লিভার পরিষ্কার রাখার সহজ ঘরোয়া উপায় এবং টক্সিন দূর করার উপায়

লিভার পরিষ্কার রাখার সহজ ও ঘরোয়া উপায়

শরীর সুস্থ রাখতে লিভারের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ লিভার বের করে দেয়। এছাড়াও দেহের হরমোন ক্ষয় রোধ করতে লিভার বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে লিভার বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে, যার মূল কারণ হল জাঙ্ক ফুড খাওয়া, জীবনযাপনে অনিয়ম, অতিরিক্ত মদ্যপান সহ বিভিন্ন ধরনের কু-অ্যাভাস ইত্যাদি।

লিভার পরিষ্কার রাখার সহজ ও ঘরোয়া উপায়

বিপাকীয় অঙ্গ গুলোর মধ্যে লিভার অন্যতম। লিভারে বিষাক্ত পদার্থ জমলে বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে, ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই শরীর সুস্থ রাখতে হলে লিভারকে আবশ্যয় পরিষ্কার রাখতে হবে। তাহলে চলুন লিভার পরিষ্কার করার উপায় গুলো জেনে নেওয়া যাক।

লিভার পরিষ্কার করার উপায় গুলো নিচে তুলে ধরা হলো-

  1. আপেল: আপেল আমাদের শরীরের জন্য খুবি উপকারি একটি ফল। এতে থাকা পেকটিন ও ফাইবার পরিপাক নালী থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও আপেলে থাকা উপাদানগুলো রক্ত থেকে কোলেস্টেরল দূর করে, ফলে লিভার সুস্থ থাকে। তাই লিভার পরিষ্কার রাখতে প্রতিদিন অন্ততপক্ষে একটি করে আপেল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
  2. পানি: কিডনি ও লিভার পরিষ্কার করতে পানি কোন বিকল্প নেয়। তাই বলে আতিরিক্ত পানি পান করবেন না। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করলেই যথেষ্ঠ।
    • ডিটক্স ওয়াটার লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এর জন্য এক গ্লাস পানিতে শসা, লেবুর স্লাইস, কিছু পুদিনা পাতা এবং আদার টুকরো সারা রাত ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে সেই পানি খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  3. রসুন: রসুন লিভার পরিষ্কার করতে বেশ কার্যকারী। এতে থাকা সেলেনিয়াম ও এলিসিন লিভার পরিষ্কার করে এবং লিভার থেকে টক্সিক দূর করতে সাহায্য করে। রসুন রান্না করে বা কাচাও খেতে পারেন, তবে কাঁচা রসুন খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
  4. গ্রিন টি: শরীর সুস্থ রাখতে প্রতিদিন ১ কাপ করে গ্রিন টি খেতে পারেন। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন গ্রিন টি খাওয়ার পরামর্শ দেয়। এতে করে লিভার থেকে বিষাক্ত পদার্থ এবং অতিরিক্ত ফ্যাট দূর হয়ে যাই।
  5. সবুজ শাক-সবজি: সকল প্রকারের সবুজ শাক সবজিতে ক্লোরোফিল রয়েছে, যা রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া নিয়মিত সবুজ শাক সবজি খেলে শরীরে জমে থাকা রাসায়নিক পদার্থ ও প্র্যাসটিসাইড দূর হয়ে যায়। ফলে লিভার ভালো থাকে।
  6. লেবু: লেবুতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট লিভার পরিষ্কার করতে বেশ কার্যকারী। লেবুতে থাকা ভিটামিন সি অধিক মাত্রায় এনজাইম তৈরি করে, যা খাবার হজম হতে সাহয্য করে। এছাড়া লেবুতে লিমোনেন রয়েছে, যা লিভারে এনজাইম সক্রিয় করে তোলতে সাহায্য করে। লেবুতে আরো অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। যেমন- মিনারেল রয়েছে, যা লিভারের পুষ্টি শোষণ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এই সকল উপকারিতা পেতে প্রতিদিন সকালে ১ গ্লাস লেবু পানি খেতে পারেন। আরো ভালো ফলাফল পেতে লেবু পানির সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।

যে খাবারগুলো খাওয়া উচিত নয় তা হলো-

  1. লবণ ও চর্বিযুক্ত খাবার: লবণ ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। কেননা এতে থাকা উপাদানগুলো লিভারের জন্য অনেক ক্ষতিকর। তাই লবণ ও চর্বিযুক্ত খাবার না খেয়ে এর বদলে বাদাম, আখরোট, চিয়া বীজ, ফ্লেক্স বীজ, কুমড়ার বীজ, ওটস ইত্যাদি খেতে পারেন।
  2. স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার: যেসব খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি পরিমাণে থাকে সেই সকল খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন- মাখন যুক্ত দুধ, মাটন, মুরগির চামড়া ইত্যাদি। এই খাবার গুলো অতিরিক্ত খেলে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  3. ভাজাপোড়া খাবার: বাইরের ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন- সিঙ্গারা, বার্গার, সমুচা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, পিয়াজি, ডাল পুরি ইত্যাদি।
  4. মদ্যপান ও ধূমপান: মদ্যপান ও ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করতে হবে। এমনকি মাঝেমধ্যেও মদ পান করা যাবে না।
  5. ময়দা ও চিনিযুক্ত খাবার: ময়দা ও চিনি যুক্ত খাবার খুব অল্প পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। কারণ এগুলো লিভারের জন্য মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। কেননা এই খাবারগুলো খেলে লিভারে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পেতে পারে।
  6. প্যাকেটজাত খাবার: প্যাকেটজাত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। কেননা প্যাকেটজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণে লবণ ও চিনি থাকে, যা লিভারের জন্য ক্ষতিকর। যেমন- চিপস, বেকড ফুডস ইত্যাদি।

লিভারের টক্সিন দূর করার উপায়

লিভার থেকে টক্সিন দূর করতে সবাই মনে করে ওষুধ সেবন করা প্রয়োজন। তবে এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো নিয়মিত খেলে তা লিভার থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করবে। নিচে লিভারের টক্সিন দূর করার উপায় গুলো তুলে ধরা হলো-

  1. হলুদ: হলুদে অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট লিভার থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। ফলে লিভার টক্সিন থেকে মুক্তি পায়।
  2. ক্রুসিফেরাস সবজি: ক্রুসিফেরাস শাকসবজিতে গ্লুকোসিনোলেট নামক উপাদান রয়েছে, যা লিভারে প্রকৃতিকভাবে এনজাইম তৈরি করে এবং লিভার থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
    • ব্রোকলি, ব্রাসেলস স্প্রাউট, ফুলকপি, কেল ও বাঁধাকপি ইত্যাদি খাবার গুলোই হলো ক্রুসিফেরাস সবজি।
  3. সাইট্রাস ফল: সাইট্রাস জাতীয় ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা লিভার থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সহায়তা করে। তাই কিশমিশ থেকে শুরু করে নানা প্রকারের লেবু খেতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে লেবু বেশ কার্যকারী। কেননা এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা লিভারের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  4. চর্বিযুক্ত মাছ: বেশিভাগ সামুদ্রিক খাবার লিভার পরিষ্কার বা ডিটক্স করতে সাহায্য করে। সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে। তাই স্যামন, সার্ডিন, ট্রাউট, টুনা ইত্যাদি মাছ নিয়মিত খেলে লিভারের প্রদাহ ও চর্বি কমাতে সাহায্য করবে। গাবেষণায় দেখা গেছে এই মাছগুলো লিভারের এনজাইম ঠিক রাখে এবং লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমতে দেয় না।
  5. অলিভ অয়েল তেল: অলিভ অয়েল তেল বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর। এটি লিভারের কিছু এনজাইম বাড়িয়ে দেয় এবং লিভার থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। রান্নায় ও বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরিতে তেলটি ব্যবহার করতে পারেন।
  6. অ্যাভোকাডো: অ্যাভোকাডো নামক ফলকে সুপার ফুড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই ফলটি শরীরের গ্লুটাথিয়ন বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে, যা লিভার থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url