পাকাল মাছ আমাদের দেশীয় একটি মাছ কিন্তু বর্তমানে এই মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। পাকাল মাছের স্থানীয় অনেক নাম রয়েছে যেমন, বাইন, বাইম, গুতি ইত্যাদি। এই মাছ সাধারনত কাদায় বা পাকে বসবাস করে, যে কারণে এই মাছটি পাকাল মাছ নামে বেশি পরিচিত। পাকাল মাছ english নাম হল mud fish.
পাকাল মাছের পুষ্টিগুন:
পাকাল মাছে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি ও ভিটামিন ই। এছাড়াও এই মাছে রয়েছে জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, আয়রন এবং খনিজ পদার্থ। পুষ্টিবিদদের মতে, “পাকাল মাছে কোলিন নামের একটি পদার্থ থাকে, যা ডিএনএ সংশ্লেষে সাহায্য করে। এছাড়াও স্নায়ুতন্ত্র, ফ্যাটের বিপাক ক্রিয়া এবং পরিবহনেও সাহায্য করে”।
পাকাল মাছের উপকারিতা
পাকাল মাছ একটি অতি পরিচিত মাছ। তবে আপনি জানেন কি? আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Immunity) বাড়াতে এই মাছের ভূমিকা কতোটুকু। যদি আপনি না যেনে থাকেন তাহলে চলুন নেয়া নেয়া যাক এই মাছের স্বাস্থ্য উপকারিতা।
- পাকাল মাছে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকায়, যাদের অতিরিক্ত মেদ রয়েছে তারা নিয়মিত এই মাছ খেতে পারেন।
- পাকাল মাছের তেলে ওমেগা থ্রি নামক অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা রক্তের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং উপকারী কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যে কারণে নিয়মিত পাকাল মাছ খেলে হৃদযন্ত্রে চর্বি জমতে পারে না।
- নিয়মিত পাকাল মাছ খেলে রক্ত জমাট বাধা জনিত স্ট্রোকের ঝুকি কমে যায়। কারণ এই মাছে থাকা ওমেগা থ্রি রক্তের অণুচক্রিকাকে সচল রাখে। যে কারণে আমাদের নিয়মিত পাকাল মাছ খাওয়া উচিত।
- “ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল ইনফরমেশন” এর তথ্য অনুযায়ী, ওমেগা থ্রি আমাদের শরীলের রক্তের অণুচক্রিকাকে জমাট বাঁধতে দেয় না, ফলে রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে স্ট্রোক হতে পারে না।
- “আমেরিকার স্কুল অব নিউট্রিশন জার্নাল” এর মতে, নিয়মিত পাকাল মাছ খেলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে যায় এবং উচ্চ রক্তচাপ আগে থেকে থাকলে তাও কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
পাকাল মাছের রেসিপি
পাকাল মাছ অনান্য মাছের মত করে রান্না করতে পারবেন। গরম গরম ভাতের সাথে পাকাল মাছের ঝোল অসাধারণ লাগে। নিচে পাকাল মাছ রান্নার রেসিপি তুলে ধরা হলো-
উপকরণ
পাকাল মাছ রান্না করার জন্য যে যে উপকরন লাগবে তা হলো-
- পাকাল মাছ ৩০০ গ্রাম
- ১টা পেঁয়াজ কুচি (বড়ো সাইজের)
- ১টা টমেটো কুচি (বড়ো সাইজের)
- ১ টেবিল চামচ আদা-রসুন বাটা
- ১ চা চামচ লাল মরিচ গুঁড়ো
- ১ চা চামচ চিনি
- ১ চা চামচ গরম মশলা গুঁড়ো
- ১ টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়ো
- নুন স্বাদ মত দিবেন
- হাফ চা চামচ ধনে গুঁড়া
- হাফ চা চামচ জিরে গুঁড়ো
- হাফ চা চামচ গোটা জিরে
- হাফ কাপ সর্ষের তেল
- এক কাপ পরিমাণ জল
নির্দেশাবলী
নিচের উল্লেখিত নির্দেশনা ফলো করে রান্না করতে পারেন। খেতে অসাধারণ মজা হয় বাসার ছোট বড় সবাই খুব পছন্দ করবে।
- প্রথমে আপনাকে পাকাল মাছ গুলো ভালো ভাবে পরিষ্কার করে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে, তার পর কিছুটা নুন ও হলুদ দিয়ে ভালো করে মেখে নিতে হবে।
- তারপরে একটা ছোট পাত্রে সামান্য পরিমান জল নিয়ে তার মধ্যে “গরমমশলার গুঁড়ো” বাদ দিয়ে বাকি সব রকমের গুঁড়ো মশলা এক সাথে গুলে নিতে হবে।
- এরপরে মাখিয়ে রাখা মাছ গুলো তেলে হালকা করে ভেজে নিতে হবে।
- ভাজা মাছ গুলো আলাদা একটা পাত্রে তুলে রাখতে হবে।
- মাছ ভাজার সেই তেলের মধ্যেই আরো কিছুটা তেল দিয়ে গরম করে নিতে হবে।
- তারপর গোটা জিরা ফোড়ন দিয়ে তার মধ্যে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভেজে নিতে হবে।
- পেঁয়াজ কুচি গুলো হালকা বাদামি করে ভাজা হয়ে গেলে তার মধ্যে বেটে রাখা আদা-রসুন ও টমেটো কুচি দিয়ে ভেজে নিতে হবে (টমেটো নরম হওয়া পর্যন্ত)।
- এরপরে তাতে স্বাদমতো নুন ও গুলে রাখা মশলাগুলো দিয়ে ভাল করে কষিয়ে নিতে হবে।
- মশলা কষানো হয়ে গেলে দেখবেন কড়াইয়ের পাশ থেকে তেল ছাড়তে শুরু করেছে তখন তার মধ্যে সামান্য পরিমাণে জল দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে।
- ঝোলটা ফুটতে থাকলে তার মধ্যে ভেজে রাখা মাছ গুলো দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন।
- তারপর ঝোল ফুটে গামাখা হয়ে আসলে তার মধ্যে গরম মশলা গুঁড়ো ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।
পাকাল মাছের ছবি


