লিভার বড় কেন হয়, বড় হওয়ার লক্ষণ এবং চিকিৎসা
লিভার আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি বিপাকীয় কাজে সাহায্য করে। এছাড়াও শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। শরীরের অতিরিক্ত চিনিকে লিভার গ্লাইকোজেন হিসেবে জমা রাখে, যা সঞ্জিত শক্তির অন্যতম উৎস।
লিভার বড় হয় কেন
লিভার বড় হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ সহ আরো অনেক কারণে লিভার বড় হয়ে থাকে। নিচে লিভার বড় হওয়ার মূল কারণ গুলো তুলে ধরা হলো-
- দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত পরিমাণে মদ পান করার ফলে লিভার বড় হয়ে যেতে পারে।
- হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ও রক্তনালীতে কোন রোগের কারণে অতিরিক্ত পরিমাণে রক্ত জমে লিভার বড় হয়ে যেতে পারে।
- শরীরের বিপাক প্রক্রিয়ায় জটিলতা দেখা দিলে লিভার বড় হয়ে যায়। বিশেষ করে লিভারে ফ্যাট জমা হওয়ার কারণে লিভার ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। যার ফলে লিভার বড় হয়ে যায়।
- ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হলে লিভার বড় হতে পারে। যেমন- মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস, সালমোনেলা টাইফি। এছাড়া এমন কিছু ছত্রাক আছে যাদের সংক্রমণ হলে লিভার বড় হতে পারে।
- এমন কিছু ভাইরাস আছে যেগুলোর সংক্রমণে লিভার বড় হয়ে যায়। যেমন: হেপাটাইটিস বি, এ, সি, ডি এবং ই। এছাড়াও ইবস্টেন বার, হারপিস সিম্পলেকস এবং সাইটোমেগালো ভাইরাসের সংক্রামণ হলে লিভার বড় হয়ে যেতে পারে।
- শরীরের অন্যান্য জায়গায় ক্যান্সার অথবা টিউমার হলে তা যদি লিভারে ছড়িয়ে পরে তখন লিভার বড় হয়ে যায়। অনেক সময় লিভারে টিউমার, সিস্ট কিংবা ক্যান্সার সংক্রমণ হয়। যার ফলে লিভার স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হয়ে যায়।
লিভার বড় হওয়ার লক্ষণ
সাধারণত লিভার যখন স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে তখন আমাদের কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু লিভার যখন বড় হয়ে যায় তখন শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। নিচে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লিভার স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হলে যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তা তুলে ধরা হলো-
- রক্ত বমি হওয়া
- চুলকানি দেখা দেওয়া
- মলের সাথে রক্ত বের হওয়া
- পেটের ডান পাশে ব্যথা করা
- ত্বক ও চোখের রং হলুদ হয়ে যাওয়া
- পেট ও পায়ের ফোলা ভাব দেখা দেওয়া
- পেটের ডান পাশে উপরের দিকে বাড়তি চাপ লাগা বা চাকার মতো অনুভূতি হওয়া
যদি উপরে উল্লেখ করা লক্ষণগুলো দেখা দেয় তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। এই লক্ষন গুলো অবহেলা করা একেবাড়েই ঠিক হবে না।
লিভার বড় হওয়ার চিকিৎসা
লিভার বড় হয়েছে কিনা তা প্রথমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নির্ণয় করে সিওর হয়ে নিতে হবে। তারপরে সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চিকিৎসা শুরু করাতে হবে। প্রথমে জেনে নেওয়া যাক কি কি পরীক্ষার মাধ্যমে লিভার বড় হয়েছে কিনা তা জানা যায়। নিচে পরীক্ষাগুলোর নাম তুলে ধরা হলো-
- রক্ত পরীক্ষা:
- সম্পূর্ণ রক্ত গণনা (সিবিসি)
- রক্তরসে প্রোটিনের মাত্রা
- লিভারের কার্যকারিতা পরীক্ষা
- হেপাটাইটিস এ, সি, বি, ই এবং ডি অ্যান্টিজেন/ অ্যান্টিবডির মাত্রা পরীক্ষা
- ইমেজিং স্টাডিজ বা প্রতিবিম্বিতকরণ দ্বারা পরীক্ষা:
- কম্পিউটার দ্বারা পেটের টমোগ্রাফি (সিটি) স্ক্যান
- পেটের সোনোগ্রাফি
- ম্যাগনেটিক রিজোনেন্স ইমেজিং (এমআরআই) স্ক্যান
- লিভার বায়োপসি: এটি লিভার রোগ নির্ণয় করতে এবং কোষগুলোর অভ্যন্তরীণ অবস্থা জানাতে (হেপাটোসাইট) সাহায্য করে।
লিভার কতটা বড় হয়েছে বা কোন কারণে বড় হয়েছে তার উপর লিভারের চিকিৎসা সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে। যদি রোগের সংক্রমণের কারণে লিভার বড় হয়ে যাই তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যেতে পারে। আবার ক্যান্সারের কারণে যদি লিভার বড় হয়ে যাই তাহলে কেমো-রেডিয়েশন থেরাপি বা সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।
তবে এই সব চিকিৎসা নিজে নিজে বা হাতুরে ডাক্তার দিয়ে করতে জাবেন না। এর জন্য অবশ্যয় ভালো একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করবেন। আশা করছি তিনি আপনার শরীরের কন্ডিশন ও পরিক্ষা-নিরিক্ষার কাগজ ভালো ভাবে দেখবেন, বুঝবেন এবং সঠিক চিকিৎসা প্রধান করবেন।
লিভার বড় হলে কি করতে হবে
লিভার বড় হওয়ার সমস্যা দেখা দিলে আপনার জীবনযাপন ও খাদ্য অভ্যাসের পরিবর্তন আনতে হবে। তা না হলে সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে। নিচে লিভার বড় হলে জীবনযাপন ও খাদ্য অভ্যাসের কি কি পরিবর্তন আনা প্রয়োজন তা উল্লেখ করা হলো-
- চিনি লিভারের জন্য অনেক ক্ষতিকর। তাই চিনি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। তাহলে এই অবস্থায় সুস্থ থাকতে পারবেন। তাছাড়াও যাদের লিভার সুস্থ আছে তাদেরও চিনি জাতীয় খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।
- মদ পান করলে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই কথাটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত। তাই লিভারের সমস্যা থাক বা না থাক মদ পান করা থেকে বিরত থাকুন।
- ফ্যাট জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুণ। এক্ষেত্রে বাইরের ভাজাভুজি খাবার খাওয়া যাবে না। এই খাবার গুলোকে একদম এড়িয়ে চলতে হবে।
- প্রতিদিন খাবার তালিকায় ভিটামিন ও খনিজ লবণ যুক্ত শাকসবজি ও ফলমূল রাখতে হবে, তাবেই আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিন সকালে কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন।
- শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
এছাড়াও আরো কিছু অভ্যাসের পরিবর্তন আনা উচিত। যেমন- বাজারে গেলে রিকশা বা অটোরিকশা না নিয়ে পায়ে হেঁটে যাবেন, অফিসে বা বাসার লিফট বব্যহার না করে পায়ে হেটে উঠুন। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাবেন এবং সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠবেন ইত্যাদি।
লিভারের স্বাভাবিক সাইজ কত
লিভারের গড় সাইজ পারকাশন দ্বারা পরিমাপ করা হয় মহিলাদের জন্য ৭ সে. মি. এবং পুরুষদের জন্য ১০.৫ সে. মি.। যদি লিভার বা যকৃৎ স্প্যান এই পরিমাপের থেকে ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার কম বা বেশি হয় তাহলে তা অস্বাভাবিক বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।