার কারণ:

হাত পা অবশ হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, স্ট্রোকসহ অন্যান্য অনেক রোগ থাকলেও হাত পা অবশ হতে পাড়ে। সাধারণত অনেক সময় দেখা যায় এক অবস্থায় অনেক সময় ধরে বসে থাকার কারণে বা কোনো কিছু অনেক ক্ষন এক ভাবে ধরে রাখার কারণে হাত পা অবশ হতে পারে। নিচ হাত পা অবশ হওয়ার কারণগুলো তুলে ধরা হলো।

  1. আমাদের শরীরে রক্ত সঠিকভাবে চলাচল করতে না পারলে তখন তা শিরাগুলির উপর প্রভাব ফেলে, যে কারণে আমাদের দেহের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন ঠিকমতো পৌঁছাতে পারে না তখন আমাদের শরীরের ওই অংশ ঝিমঝিম করতে থাকে বা অবশ হয়ে যায়।
  2. আবার দীর্ঘক্ষণ পায়ের উপর পা তুলে রাখলে বা হাতের উপর ভর দিয়ে শুয়ে থাকলে হাত পা অবশ হয়ে যায় (এটা খুবি সাধারন ঘটনা)।
  3. তবে, এমনটা যদি বার বার হতে থাকে, সাথে শরীরের অন্যান্য অংশেও অবশ হয়ে থাকে তাহলে সতর্ক হওয়া দরকার।
  4. কিছু ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া কারণেও হাত পা অবশ হতে পারে বলে ধরনা করা হয়। যেমন এপসটেইন-বার, ক্যাম্পেইলোবেকটার জেজুনি ভাইরাস ইত্যাদি। এসব জীবাণু শরীরে প্রবেশ করার তিন সপ্তাহের মধ্যে সাধারণত এই সমস্যাগুলো দেখা দেয়।
  5. অনেক সময় টিকা দেওয়ার পর জিবিএস-এ আক্রান্ত হয়েছেন, এমন তথ্যও অনেক পাওয়া গেছে।
  6. মূলত হাত পা অবশ বা জিবিএস রোগটি হল অটো ইমিউন রোগ বা আমাদের ইমিউন ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে।
  7. আমাদের রোগ প্রতিরোধ অ্যান্টিবডি গুলো সেই ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে, কিন্তু কিছু জীবাণুর গঠনের সঙ্গে আমাদের শরীরের স্নায়ুর গঠনের মিল রয়েছে যে কারনে অ্যান্টিবডিগুলো শরীরের স্নায়ুকে জীবাণু মনে করে আক্রমণ করে। যে কারণে স্নায়ুতে প্রদাহ শুরু হয় এবং এই স্নায়ু শরীরের যে মাংসপেশিকে সরবরাহ করে, তা দুর্বল হয়ে পড়ে।
  8. ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, স্ট্রোক এবং অন্যান্য অনেক রোগ থাকলেও হাত পা অবশ হওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  9. বেশি পরিমাণে অ্যালকোহল গ্রহণ করলেও হাত পা অবশ অবশ লাগতে পারে।
  10. আবার ভিটামিনের অভাব হলেও হাত পায়ে ঝি ঝি বা অবশতা দেখা দিতে পারে।

হাত পা অবশ হওয়ার প্রতিকার:

বার বার হাত পা অবশ হওয়াকে হালকা ভাবে নিবেন না। কারণ হতাৎ করে একদিন এটি গুরুতর আকার ধারন করতে পারে। সে জন্য আগে থেকেই এর প্রতিকার করতে হবে।

  1. হাত বা পা অবশ হয়ে আসলে কিছুক্ষণের জন্য সেই অংশ ম্যাসেজ করলে আসতে আসতে কমে যায়।
  2. ম্যাসেজ করার পরেও যদি না কমে, তবে আপনার শরীরে সমস্যা রয়েছে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করুন।
  3. জিবিএস এর কোনো লক্ষণ দেখা দিলে বা সন্দেহ হলে সাথে সাথে চিকিৎসকের সাথে দেখা করুন।
  4. চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তচাপ, ফিজিওথেরাপি, শ্বাসপ্রশ্বাস, হৃৎস্পন্দন, পর্যবেক্ষণ করা খুব জরুরি।
  5. জিবিএস রোগীর জন্য ফিজিওথেরাপি ও অকুপেশনাল থেরাপি খুবি গুরুত্বপূর্ণ।

হাত পা অবশ হওয়ার লক্ষণ:

হাত পা অবশ হওয়ার কারণ বা প্রতিকার জানার আগে আপনাকে আবশ্যয় এই রোগের লক্ষন সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ আপনি যদি এই রোগের লক্ষন গুলোই না জানেন তাহলে তার প্রতিকার করবেন কিভাবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক হাত পা অবশ হওয়ার লক্ষণ সমূহ।

  1. হাত পা অবশ হওয়া রোগকে গুলেইন-বারি সিনড্রোম সংক্ষেপে জিবিএস বলা হয়।
  2. জিবিএস রোগের অতিপরিচিত একটি লক্ষণ হলো হঠাৎ করে পেশির দুর্বলতা শুরু হওয়া, যা সাধারণত দুই পা থেকে শুরু হয় এবং পর্যায়ক্রমে হাতে ও অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
  3. অনেক সময় মুখ, ঘাড় ও বুকের পাঁজরের স্নায়ু কে আক্রান্ত করে, ফলে রোগীর খাবার গিলতে বা শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট পায়।
  4. কখনো কখনো পা ও হাতের আঙুল ঝিঁঝিঁ করতে থাকে বা অবশ হয়ে যায়।
  5. অনেকের মাংসপেশিতে ব্যথা ও কোমরে ব্যথা হতে পারে।
  6. শরীরের কিছু স্নায়ু শ্বাস প্রশ্বাস, হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে, সেসব স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে হৃৎস্পন্দন ও রক্তচাপ ওঠানামা করতে পারে।
  7. জিবিএস রোগের লক্ষণ প্রথম দেখা দেয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে তা আরো বাড়তে থাকে এবং ১-৪ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ লক্ষণ দেখা দেয়।
  8. রোগীভেদে লক্ষণের তীব্রতা আলাদা আলাদা হয়, অনেকে হাত-পা একটুও নাড়া-চাড়া করতে পারেন না, পুরোপুরি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url