আপাং গাছের শিকড়ের উপকারিতা

আপাং গাছের শিকড়ের উপকারিতা
আপাং গাছ একটি একবর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদ যা Amaranthaceae পরিবারের অন্তভূক্ত। আপাং এর বৈজ্ঞানিক নাম Achyranthes aspera ও ইংরেজী নাম Prickly chaff flower, Apang, Chaff flower। ভেষজ গুণাবলী ও উপকারিতার কারনে আপাং গাছ অনেকে নিজের বাড়ির আশে পাশে জন্মালে তা না ফেলে রেখে দেয়। আপাং গাছের বেশ কয়েকটি স্থানীয় নাম রয়েছে যেমন: চিরচিরে, রক্ত আপাং, সিসা গন্ধ, উপুতলেংগা ইত্যাদি। এটি একটি হার্ব জাতীয় উদ্ভিদ এবং উদ্ভিদটি সারাদেশেই জন্মে থাকে।

আপাং গাছের বৈশিষ্ট্য:

আমাদের দেশে দুই প্রকারের আপাং গাছ হয়ে থাকে এক প্রকার লাল এবং অন্যটা সাদা। তবে এই দুই প্রকারেই একই রকমের ঔষধি গুনাগুন রয়েছে। নিচে আপাং গাছের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো-
  1. আপাং গাছের শাখা-প্রশাখা চারদিকে ছড়ানো ছিটানো থাকে।
  2. আপাং গাছের মূলে প্রচুর ঔষধি গুনা-গুন রয়েছে।
  3. আপাং গাছের পাতা, কান্ড ও বীজে ঔষধি গুণ রয়েছে।
  4. আপাং গাছের ডালের অগ্রভাগ কাঁটাযুক্ত বাঁকানো ফুল ফুটে থাকে।
  5. আপাং গাছ ১ মিটারের মতো উঁচু হয়ে থাকে।
  6. আপাং গাছের ফুল ৩০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়।
  7. আপাং গাছের ফুল খুবি ছোট, ৩-৭ মিমি হয়ে থাকে।
  8. আপাং গাছ সাধারনত পরিত্যক্ত জমিতে এবং পথের ধারে বেশি জন্মে থাকে।

আপাং গাছের শিকড়ের উপকারিতা

ভেজষ ঔষধ হিসেবে আপাং এর ব্যবহার অনেক প্রাচীন কাল থেকে চলে এসেছে। শুধু আপাং গাছের শিকড়ের উপকারিতা নয় সমস্ত আপাং গাছের ঔষধি গুন রয়েছে, নিচে তার বর্নণা করা হল।
  1. জ্বর হলে আপাং গাছের শিকড় ছেঁচে রস করে দিনে দুই বার খেলে জ্বর ভাল হয়ে যায়।
  2. বিরেচক, মূত্রবর্ধক ও পায়োরিয়া রোগ নিরাময়ে এই ভেষজ উদ্ভিদের শিকড় ছেঁচে রস খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  3. আপাং গাছের শিকড়ের রস কিছুদিন নিয়মিত খেলে বুকের ধড়ফড়ানি দূর হয়ে যাবে এবং হৃদযন্ত্রও সবল হবে।
  4. বাগী রোগ বা বিষাক্ত ক্ষতে আপাং গাছের শিকড়ের রস ক্ষত স্থানে দিনে প্রতিদিন ২-৩ বার লাগালে কিছুদিনের মধ্যে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
  5. কলেরা রোগ বা গ্রহনী রোগে আপাং গাছের শিকড় ছেঁচে রস করে দিনে দুই-তিন বার খেলে উপকার পাবেন।
  6. অকাল প্রসবের সম্ভাবনা দেখা দিলে আপাং গাছের ফুল হয়নি, এমন চারাগাছের মুল শিকড়সহ তুলে গর্ভবতী মায়ের কটিদেশে বেঁধে দিলে মহান সৃষ্টি কর্তার কৃপায় অকাল প্রসবের সম্ভবনা কমে যায়।
  7. আপাং গাছের টাটকা শিকড় পরিমান মত বেটে, দুপুরে গোসল করার ২-৩ ঘন্টা আগে সারা মাথায় কিছুদিন নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের রঙ যেমন কালো হবে, ঠিক তেমনি নতুন চুলও গজাবে।
  8. যাদের ক্ষুধা-মন্দার সমস্যা আছে তারা ৮ ভাগ আপাং-এর শিকড় ও ১ভাগ গোলমরিচ এক সাথে বেটে ছোট ছোট বড়ি তৈরি করে রোদে শুকিয়ে নিন। তারপর প্রতিদিন সকাল ও বিকালের খাবারের পর পানি সহ একটি করে বড়ি খান। ক্ষুধামন্দার সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
এছাড়াও আপাং গাছের বিভিন্ন আংশের উপকারিতা নিচে দেওয়া হল:
  1. আপাং গাছের বীজের গুঁড়া দুধ ও মাখনের সাথে মিশিয়ে খেলে পিত্তে পাথর হয় না।
  2. হাত, পা বা শরীরের কোন অংশ কেটে গেলে সেই অংশে আপাং গাছের কচি পাতার রস লাগালে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
  3. বাতজ্বর, শরীর ব্যথা, ফোড়া, চামড়ার চুলকানি, চামড়া ফাটা, ক্ষুধামান্দ্য ও পেটের শূল বেদনায় আপাং গাছের পাতার রস করে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  4. আতপ চাল ধোয়া পানি ও আপাং-এর বীজ ৩ গ্রাম নিয়ে তা ভালভাবে বেটে সকালে নিয়মিত ৩ থেকে ৪ দিন খেলে অর্শ রোগের যন্ত্রণা এবং রক্তপড়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  5. আতপ চাল ৪ গ্রাম ও আপাং গাছের টাটকা পাতা ৮-১০ টি নিয়ে একসাথে ঠান্ডা পানি দিয়ে বেটে ফোঁড়ার চারপাশে প্রলেপ দিলে ভেতর থেকে দূষিত রক্ত ও পূঁজ বের হয়ে আসে। তবে দিনে ২-৩ বার প্রলেপ দিতে হবে।
  6. আপাং গাছের শুকনো ডাঁটা আগুনে পুড়িয়ে ছাই তৈ্রি করে নিতে হবে। তার পর সেই ছাই থেকে ৮ গ্রাম নিতে হবে এবং তার সাথে তিলের তেল দিয়ে মেখে দাদ রোগের উপর ঘষে ঘষে লাগাতে হবে। এভাবে ৪-৫ দিন লাগালে উপকার পাবেন।
  7. সম্পূর্ন আপাংগাছ আধা ছেচা করে ৭ গ্রাম পরিমাণ নিয়ে এর সঙ্গে সমপরিমাণ কালমেঘ মিশিয়ে দুই কাপ পানিতে জ্বাল দিয়ে এক কাপ করতে হবে। তারপর ছেঁকে ওই পানি পান করলে হাত-পা ফোলা রোগে উপকার পাওয়া যায়। নিয়মিত দিনে দুই – তিনবার এক সপ্তাহ পান করলে পুরোপুরি ভালো হয়ে যাবে।
Advertisement

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top