ইউরিয়া মোলাসেস তৈরির নিয়ম

ইউরিয়া মোলাসেস তৈরির নিয়ম

গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে বিশেষ করে গরুর খাদ্য হিসেবে আমাদের দেশে শুকনা খড়ের ব্যাপক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এতে প্রর্যাপ্ত পরিমান আমিষ, খনিজ বা শর্করা জাতীয় উপাদান থাকে না। এদিকে গবাদিপশুর খাবারের দাম দিন দিন আকাশ ছুঁতে চলেছে আবার রোগ-ব্যাধির প্রকোপও কম নয়, এ সমস্যা সমাধানে সহায়তা করবে ইউরিয়া মোলাসেস।

আমিষের উৎস হিসেবে ইউরিয়া এবং খনিজ বা শর্করার উৎস হিসেবে মোলাসেসের (চিটাগুড়) জুরি মেলা ভার। সাধারণত গরু "ইউরিয়া মোলাসেস" আগ্রহের সাথে খেয়ে থাকে, যে কারণে ওজন এবং উৎপাদন উভয়ই খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। সর্বোপরি বলতে গেলে এটি একটি লাভজনক ও সহজ প্রযুক্তি। কিন্তু অনেকেই মোলাসেস তৈরির নিয়ম জানেন না, তাই আজকে আমরা আপনাদের সুবিধার্থে ইউরিয়া মোলাসেস সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।

ইউরিয়া মোলাসেস যেভাবে তৈরি করবেন

ইউরিয়া মোলাসেস তৈরি করতে কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না। এটি তৈরি করা খুব সহজ এবং খরচও খুব কম। এছাড়াও এটি গবাদি পশু খুব পছন্দ করে। নিচে ইউরিয়া মোলাসেস তৈরির নিয়ম তুলে ধরা হলো-

উপাদান:

ইউরিয়া মোলাসেস তৈরি করতে যেসব উপাদান লাগবে তা হলো-
  • প্রতি ১ কেজি খড়ের জন্য
  • ৫০০ মিলি পরিষ্কার পানি
  • ২৫০ গ্রাম মোলাসেস (চিটাগুড়)
  • ২৫ - ৩০ গ্রাম ইউরিয়া দিতে হবে।

প্রস্তুত প্রণালি:

ইউরিয়া মোলাসেস তৈরি করতে যেসব নিয়ম মানবেন তা নিচে উল্লেখ করা হলো-
  • প্রথমে পরিমাণ মতো খড়, পানি, ইউরিয়া ও মোলাসেস মেপে নিতে হবে।
  • তারপরে খড়গুলো ছোট ছোট করে কেটে নিতে হবে।
  • এরপরে পানির সঙ্গে সম্পূর্ণ দ্রবণ গুলো ভালোভাবে গুলিয়ে নিতে হব।
  • তারপরে পাকা মেঝেতে বা পরিষ্কার পলিথিন বিছিয়ে শুকনো খড় সমভাবে বিছিয়ে দিতে হবে।
  • এরপরে খড়ের ওপর আগে থেকে মিশানো ইউরিয়া ও মোলাসেস মিশ্রিত পানি একটু একটু করে ছিটিয়ে দিতে হবে এবং খড় গুলো উপর নিচ করে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
  • এভাবে মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে ইউরিয়া মোলাসেস।

ইউরিয়া মোলাসেস খাওয়ানোর নিয়ম:

গবাদি পশুকে ইউরিয়া মোলাসেস খাওয়ানোর অনেক উপকারিতা থাকলেও কিছু নিয়ম মেনে এই ইউরিয়া মোলাসেস খাওয়াতে হবে। গবাদিপশুকে ইউরিয়া মোলাসেস খাওয়ানোর নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হলো-
  • গরুকে বা গবাদি পশুকে তার ইচ্ছেমতো ইউরিয়া মোলাসেস খেতে দিতে পারবেন। তবে যখন থেকে ইউরিয়া মোলাসেস খাওয়াতে শুরু করবেন তখন অল্প অল্প করে অভ্যাস করে নিতে হবে।
  • ইউরিয়া মোলাসেস খাওয়ানোর ১ ঘন্টা আগে এবং ১ ঘন্টা পরে পানি খাওয়াবেন (এর মধ্যে পানি খাওয়াবেন না)।
  • খড় ছাড়া ইউরিয়া ও নালী মিশ্রিত পানি সরাসরি গরুকে খাওয়াবেন না।
  • খুব সকালে বা রাতে ইউরিয়া মোলাসেস খাওয়ানো ঠিক হবে না (সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১২ টার মধ্যে খাওয়াতে পারলে ভালো হয়)।
  • ফিডের পাশাপাশিও ইউরিয়া মোলাসেস খাওয়াতে পারবেন।
  • ইউরিয়া মোলাসেস একবার তৈরি করে ২-৩ দিন খাওয়ানো যাবে (তবে পলিথিন দিয়ে সুন্দর করে ঢেকে রাখতে হবে)।

ইউরিয়া মোলাসেস খাওয়ানোর উপকারিতা:

গবাদি পশুকে ইউরিয়া মোলাসেস খাওয়ানোর অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিচে গবাদি পশুকে ইউরিয়া মোলাসেস খাওয়ানোর উপকারিতা গুলো তুলে ধরা হলো-
  • ৬ মাসের বেশি বাছুর থেকে সকল বয়সের গরুকে তাদের চাহিদা মত খাওয়ানো যায়।
  • গরুর ওজন তারাতারি বৃদ্ধি পায়।
  • তৈরীর পদ্ধতি অনেক সহজ এবং খরচ ও তুলনামূলক ভাবে কম।
  • গবেষণা করে দেখা গাছে, এই পদ্ধতিতে ১ টাকার মোলাসেস খড়ের সঙ্গে খাওয়ালে প্রায় ৫ - ৭ টাকার গরুর মাংস উৎপাদন সম্ভব।
  • যেহেতু মোলাসেস ও ইউরিয়া খড়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে খাচ্ছে। তাই বিষক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনাও নেই।

সতর্কতা:

গবাদি পশুকে ইউরিয়া মোলাসেস খাওয়ানোর ক্ষেত্রে যেসব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে তা নিচে আলোচনা করা হলো-
  • ৬ মাসের কম বয়সের বাছুরকে ইউরিয়া মোলাসেস খাওয়ানো যাবে না।
  • দুর্বল ও অসুস্থ গবাদিপ্রাণিকে ইউরিয়া মোলাসেস খাওয়ানো যাবে না।
  • গবাদিপ্রাণিকে যদি সালফার জাতীয় কোন ঔষধ খাওয়ানো হয়, তাহলে তার পর থেকে পরবর্তী ১৫-৩০ দিন পর্যান্ত ইউরিয়া মোলাসেস খাওয়ানো যাবে না।
  • গর্ভবতী গাভীর গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে ইউরিয়া মোলাসেস খাওয়ানো যাবে না।
  • ইউরিয়া মোলাসেস খাওয়ানোর ফলে যদি কোন গবাদিপ্রাণি প্রায়ই অসুস্থ হয়ে যায় বা এলার্জি দেখা দেয় তাহলে সেই প্রানিকেও খাওয়ানো উচিত হবে না।
  • ইউরিয়ার পরিমাণ যেন কোনো ভাবেই বেশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে (কারণ ইউরিয়া বেশি হলে বিষক্রিয়া ঘটতে পারে)।
  • কোন কারনে যদি অতিরিক্ত ইউরিয়া প্রদানের কারনে বিষক্রিয়া হয় তাহলে দ্রুত একজন অভিজ্ঞ ডিভিএম ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url