বিল গেটস এর জীবন কাহিনী

বিল গেটস নামটি শুনেনি বা তার সম্পর্কে জানেন না এমন খুব কম মানুষ আছে। তার নাম শুনতেই আমাদের চোখের সামনে অনেক কিছু ভেসে উঠে এবং তার সফলতার গল্প সম্পর্কে জানতে ইচ্ছে করে। আবার অনেকেই হয়তো তার মত হবার স্বপ্ন দেখেন। সে যাই হোক আমরা এই পোষ্টে বিল গেটস এর জীবন কাহিনী সম্পর্কে আলোচনা করব।

বিল গেটস এর জীবন কাহিনী

বিল গেটসের জন্ম:

বিল গেটস ১৯৫৫ সালের ২৮ অক্টোবর সিয়াটল, ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। তার পিতার নাম বিল গেটস সিনিয়র ও মাতার নাম মেরি ম্যাক্সওয়েল।

বিল গেটসের শিক্ষা জীবন:

বিল গেটসের শিক্ষা জীবন শুরু হয় লেকসাইড স্কুল (এই স্কুলে কম্পিউটার শিক্ষার উপর বিশেষ কদর ছিল) থেকে এবং সেখানেই ১৩ বছর বয়স অবধি পড়াশুনা করেন।

বিল গেটস শৈশব কাল থেকেই লেখাপড়ার প্রতি অনেক আগ্রহী ছিলেন। তার মা-বাবা সব সময় চাইতেন তাদের ছেলে আইন পেশায় জব করবেন, কিন্তু বিল গেটস মোটেই সেই বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন না। তার ছোট বেলা থেকেই কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ ছিল।

যখন সে লেকসাইড স্কুলে পড়াশুনা শুরু করেন তখন থেকে তার কম্পিউটারের উপর আগ্রহ আরে বেড়ে যায়। তিনি এই স্কুলে থাকা কালীন বেশির ভাগ সময় কম্পিউটার নিয়ে বসে থাকতেন এবং নিজে নিজে কিছু করার চেষ্টা করতেন। স্কুলে থাকা কালীন তিনি কম্পিউটারের উপর অধিক সময় ব্যয় করে কম্পিউটারের বেসিক ভাষা ব্যবহার করা শিখে জান। এছাড়াও তিনি প্রোগ্রামিং এর উপর বিশেষ জ্ঞান লাভ করেন।

তারপর বিল গেটস "প্রিপারেটরি স্কুলে" ভর্তি হন। এই স্কুলের সবাইকে চমকে দিয়ে তিনি ১৬০০ নম্বরের ভিতরে ১৫৯০ নম্বর পেয়েছিল।

এমন দারুন ফলাফলের জন্য বিল গেটস ১৯৭৩ সালে পড়াশুনার সুযোগ পান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই সময়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়টি ছিল একটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেন তার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য এবং তিনি পা বাড়িয়ে দেন তার মাইক্রোসফট কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতার দিকে।

তার এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন তার পরিবার কিন্তু পরে তার পরিবার তাকে কাজের জন্য অনেক উৎসাহিত ও সমর্থন করেন।

বিল গেটসের কর্ম জীবন:

বিল গেটস মাত্র ১৭ বছর বয়সে ১৯৭২ সালে গেটস ট্র্যাক-ও-ডেটা নামে ৮০০৮ প্রসেসর উপর ভিক্তি করে ট্র্যাফিক কাউন্টার নির্মাণের উদ্যোগ নেই। পরে ১৯৭৫ সালে তার বাল্য কালের বন্ধু পল অ্যালেনের সাথে নিউ মেক্সিকোর আলবুকার্কে বসে মাইক্রোসফ্টের সহ-প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কর্ম জীবন শুরু করে। মাইক্রোসফ্টের সংস্থাটি পরবর্তীতে পৃথিবীর বৃহত্তম ব্যক্তিগত কম্পিউটার সফ্টওয়ার সংস্থা হয়ে উঠে। ১৯৭৬ সালের ২৬ নভেম্বর নিউ মেক্সিকোর রাজ্যে সেক্রেটারির কাছে আনুষ্ঠানিক ভাবে "মাইক্রোসফ্টের" ট্রেড নামটি রেজিস্টার হয়। ১৯৭৬ সালের শেষের দিকে এমআইটিএস থেকে স্বাধীন হয়ে, মাইক্রোসফ্টের কোম্পানিটি বিভিন্ন সিস্টেমের জন্য ল্যাঙ্গুয়েজ সফ্টওয়্যারের বিকাশে কাজ শুরু করে। ১ জানুয়ারি ১৯৭৯ সালে "আলবুকার্ক থেকে বেলেভ্যু" ওয়াশিংটনে নিজে কাজ শুরু করে। সংস্হাটি বড় হবার সাথে সাথে গেটস দায়িত্ব প্রাপ্ত হন এবং একজন নির্বাহী হিসাবে নিযুক্ত হন। এর কিছু দিন পরে আলবুকার্ক অফিস বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে নতুন অফিস করা হয় বেলেভ্যু ওয়াশিংটনে।

বিল গেটসকে বহু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে এই সব কাজ চলাকালীন কিন্তু তিনি হাল ছারেন নি তাই সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে আবার সব কিছু ঠিক হয়ে যায়।

অবশেষে ১৯৮১ সালে মাইক্রোসফ্ট কোম্পানি পূর্ণ রূপে গঠিত হয় এবং এই কোম্পানির সিইও করা হয় বিল গেটসকে। আর মাইক্রোসফ্ট কোম্পানি চেয়ারম্যান করা হয় কম্পানির পরিচালনা পর্ষদ-কে। ২০০০ সালের জানুয়ারি মাস প্রযন্ত তিনি কম্পানির সিইও হিসাবে নেতৃত্বে ছিলেন। তারপর তিনি সিইও পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং কম্পানির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহন করেন। সেই সাথে "আর্কিটেক্ট সফ্টওয়্যার" কম্পানির প্রধান নির্বাহী হিসাবে নিযুক্ত হন। এর পরে ২০০৬ সালের জুন মাসে ঘোষণা দেন যে তিনি এখন থেকে সফ্টওয়্যার কম্পানিরতে খণ্ডকালীন কাজ করবে। এছাড়াও তিনি ও তার বউ মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ এক সাথে মিলে ২০০০ সালে যে বেসরকারি দাতব্য ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিলেন সেখানে পূর্ণ কালীন কাজ করবে। তাদের ফাউন্ডেশন নাম ছিল "বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস"। ২০১৪ সালের ফেবরুয়ারি মাসে তিনি চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং এর পরে সদ্য নির্বাচিত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা "সত্য নাদেলাকে " সমর্থন করার জন্য নতুন পদ গ্রহণ করেন প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসাবে। পরে তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং শিক্ষাসহ জনহিতক কাজে মনোনিবেশ করার জন্য ২০২০ সালের মার্চ মাসে প্রযুক্তি উপদেষ্টা থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি ১৯৭৬ সাল থেকে ২০০৬ সাল প্রযন্ত অনেক কিছু করছেন কম্পানির জন্য যার কারণে কম্পানি অনেক উচ্চতার শিখরে পৌঁছেছে।

ব্যাক্তিগত ও বৈবাহিক জীবন:

বিল গেটস ১৯৯৪ সালে "মেরিন্ডা ফেঞ্চ" কে বিবাহ করেন। তাদের তিনটি বাচ্চা যার দুটি মেয়ে ও একটি ছেলে সন্তান। তিনি তার তিন বাচ্চা ও বউকে নিয়ে অনেক সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করতেন। তিনি পিতা হিসাবে ছিলেন একজন আদর্শ পিতা। তিনি তার বাচ্চাদের হাতে ১৪ বছর বয়সের আগে ফোন দেইনি। গেটস সব সময় নিজের কাজ নিজে করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। কিন্তু সবথেকে দুঃখের ব্যাপার হলো যে "গেটস ও মেরিন্ডার" দাম্পত্য জীবনে শুরু হয় কলহ ফলস্বরূপ ২০২৩ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

বিল গেটসের লেখা বই:

  • ব্যবসা ও চিন্তার গতি (Business @ The Speed of Thought 1999)
  • দ্য রোড হেড (The Road Ahead 1975)

বিল গেটসের প্রতিষ্ঠা সমূহ:

  • সহ - প্রতিষ্ঠাতা "বিল অন্ড মেরিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন" ও কো - চেয়ারম্যান।
  • তিনি ব্র্যান্ডেড এন্টারটেইনমেন্ট নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান।
  • মাইক্রোসফ্টরের প্রযুক্তি উপদেষ্টা।
  • মো ক্যাসকেড ইনভেস্টমেন্ট প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান।
  • মো টেরাপাওয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান।
Next Post
No Comment
Add Comment
comment url