সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে চাইলে, আপনাকে প্রতিদিন পরিমিত ও সঠিক খাবারের পাশাপাশি ব্যায়ামও করতে হবে। প্রতিটি মানুষের সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া দরকার, কারন সুস্বাস্থ্য আপনাকে আর্থিক, মানসিক ও সামাজিক চাপ বা টেনশন থেকে মুক্ত রাখবে।
নিয়মিত সঠিক খাদ্য গ্রহণ করলে যেমন স্বাস্থ্যবান থাকা যায় ঠিক তেমনি হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মত রোগসহ আনান্য অনেক রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সুস্বাস্থ্য মানুষের সামাজিক সু-সম্পর্ক, যা আপনার শারীরিক ভালোলাগা ও মানসিক প্রশান্তির উন্নতি করে। এছাড়াও সঠিক খাদ্য গ্রহণ করলে ডায়বেটিক, উচ্চ রক্তচাপ ও যৌণ অক্ষমতার সমাধান পাবেন।

সুস্বাস্থ্যের খাদ্য তালিকা:
সুস্বাস্থ্যের জন্য খাদ্য তালিকায় অনেক বেশি খাবারের প্রয়োজন নেই। এক বারে বেশি না খেয়ে নিয়মিত পরিমিত খাবার গ্রহন করতে হবে। নিচে সুস্বাস্থ্যের জন্য কেমন খাবার “খাবারের তালিকায়” রাখতে হবে তা নিয়ে আলোচনা করা হলো-
পরিমিত ও সঠিক আহার:
পরিমিত ও সঠিক আহার বলতে সু-পরিকল্পিত ভাবে খাদ্য গ্রহণ করাকে বুঝায়। যেমন ধরুন, যেসব খাবার শরীরের জন্য ক্ষতিকর সেই সব খাবার বাদ দিতে হবে। তার সাথে আপনি যতটুকু খাবার খেতে পারেন তার থেকে এক মুট খাবার কম খেতে হবে এবং প্রতিদিনের খাবারের সাথে কম করে ৪০০ গ্রাম ফল ও সবজি খেতে হবে।
সুস্বাস্থ্যের জন্য শাক:
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চাইলে প্রচুর পরিমাণে শাক খেতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত শাক খেলে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হয়। এছাড়াও নানা ধরনের রোগ তেকে মুক্ত থাকা যায়। প্রায় সব ধরনের শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও ফাইটো কেমিক্যাল (যেমন-লুটেনইন, বিটা ক্রিপটোজানথিন, জিয়া জানথিন ও বিটা ক্যারোটিন) রয়েছে। নিচে কয়েকটি শাকের নাম উল্লেখ করা হলো-
- পুঁই শাক
- ডাটা শাক
- লাল শাক
- কচু শাক
- কলমি শাক
- লাউ শাক
- কুমড়া শাক
- পালং শাক ইত্যাদি
সুস্বাস্থ্যের জন্য সবজি:
সবজি না খাওয়ার মতো বদভ্যাস অনেকের মধ্যেই রয়েছে। কিন্তু সুস্বাস্থ্যের জন্য সব ধরনের সবজি প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে গ্রহন করতে হবে। তবে একসঙ্গে অনেক সবজি খাওয়া সম্ভব নয়, তাই একেক দিন একেক ধরনের সবজি খেতে পাড়েন। এতে করে যেমন উপকার পাবেন ঠিক তেমনি খেতেও একঘেয়ে লাগবে না। নিচে কয়েকটি সবজির নাম উল্লেখ করা হলো-
- শসা
- খিরাই
- টমেটো
- কাঁচা পেঁপে
- লাউ
- পটল
- করলা
- ডাটা
- কুমড়া ইত্যাদি।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার:
প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। কারণ ভিটামিন সি- ত্বক, চুল ও দাঁত ভালো রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয় এবং হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমে যায়। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার পারেন যে সব ফল থেকে তা হলো-
- লেবু
- কমলা
- জাম্বুরা
- আমড়া
- আমলকী
- পেয়াড়া
- কামরাঙ্গা
- মালটা ইত্যাদি।
সুস্বাস্থ্যের জন্য ফল:
সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন খাবারের সাথে অন্তত ১০০ গ্রাম ফল গ্রহণ করতে হবে। এক এক ফলে এক এক ধরনের উপাদান থাকে। তাই এক ধরনের ফল বেশি পরিমাণে না খেয়ে বিভিন্ন ধরনের ফল ছোট ছোট টুকরো করে এক সাথে গ্রহন করবেন। দেহকে সুস্থ ও সবল রাখার জন্য যেসব পুষ্টির প্রয়োজন হয় তার প্রায় সবই ফলে রয়েছে। ফল বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের আধার। তাই আমাদের প্রতিদিন অবশ্যই ফল গ্রহন করতে হবে। নিচে কয়েকটি ফলের নাম তুলে ধরা হলো-
- পাকা কলা
- পাকা পেঁপে
- পাকা আম
- কাঠাল
- আপেল
- খেজুর
- ত্বিন ফল
- ডালিম
- আঙ্গুর
- লিচু
- তরমুজ
- পাকা বেল
- আনারস
- আতা ফল
- নাসপতি ইত্যাদি।
প্রোটিন ও তেল সমৃদ্ধ খাবার:
প্রোটিন আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী, তাই নিয়মিত আমাদের প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহন করা দরকার। তবে প্রোটিন ও তেল সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিন ১০০ গ্রামের বেশি খাওয়া যাবে না।
- মাছ
- মাংস
- ডিম (কুসুক ছাড়া)
দুধ ও দুধ জাতীয় পদার্থ:
সুস্বাস্থ্যের জন্য আপনাকে প্রতিদিন ১০০ গ্রাম ননফ্যাট দধি (যে দুধ থেকে ফ্যাট তুলে নেওয়া হয়েছে এমন), নন ফ্যাট গুড়া দুধ ১৫ গ্রাম ও পনির ৩০ গ্রাম প্রযান্ত গ্রহণ করতে পারবেন।
উদ্ভিত তেল ও তেল সমৃদ্ধ খাবার:
উদ্ভিদ তেল ও তেল সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করবেন। যেসব খাবার থেকে আমরা উদ্ভিত তেল পেয়ে থাকি তা হলো-
- চিনা বাদাম
- কাজু বাদাম
- কাঠ বাদাম
- সরিষার তেল
- সয়াবিন তেল
- তিলের তেল
- সূর্যমুখী তেল
- অলিভ অয়েল ইত্যাদি।
যে সকল খাবার এড়িয়ে চলবেন:
আপনি যদি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে চান তাহলে আপনার খাবার তালিকা থেকে কিছু খাবার বাদ দিতে হবে। যেমন, অতিরিক্ত ফ্যাট ও কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার গ্রহণ করা যাবে না। যেসব খাবার গুলোতে অতিরিক্ত ফ্যাট ও কোলেস্টের থাকে তা হল।
- ঘি
- মাখন
- মগজ
- কলিজা
- চামড়া
- বেশি চর্বিযুক্ত মাংস (গরু,খাসি, শুকর)
- ফুল ক্রিম
- ফ্যাটযুক্ত দুধ জাতীয় পদার্থ
- ডিমের কুসুম
- চিংড়ি মাছ