আখরোটের উপকারিতা, অপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম এবং দাম

আখরোট এর উপকারিতা ও অপকারিতা

আখরোট ফলটি অনেকেই চিনেন না। আবর অনেকে নাম শুনেছেন দেখেছেন কিন্তু খাননি। আবার অনেকে এক দুইবার খেয়েছেন, কিন্তু এর উপকারিতা, অপকারিতা কি, কিভাবে খেলে ভালো হয় বা এর দাম কত কিছুই জানেন না। আপনি যদি আখরোট সম্পর্কে এই সব তথ্য জানতে চান তাহলে দেরি না করে সম্পূর্ন লেখাটি এক নজরে দেখে নিন উপকৃত হবেন।

আখরোট কি

আখরোট মূলত এক প্রকারের বাদাম জাতীয় ফল। ফলটি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং খেতেও বেশ সুস্বাদু। এই ফলে প্রচুর পরিমানে আমিষ ও অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি আসিড রয়েছে।

ফলটি দেখতে গোলাকার। এর ভিতরে একটি মাত্র বীজ থাকে (বীজটি দেখতে অনেকটা আমাদের মাথার ভিতরে থাকা মস্তিষ্কের আকৃতির মতো)। পাকা ফলের বাইরের খোসা ফেলে দিলে তার ভিতরে শক্ত খোলসযুক্ত বীজটি পাওয়া যায়। খোলসের ভিতরে দুইভাগে বিভক্ত বাদাম থাকে এবং তার উপরে বাদামি রঙের আবরন থাকে যা এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।

আখরোট এর উপকারিতা ও অপকারিতা

বাদাম খেতে কম বেশি সবাই পছন্দ করেন, আর যারা বাদাম খেতে পছন্দ করেন তাদের কাছে খুবি পরিচিত একটি নাম হলো আখরোট ফল। আবার অনেকে আখরোটে ফ্যাট রয়েছে মনে করে এই ফলটি এড়িয়ে চলেন, তবে এটা ভূল ধারণা। আখরোটে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, প্রোটিন ও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের উপকার করে থাকে। নিচে আখরোট এর উপকারিতা ও অপকারিতা সমূহ তুলে ধরা হলো-

আখরোট এর উপকারিতা

আখরোট এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিয়মিত আখরোট খেলে হৃদরোগ, ক্যান্সার সারানোর পাশাপাশি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। বাজারে কালো ও বাদামি দুই ধরনের আখরোট পাওয়া যায় এবং এই দুটিই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। নিচে আখরোট এর উপকারিতা সমূহ তুলে ধরা হলো-

  1. মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে: মস্তিষ্কের বিকাশে নিয়মিত আখরোট খেতে পারেন। কারণ আখরোট এ "ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড" রয়েছে, যা মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে থাকে।
  2. হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে: যাদের হাড় দুর্বল তারা নিয়মিত আখরোট খেতে পারেন। কারণ এতে আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড নামে একটি প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড ও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা হাড়কে শক্ত ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  3. দাতেঁর স্বাস্থ্য উন্নত করে: আখরোটে স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে এটি দাঁতকে ভালো বা সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  4. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা খাবারের তালিকায় আখরোট রাখতে পারেন। কারণ অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৩ থেকে ৪টি করে আখরোট খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আখরোট বেশ উপকারী ফল।
  5. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত আখরোট খেতে পারেন। কারণ আখরোটে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ইমিউন সিস্টেমকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও আখরোটে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।
  6. ওজন কমাতে সাহায্য করে: আখরোটে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক ও কপার রয়েছে। যে কারণে নিয়মিত আখরোট খেলে বিপাক কাজ ভালোভাবে সম্পূর্ন হয় যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও আখরোটে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, ফাইবার দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরা অনুভূত করাতে সাহায্য করে। ফলে বেশি খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
  7. ভালো ঘুমে সাহায্য করে: যাদের অনিদ্রার সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আখরোট খেলে উপকার পাবেন। কারণ আখরোট মেলাটোনিন নামক একটি উপাদান রয়েছে, যা ভালো ঘুম হওয়ার জন্য সাহায্য করে। এছাড়াও এতে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং স্ট্রেস উপশম করে, ফলে ঘুম ভালো হয়।
  8. মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে: ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ আখরোট ফল মানসিক চাপ ও হতাশা কমাতে সাহায্য করে। যে কারণে নিয়মিত আখরোট খেলে মুড ভালো থাকে।
  9. হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে: সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করার জন্য হৃদযন্ত্র বা হার্ট ভালো রাখার বিকল্প নেই। আখরোটে থাকা "ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড" কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের জন্য উপকারী। যে কারণে প্রতিদিন কয়েকটি করে আখরোট খেলে, তা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদযন্ত্র ভালো রাখে।
  10. কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে: নিয়মিত আখরোট খেলে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায় এবং ভালো কোলেস্টেরলের সংখ্যা বাড়াতে থাকে।
  11. গর্ভবতী নারীদের জন্য উপকারিতা: গর্ভবতী নারীদের জন্য আখরোট খুবই উপকারী একটি ফল। এই সময় নিয়মিত আখরোট খাওয়া গর্ভবতী মা এবং গর্ভের সন্তান উভয়ের জন্য উপকারী। কারণ আখরোটে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (ফোলেট, রাইবোফ্লাভিন এবং থায়ামিন) রয়েছে, যা গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও আখরোটে ফলিক এসিড রয়েছে যা গর্ভবতী মা এবং গর্ভের সন্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ন।
  12. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে: ক্যান্সার একটি মরণঘাতী রোগ, এর থেকে দূরে থাকতে নিয়মিত কয়েকটি করে আখরোট খান। আখরোটে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এর সাথে সাথে পলিফেনল এবং ইউরোলিথিন অ্যান্টি-ক্যান্সারের উপদান রয়েছে। যে কারণে আখরোট খেলে স্তন, কোলন এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়ার ঝুকি কমে যায়। "আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চ" ডিপার্টমেন্টের মতে, আখরোট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।

নোট: একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের নিয়মিত ৫টির বেশি আখরোট খাওয়া ঠিক নয়। নিয়মিত ৫টির বেশি আখরোট খেতে থাকলে তা শরীরের জন্য মোটেও উপকারী নয়, বরং ক্ষতিকর বলেই অভিমত দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

আখরোট এর অপকারিতা

প্রয়োজনের থেকে বেশি কোন খাবার খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে শরীরে অতিরিক্ত পুষ্টি উপাদান তৈরি হয় যার সামঞ্জস্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে, ফল সরূপ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। অতিরিক্ত আখরোট খেলে কিছু সমস্যা বা অপকারিতা দেখা দিতে পারে। নিচে আখরোট এর অপকারিতা সমূহ তুলে ধরা হলো-

  1. অতিরিক্ত আখরোট খাওয়ার ফলে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে।
  2. অতিরিক্ত আখরোট খাওয়ার ফলে লিভারের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  3. কালো আখরোটে "ফাইটেটস" নামক একটি উপাদান রয়েছে, যা শরীরের আয়রন শুষে নিতে পারে। যার ফলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি হতে পারে।
  4. অনেকের আখরোটে অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে। তারা আখরোট খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করে তারপর খাবেন।

আখরোট খাওয়ার নিয়ম

সাধারণত আখরোট খাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম কানুন নেই। যে কোন সময় যে কোনো ভাবে আখরোট খাওয়া যেতে পারে। তবে পুষ্টিবিদদের মতে, আখরোট সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে খেলে বেশি উপকারিতা পওয়া যায়। তাই প্রতিদিন রাতে ২ থেকে ৪ টি আখরোট পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং পরের দিন সকালে খালিপেটে তা খেয়ে নিন।

  1. এছাড়াও শুকনো আখরোট খাওয়ার সময় একটু তেতো লাগে, কিন্তু পানিতে ভিজিয়ে খেলে এই তেতো ভাবটা আর থাকে না এবং স্বাধ আরো ভাল হয়। তাছাড়া ভেজানো আখরোট খেতেও অনেকটা সহজ হয়।
  2. পুষ্টিবিদদের মতে, আখরোট খেলে শরীর গরম হয়ে যায়, যে কারণে গরম কালে পানিতে ভিজিয়ে খেলে তা শরীরের জন্য ভালো।
  3. যদি রাতে আখরোট পানিতে ভেজাতে ভুলে যান তাহলে যে কোন সময় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে তার পর খেয়ে নিন।
  4. পানির পরিবর্তে দুধ বা মধুর সাথে মিশিয়ে আখরোট খেতে পারেন।
  5. আবার তেল ছাড়া হালকা করে ভেজে খেতে পারেন আখরোট।

নোট: অনেকেই হয়তো ভাবছেন সকালে খালি পেটে আখরোট খাওয়া ঠিক হবে না। তাদেরকে বলব আপনি ভুল ভাবছেন। কারণ পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, নিয়মিত সকালে খালিপেটে আখরোট খেলে হার্টের অসুখ, ক্যান্সার, স্নায়ুগত সমস্যা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহ নানা রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। তাহলে তো বুঝতেই পারছেন খালি পেটে আখরোট খেলে কোন ক্ষতি নেয়।

আখরোট এর দাম কত

আখরোট উৎপাদন বাংলাদেশে অনেক কম হয় বা একদমই চাষ করা হয়না বললেও ভূল হবে না। যে কারণে আখরোট এর দাম আনান্য বাদাম জাতীয় ফলের থেকে অনেক বেশি। আখরোট শহরের যেকোনো বড় মুদির দোকানে খোঁজ করলে পেয়ে যাবেন। সেখানে না পেলে বিশ্বস্ত কোনো অনলাইন শপিং প্লাটফর্ম (যেমন: daraz.com) থেকে কিনতে পারেন।

  • ১০০ গ্রামের দাম ১৫০ থেকে ১৯০ টাকা
  • ২৫০ গ্রামের দাম ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা
  • ৫০০ গ্রামের দাম ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা
  • ১ কেজির দাম ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা

বি:দ্র: আখরোট একটি বিদেশি ফল, এটি বাহিরের দেশ থেকে আমাদের দেশে আমদানি করতে হয়। যে কারণে উপরে উল্লেখিত দাম বাজারের পরিস্থিতি ও মানের উপর ভিত্তি করে কম বেশি হতে পারে।

আখরোট গাছ

আখরোট গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হলো "জুগ্লান্স রেজিয়া (Juglans regia)" যা জুগল্যান্ডাসি গোত্রের পর্ণমোচী বৃক্ষ। এই গাছ সাধারণত ৩০ থেকে ১৩০ ফুট (১০ থেকে ৪০ মিটার) পর্যান্ত লম্বা হয়ে থাকে।

আখরোট গাছে পালকের ন্যায় বহুধাবিভক্ত পাতা থাকে। পাতা গুলো সাধারণত ৭ থেকে ৩৫ ইঞ্চি (২০০ থেকে ৯০০ মিলিমিটার) দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট হয়ে থাকে। অনেকটা একই গোত্রের উইংনাট গাছের মত, তবে কড়ই গাছের মত নয়।

আখরোট গাছ

আখরোট গাছের ছবি

আখরোট গাছ এর পিক
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url