লিভার ক্যান্সারের কারণ, লক্ষণ, খাবার তালিকা ও চিকিৎসা

লিভার ক্যান্সার কেন হয়

সময়ের সাথে সাথে মানুষের জীবনধারায় পরিবর্তন এসেছে। সেই সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে মানুষের খাদ্য অভ্যাসে। এর ফলে দিন দিন মানুষ জটিল রোগের সম্মুখীন হচ্ছে। জটিল রোগ গুলোর মধ্যে ক্যান্সার হলো অন্যতম একটি রোগ। ক্যান্সার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন: লিভার ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সার ই্যাতাদি।

লিভারে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। লিভারের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার গুলোর মধ্যে রয়েছে হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা, হেপাটোব্লাস্টোমা ও ইন্ট্রাহেপ্যাটিক কোলাঞ্জিওকার্সিনোমা ইত্যাদি।

লিভার ক্যান্সার কেন হয়

লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা, নিয়মিত অ্যালকোহল গ্রহণ ইত্যাদি কারণে লিভার ক্যান্সার হতে পারে। নিচে লিভার ক্যান্সার হওয়ার কারণ গুলো তুলে ধরা হলো-

  1. অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে লিভার ক্যান্সার হতে পারে।
  2. লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমার ফলে লিভার ক্যান্সার হতে পারে।
  3. লিভারে জন্মগত ত্রুটি থাকলে লিভার ক্যান্সারের ঝুকি বেশি থাকে।
  4. অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ করার ফলে লিভার ক্যান্সার হতে পারে।
  5. লিভার সিরোসিসের সমস্যা থাকলে লিভার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  6. হিমোক্রোমাটোসিস বা হেমোক্রোমাটোসিস এর কারণে লিভার ক্যান্সার হতে পারে।
  7. দীর্ঘদিন ধরে পাঁচাবাসি বা ছত্রাক যুক্ত খাবার খেলে লিভার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  8. বংশের কারো যদি লিভার ক্যান্সার হওয়ার ইতিহাস থাকে, তাহলে লিভার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  9. দীর্ঘদিন হেপাটাইটিস 'সি' ভাইরাস (HCV) বা হেইটিসপাটা 'বি' ভাইরাস (HBV) এর সংক্রমণের কারণে লিভার ক্যান্সার হতে পারে।

লিভার ক্যান্সার লক্ষণ

লিভার ক্যান্সার হয়েছে কিনা তা প্রথম অবস্থায় বোঝা যায় না। তবে লিভারে ক্যান্সারের জীবাণু প্রবেশ করলে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। নিচে লিভার ক্যান্সার লক্ষণ গুলো তুলে ধরা হলো-

  1. পেট ফুলে যাওয়া
  2. ক্ষুধা কমে যাওয়া
  3. অতিরিক্ত ক্লান্ত লাগা
  4. হালকা জ্বর জ্বর ভাব থাকা
  5. বমি বা বমি বমি ভাব হওয়া
  6. ত্বক ও চোখের রং হলুদ হয়ে যাওয়া
  7. কোনো কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া
  8. পেটের উপরের দিকে ব্যথা অনুভব হওয়া

উপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলে তা অবহেলা না করে একজন লিভার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন। কেননা ক্যান্সার একটি মরণব্যাধি রোগ।

লিভার ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা

লিভার ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকায় কেমন খাবার রাখা উচিত তা নিচে আলোচনা করা হলো-

  1. কফি লিভার ক্যান্সার রোগীদের খাদ্য তালিকায় কফি রাখতে পারেন। তবে দুধ চিনি ছাড়া খেতে হবে তাও দিনে দুই বারের বেশি খাওয়া যাবে না।
  2. পানি: সুস্বাস্থ্যের জন্য পানির কোনো বিকল্প নেই। শুধু লিভারের জন্য নয় প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য পানি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পানি খাবার হজম হতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস বা ২ লিটার পানি পান করা উচিত।
  3. শস্য জাতীয় খাবার: বিভিন্ন প্রকারের ডাল ( খেসারি, মসুর, মাষকলাই ইত্যাদি) ও মটরশুঁটিতে ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা লিভারের জন্য অনেক উপকারী। এছাড়াও খাবার তালিকায় রাখতে পারেন ভাত, গমের আটা, পাস্তা ইত্যাদি।
  4. শাকসবজি ও ফলমূল: লিভার ক্যান্সার রোগীদের খাদ্য তালিকায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন এ, সি, কে সমৃদ্ধ শাকসবজি ও ফলমূল রাখতে পারেন। যেমন: পালংশাক, লাউ, অ্যাভাকাডো, ঝিঙ্গা, ব্রকলি, গাজর, কমলালেবু, আমলকি, আপেল, বেরি, তরমুজ, নাশপাতি ইত্যাদি।
  5. চর্বিহীন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার: লিভার ক্যান্সার রোগীদের খাদ্য তালিকায় চর্বিহীন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রাখতে পারেন। যেমন- মাছ, ডিম, মুরগির মাংস এবং চর্বিহীন দুধ দিয়ে তৈরি করা খাবার ইত্যাদি। কেননা চর্বিহীন প্রোটিন লিভার সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়।

লিভার ক্যান্সার রোগী কতদিন বাঁচে

আপনারা সকলেই জানেন ক্যান্সার একটি মরণব্যাধি রোগ। তবুও সকলে ক্যান্সার হলে কতদিন বেঁচে থাকা যায় সেই সম্পর্কে জানতে চান। এই সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে একজন ক্যান্সারের রোগী কতদিন বাঁচে থাকতে পারবে তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে রোগের ধরন, স্থান ও চিকিৎসার উপর।

যদি প্রথম অবস্থায় ক্যান্সার নির্ণয় করা যাই তাহলে উন্নত মানের চিকিৎসা নিয়ে একজন রোগী ৫-১০ বছর বেঁচে থাকতে পারেন। আবার কেউ কেউ ১০ বছরের বেশি সময় ধরেও বেঁচে থাকতে পারে।

ক্যান্সার প্রথম অবস্থায় ধরা পরলে তা একেবারেই নির্মূল করা সম্ভব। আবার কারো যদি ক্যান্সার ৮০% ছড়িয়ে পরে যায় তাহলে বিভিন্ন চিকিৎসার মাধ্যেমে শুধু কষ্ট কমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এমন অবস্থায় রোগী কত দিন বেচে থাকবে তা নির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়।

লিভার ক্যান্সার চিকিৎসা

লিভারে ক্যান্সারের অবস্থান, রোগীর সার্বিক অবস্থা এবং লিভারের কার্যকারিতার উপর বিবেচনা করে একটি সুনির্দিষ্ট প্রটোকলের মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু করা হয়।

  1. মেটাস্টাটিক লিভার ক্যান্সার: এক্ষেত্রে প্রথমে প্রাইমারি টিউমার নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। মেটাস্টাটিক লিভার ক্যান্সার চিকিৎসা করার আগে লিভার রিলেশনের কথা ভাবা হয়। কারণ সব ক্ষেত্র লিভার প্রতিস্থাপন বা কেমোথেরাপি ব্যবহার করা সম্ভব হয় না।
  2. লিভার রিসেকশন: লিভার রিসেকশন বলতে বুঝায় ক্যান্সারসহ লিভারের অংশ বিশেষ কেটে ফেলা। অপারেশন করার ৬-৭ সপ্তাহের মধ্যে লিভার আবার পরিপূর্ণ হয়ে যাই। এই অপারেশনটি লিভারের অবস্থা, টিউমারের অবস্থান ও বিস্তারের উপর বিবেচনা করে করা হয়ে থাকে।
  3. লিভার প্রতিস্থাপন বা ট্রান্সপ্লান্ট: লিভার প্রতিস্থাপন বা ট্রান্সপ্লান্ট একটি জটিল চিকিৎসা পদ্ধতি। লিভার প্রতিস্থাপন বলতে বুঝায় একটি অসুস্থ লিভার অপসারণ করে একটি সুস্থ লিভার প্রতিস্থাপণ করা। দাতা ও গ্রহীতার অনেক দিক বিবেচনা করে সুনির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী অপরেশনটি করা হয়। আপনি জীবিত বা মৃত যেকোনো দাতার কাছ থেকে একটি সুস্থ লিভার গ্রহণ করতে পারবেন।

এছাড়াও কিছু কিছু লিভার ক্যান্সারে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। এই ওষুধ গুলো হলো- সোরাফিনিব, রিগোরাফেনিব, লেনভাটিনিব, নিডোলুমের (ইমিউনো থেরাপি ড্রাগ) ইত্যাদি।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url