পাথরকুচি পাতার উপকারিতা অপকারিতা, খাবার নিয়ম ও পাতার বৈশিষ্ট্য

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা

প্রাচীনকাল থেকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গাছের ছাল, পাতা, ফল ইত্যাদি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ঔষধি গাছগুলোর মধ্যে অন্যতম গাছ হলো পাথরকুচি গাছ। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, পাথরকুচি পাতা উচ্চ রক্তচাপ, পাইলস, কিডনিসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে।

পাথরকুচি পাতা আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারি সেই সম্পর্কে অনেকেরই কোনো ধরণা নেই। তবে পাথরকুচি পাতার উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও রয়েছে।

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

পাথরকুচি পাতার ব্যবহার করে শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ঘরোয়া পদ্ধতিতে নিরাময় করা যায়। এই পাতায় অনেক উপকারী উপাদান রয়েছে। তবে সব জিনিসের যে রকম উপকারিতা এবং অপকারিতা দুয়েই রয়েছে। ঠিক তেমনি এই পাথরকুচি পাতায় উপকারিতা ও অপকারিতা দুয়েই রয়েছে।

পাথর কুচি পাতার উপকারিতা

পাথরকুচি পাতার রস শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করে। নিচে পাথর কুচি পাতার উপকারিতা সমূহ তুলে ধরা হলো-

  1. মৃগী: যাদের মৃগী রোগের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য পাথরকুচি পাতার রস খুবি উপকারি। কেননা যখন মৃগী রোগ আক্রামন করে তখন ২-১০ ফোটা পাথরকুচি পাতার রস মুখে দিলে উপকার পাওয়া যায়।
  2. শিশুদের পেট ব্যথা: যদি শিশুর পেটে ব্যথা হয় তাহলে ৩০ থেকে ৬০ ফোটা পাথরকুচি পাতার রস পেটে মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়। কেননা পাথরকুচি পাতার রস পেটের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।
  3. পেট ফাঁপা: অনেক সময় বিভিন্ন কারণে পেট ফুলে ওঠে। তাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ১-২ চা-চামচ পাথর কুচির পাতার রসের সাথে কিছুটা চিনি মিশিয়ে গরম করে নিন। তারপর হাফ কাপ হালকা গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেয়ে নিন উপকার পাবেন।
  4. প্রস্রাব জনিত সমস্যায়: যদি কোন কারণে প্রস্রাব আটকে যায়, তাহলে ২ চামচ পাথরকুচি পাতার রসের সাথে আধাকাপ পরিমান কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে সকালে ও বিকালে খেলে উপকার পাবেন।
  5. শরীর জ্বালাপোড়া: শরীরের জ্বালাপোড়া উপশম করতে পাথরকুচি পাতার রস কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। এর জন্য আধা কাপ গরম পানিতে দুই চা চামচ পাথর কুচি পাতার রস মিশিয়ে প্রতিদিন দুবেলা খান শরীরের জ্বালাপোড়া কমে যায়।
  6. বিষাক্ত পোকায় কামড়: যদি কোনো সময় বিষাক্ত পোকায় কামড়ায় তাহলে কিছুটা পাথরকুচি পাতার রস করে নিন এবং সেই রস আগুনে সেঁকে কামড়ানো স্থানে লাগান জ্বালাপোড়া কমে যায়।
  7. পাইলস: পাইলস বা অশ্ব রোগ থেকে মুক্তি পেতে পাথরকুচি পাতার রস খেতে পারেন। কয়েকটি তাজা পাথরকুচি পাতা পিষে পানির সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে সেবন করলে কিছু দিনের মধ্যেই উপকার পাওয়া যায়।
  8. কিডনির পাথর অপসারণ: আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ডাক্তার অমিত ভার্মার মতানুশারে, কিডনি থেকে পাথর অপসারণ করতে পাথর কুচি পাতার রস অত্যন্ত কার্যকারী।
  9. উচ্চ রক্তচাপ: উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং মূত্রনালীর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পাথরকুচি পাতার রস বেশ কার্যকারী।
  10. জন্ডিস নিরাময়: পাথরকুচি পাতার রস জন্ডিসের মহা ঔষধ। এছাড়াও লিভারের যেকোনো সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পাথরকুচি পাতার রস অত্যন্ত কার্যকারী।
  11. ত্বকের যত্ন: পাথরকুচি পাতায় প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে, যা ত্বকের জন্য অনেক উপকারি। এছাড়া পাথরকুচি পাতায় জ্বালাপোড়া কমানোর ক্ষমতা রয়েছে। তাই ত্বকের যত্নে পাথরকুচি পাতা ব্যবহার করতে পারেন।

পাথরকুচি পাতার রস নিয়মিত সেবনে পেটে পাথর থেকে শুরু করে যোনিপথে সংক্রমণ, মাথাব্যথা, রক্তচাপসহ নানা সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও সাদা স্রাব, যোনিতে সংক্রমণ, ত্বক সংক্রান্তসহ অনেক গুরুতর রোগে পাথরকুচি পাতার রস অত্যন্ত কার্যকর।

পাথর কুচি পাতার অপকারিতা

পাথরকুচি পাতার রসে বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে। তার সাথে সাথে কিছু অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। তবে অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিকের থেকে উপকারিতা অনেক গুন বেশি। তাহলে চলুন পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতাগুলো জেনে নেওয়া যাক।

  • অতিরিক্ত পাথর কুচি পাতার রস খেলে মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  • পাথর কুচি পাতার রস অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ক্ষুধামন্দা দেখা দিতে পারে।
  • প্রয়োজনের থেকে বেশি পাথর কুচি পাতার রস খেলে পিত্তথলিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত পাথর কুচি পাতার রস খেলে ডায়রিয়া অথবা কলেরার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়ম

ঔষধি গাছ গুলোর মধ্যে পাথরকুচি গাছ অন্যতম। পাথরকুচি গাছের পাতায় বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুণাবলী রয়েছে। পাথরকুচি পাতা খাওযার নিয়ম রোগ বা সমস্যার উপর নির্ভর করে। সাধারনত পাথরকুচি পাতা সরাসরি চিবিয়ে বা রস করে নিয়মিত সকালে ও বিকালে খেতে পারেন।

  • শরীরের জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি পেতে আধা কাপ গরম পানির সাথে ২ চা চামচ পাথরকুচি পাতার রস মিশিয়ে প্রতিদিন সকাল ও বিকালে খেতে পারেন।
  • পেট ফাঁপার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চিনির সাথে ১-২ চা চামচ পাথরকুচি পাতার রস গরম করে পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • লিভারের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধান করতে পাথরকুচি পাতার জুস বানিয়ে নিয়মিত সকালে খালি পেটে খেতে পারেন।
  • পাথরকুচি পাতার রসের সাথে মধু ও গোলমরিচ মিশিয়ে খেতে পারেন উপকার পাবেন।

পাথরকুচি পাতার বৈশিষ্ট্য

বীরুৎজাতীয় একটি উদ্ভিদ হলো পাথরকুচি গাছ। এটি প্রাচীনকাল থেকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। পাথরকুচি গাছ Crassulaceae পরিবারের অন্তর্গত এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো Bryophyllum pinnatum.

পাথরকুচি গাছ দেড় থেকে দুই ফুট লম্বা হয়ে থাকে এবং এর পাতা লম্বা বোঁটার মসৃণ ও মাংসল হয়ে থাকে। পাথরকুচি পাতার আকৃতি দেখতে অনেকটা ডিমের মতো। এই পাতার চারপাশে ছোট ছোট গোল খাঁজ কাটা রয়েছে, যা থেকে চারা গাছ গজায়। এছাড়া গাছের বয়স অনেক দিন হলে গাছের খাঁজ থেকে চারা গাছ জন্মায়।

পাথরকুচি পাতা মাটিতে ফেলে রাখলে অনায়াসে চারা গাছ গজায়। কাঁকর মাটিতে পাথরকুচি গাছ সহজেই জন্মায়। তবে পাথরকুচি গাছ স্যাঁতসেঁতে ও ভেজা জায়গায় খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

পাথর কুচি পাতার ছবি

পাথরকুচি গাছ বা পাথর কুচি পাতা প্রাচীন কাল থেকে ঔষধি হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। কিন্তু বর্তমানে পাথর কুচি গাছ খুব একটা দেখা যায় না বললেই চলে। যে কারণে এখনকার ঘুগের বাচ্চারা এই গাছ চিনে না। অনেকে হয়তো দাদা-দাদীর থেকে পাথর কুচি গাছের কথা শুনেছে কিন্তু কথনো দেখেনি। যারা পাথর কুচি গাছ বা পাতা চিনেন না তাদের জন্য নিচে পাথর কুচি পাতার ছবি দেওয়া হলো-

পাথর কুচি পাতার ছবি

পাথর কুচি পাতার ছবি

পাথরকুচি গাছ

পাথরকুচি গাছ

পাথরকুচি ফুল

পাথরকুচি গাছ কম বেশি সবাই চিনলেও পাথরকুচি ফুল খুব কম মানুষই দেখেছেন বা চিনেন। অনেকে হয়তো এটায় জানেন না যে পাথরকুচি গাছের ফুল ফুটে। যারা চিনেন না বা জানেন না যে পাথরকুচি ফুল দেকতে কেমন তাদের জন্য নিচে কয়েকটি ফুলের ছবি তুলে ধরা হলো-

পাথরকুচি ফুল

পাথরকুচি ফুল

পাথরকুচি ফুল

আশা করছি উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনারা পাথরকুচি পাতার উপকারিতা, অপকারিতা, খাবার নিয়ম, পাতার বৈশিষ্ট্য ও ফুল দেখতে কেমন তা বুঝতে পেরেছেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url