লিভারের ব্যথা কোথায় এবং কেন হয়

লিভারের ব্যথা কোথায় হয় এবং কেন হয়

মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ গুলোর মধ্যে একটি অঙ্গ হলে লিভার। যদি এটি সঠিকভাবে কাজ না করে বা কাজ করা বন্ধ করে দেয় তাহলে শরীরের উপর মারাত্মক প্রভাব পরে।

লিভারে ব্যথা হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে (আমাদের দেশে লিভার রোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগ রোগী এই লিভার রোগ সম্পর্কে কোনো ধরা নেই। এমনকি তারা এটাও জানেন না যে লিভারের ব্যথা কোথায় হয় এবং কেন হয়।

যে কারণে প্রথম দিকে লিভারে ব্যথা হলে কেউ বুঝতেই পারে না, যে এটা লিভারের ব্যাথা। এতে করে রোগ আরো বেশি ছড়িয়ে পড়ে এবং গুরুতর আকার ধারণ করে। এই জন্য সকলের লিভার সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। নিচে লিভারের ব্যাথা কেন হয়, কোথায় হয়, ঔষধের নাম কি এবং খাদ্য তালিকা নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

লিভারের ব্যথা কোথায় হয়

লিভার কোন রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে গুরুতর কোনো লক্ষণ দেখা দেয় না, তবে মাঝে মাঝে পেটে ব্যথা হয়। অনেকে এই ব্যথাকে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা মনে করে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ গ্রহণ করেন। এতে করে লিভারের সমস্যা কমে না বরং ধীরে ধীরে সমস্যা আরো বাড়তে থাকে। আর সকরের যদি জানা থাকে লিভারের ব্যথা কোথায় হয়, তাহলে পেটে ব্যথা হলে বুঝতে কোন সমস্যা হবে না, কোনটি লিভারের ব্যথা আর কোনটি গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা।

পেটের ডান পাশে পাঁজরের একটু নীচে ব্যথা হলে বুঝতে হবে লিভারে কোনো সমস্যা হতে পারে। তাই পেটের ডান পাশে ব্যথা হলে তা অবহেলা না করে যতদ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তা না হলে সমস্যা আরো গুরুতর হতে পারে।

লিভারের সমস্যা প্রথম অবস্থায় ধরা পড়লে, উন্নত চিকিৎসা ও জীবনযাপনের পরিবর্তন আনার মাধ্যমে সুস্থ ভাবে জীবন যাপন করা সম্ভব।

লিভারে ব্যথা কেন হয়

কোনো রোগের সংক্রমণ হলে লিভারে ব্যথা হতে পারে। যে সব রোগের সংক্রমণ হলে লিভারে ব্যথা হতে পারে তা নিচে তুলে ধরা হলো-

  • লিভার সিরোসিস
  • লিভারের ইনফেকশন
  • লিভার মেটাস্ট্যাসিস
  • ফ্যাটি লিভার
  • লিভার ক্যান্সার
  • লিভার সিস্ট
  • অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
  • হেপাটাইটিস বি, সি এবং এ ইত্যাদি

লিভারের ঔষধের নাম কি

লিভার রোগের বিভিন্ন ধরনের কার্যকারি ঔষধ রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো-

সিলিবিন ১৪০ ক্যাপসুল (Silybin 140 Capsule)

কার্যকারিতা: স্কয়ার কোম্পানির হারবাল ওষুধ হলো সিলিবিন (Silybin)। এটি লিভারের বিভিন্ন ধরনের রোগে ব্যবহার করা হয়। যেমন- জন্ডিস, লিভার সিরোসিস, হেপাটাইটিস, ফ্যাটি লিভার, দীর্ঘস্থায়ী লিভার প্রদাহ, লিভার ফেইলিওর, নতুন ও পুরাতন লিভারের পীড়ায় ইত্যাদি। এছাড়া অ্যালকোহল গ্রহণের ফলে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে।

খাওয়ার নিয়ম: প্রতিদিন ১ টি করে ২ বেলা সিলিবিন ১৪০ ক্যাপসুল গ্রহণ করতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। ওষুধটি ভরা পেটে গ্রহণ করতে হবে। ১২ বছরের কম বয়সীরা এই ওষুধ গ্রহণ করতে পারবে না। গর্ভাবস্থায় এই ওষুধটি গ্রহণ করা উচিত নয়। তবে স্তানদানকালীন সময় এই ওষুধটি গ্রহণ করা যেতে পারে।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া: এই ওষুধটি প্রাপ্তবস্কদের ক্ষেত্রে কোন প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না। তবে, কারো কারো ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। কারণ সব মানুষের শরীরে সব কিছু সহ্য করার ক্ষমতা থাকে না। তাই ওষুধটি সেবন করার আগে একজন লিভার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিবেন।

দাম: সিলিবিন ১৪০ ক্যাপসুলের প্রতি পিসের দাম ১০ টাকা করে।

এছাড়া আরো কিছু কার্যকরী লিভার রোগের ঔষধ হলো-

  • লিভেক ক্যাপসুল (Livec Capsule) এটি হামদর্দ কোম্পানির ওষুধ এবং প্রতি পিসের দাম ৮ টাকা করে।
  • ইকটার্ন সিরাপ ৪৫০ মিলি (Icturn Syrup 450 ml) এটি হামদর্দ কোম্পানির ওষুধ এবং প্রতি ৪৫০ মিলি সিরাপের দাম ১৫০ টাকা করে।
  • রেডিসিল ক্যাপসুল (Radisil Capsule) এটি হামদর্দ কোম্পানির ওষুধ এবং প্রতি পিসের দাম ১০ টাকা করে।

বি:দ্র: তবে মনে রাখবেন উপরে উল্লেখিত যেকোনো ঔষধ সেবন করার আগে অবশ্যয় একজন রেজিষ্টার ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করবেন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। কেননা সকল রোগের ধরন একরকম হয় না, আবার সবার শারীরিক আবস্থাও এক হয় না।

লিভার রোগীর খাদ্য তালিকা

লিভার রোগীর খাদ্য তালিকায় যে খাবারগুলো রাখা উচিত তা নিচে তুলে ধরা হলো-

  1. প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস বা ২.৫ থেকে ৩ লিটার পানি পান করতে হবে।
  2. দিনের মধ্যে দুই একবার চা বা কফি খেতে পারেন। তবে তার বেশি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  3. প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার রাখতে পারেন। যেমন- কাঠবাদাম, গ্রিন টি, লাল আটা, ব্রোকলি ইত্যাদি।
  4. প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার রাখতে পারেন। যেমন- ভাত, পাস্তা, ওটস, গমের আটা ইত্যাদি।
  5. ভিটামিন সি যুক্ত ফল প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। যেমন- আমলকি, কমলা, মাল্টা, জালপাই, আঙুর, জাম, লেবু ইত্যাদি।
  6. ২০ থেকে ৩০ ভাগ প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখতে পারেন প্রতিদিনের খাবার তালিকায়। এর মধ্যে সবজি প্রোটিন ও প্রাণিজ লিন প্রোটিন রাখতে হবে।
  7. ১০ থেকে ২০ ভাগ ফ্যাট জাতীয় খাবার রাখতে পারেন। তবে পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট জাতীয় খাবার নিতে হবে। যেমন- বাদাম, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি।
  8. প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ১ থেকে ১.৫ গ্রাম এর মতো সোডিয়াম জাতীয় খাবার রাখতে পারেন। তবে এর থেকে বেশি সোডিয়াম জাতীয় খাবার খাবেন না।
  9. লিভার রোগে আক্রান্ত হলে সহজপাচ্য অর্থাৎ সহজে হজম হয় এমন খাবার নির্বাচন করতে হবে। সবজির ক্ষেত্রে নির্বাচন করতে পারেন পেঁপে, লাউ, মূলা, টমেটো ইত্যাদি।

নোট: ধূমপান ও অ্যালকোহল একদম গ্রহন করা যাবে না। এছাড়াও অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৩ এবং আয়রন গ্রহণ করা যাবে না।

লিভার রোগীর প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এমন খাবার রাখতে হবে যা লিভারের উপর কোনো প্রকারের চাপ সৃষ্টি না করে। সঠিক খাবার গ্রহণের মধ্যমে লিভারকে সুস্থ রাখন ও ভালো থাকুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url