বিটরুট কি, খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা ও দাম কত?

বিটরুট খাওয়ার নিয়ম

বিটরুট আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি সবজি। কিন্তু বিটরুট নামের লালচে গোলাপী বা গাঢ় গোলাপী রঙের এই সবজিটি বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ এখনো চেনেন না। অনেকে হয়তো বাজারে এই সবজিটি দেখছেন, তবে চিনেন না বিধায় কখনো কিনে খায় নি। কারণ তারা বিটরুটের উপকারিতা বা এর মধ্যে থাকা পুষ্টিগুন সম্পর্কে এখনো অবগত নয়।

আপনিও যদি বিটরুট সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই পোষ্টি আপনার জন্য। কারণ আজকের এই পোষ্টে বিটরুট কি, খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা ও দাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

আশা করছি যারা যারা এই লেখাটি পরবেন তারা তখন থেকেই বিটরুট খাওয়া শুরু করবেন। চলুন তাহলে নিচ থেকে বিটরুট সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

বিটরুট কি

বীট গাছের মূল অংশকে বিটরুট বলা হয়। মূলত বিটরুট হলো একটি সবজির নাম, যা কাঁচা বা রান্না দুই ভাবেই খাওয়া যায়। তবে রান্না করে না খেয়ে যদি কাঁচা খেতে পারেন তাহলে উপকারিতা অনেক বেশি পাবেন।

এছাড়াও বিটরুট স্যুপের সাথে মিশিয়ে বা জুস, সালাদ এবং স্মুদি করে খেতে পারেন। সবজিটি রোগমুক্ত শরীর গড়তে সুপার ফুড হিসেবে কাজ করে। বিটরুট এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে, যা আমাদের শরীরের জন্য অনকে উপকারি। পুষ্টিকর উপাদান গুলো হলো জিংক, আয়োডিন, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার, নাইট্রেট, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফোলেট ও ভিটামিন সি।

বিটরুট খাওয়ার নিয়ম

বিটরুট খাওয়ার জন্য আলাদা করে কোনো নিয়ম বা সময় নেই। এটি আনান্য সবজির মতো রান্না করে থেকে পারেন। আবার চাইলে কাচা ও খেতে পারেন। নিচে বিটরুট খাওয়ার নিয়ম সমূহ তুলে ধরা হলো-

  1. বিটরুট হালকা সিদ্ধ করে খেতে পারেন।
  2. যেকোনো সবজির সাথে মিশিয়ে রান্না করে খেতে পারেন।
  3. ব্লেন্ডার মেশিনের সাহায্যে জুস বানিয়ে খেতে পারেন।
  4. যারা সালাদ খেতে পছন্দ করেন তারা সালাদ হিসেবে খেতে পারেন।
  5. যেকোনো স্যুপের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  6. বিটরুটের স্মুদি বানিয়ে খেতে পারেন।
  7. চাইলে বিটরুটের পাতাও ভাজি করে খেতে পারেন।
  8. ফাস্টফুড জাতীয় খাবারে বিটরুট ব্যবহার করতে পারেন।
  9. বিটরুট শুকিয়ে গুড়া করে পাউডার বানিয়ে খেতে পারেন।
  10. নুডুলস বা পাস্তার ভিতরে অন্যান্য সবজির বদলে বা অন্যান্য সবজি সাথে মিশিয়ে রান্না করতে পারেন।
  11. ডালিম, টমেটো, আপেল ও গাজর এই সবজি গুলোর মধ্যে যেকোনো একটি সবজির সাথে মিশিয়ে জুস বানিয়ে খেতে পারেন।

নোট: বিটরুট কাচা খান বা রান্না করে খান, তবে সবজিটি খোসা ছাড়িয়ে খেতে হবে।

বিটরুট এর উপকারিতা

আমাদের দেশের মানুষের কাছে বিটরুট দিনে দিনে প্রিয় হলে উঠছে। কারণ বিটরুট খেতে অনেক সুস্বাদু (যে কারনে ছোট বড় সবাই খুব পছন্দ করে), তার পাশাপাশি বিভিন্ন পুষ্টিগুনে ভরপুর। নিয়মিত বিটরুট খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। নিচে বিটরুট এর উপকারিতা গুলো তুলে ধরা হলো-

  1. উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য বিটরুট অনেক উপকারি। কেননা এতে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রেট রয়েছে, যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তনালী প্রসারিত করে। এছাড়াও রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে তা কমিয়ে দিতে সাহায্য করে।
  2. বিটরুটে টালাইন নামক একটি উপাদান রয়েছে, যা প্রদাহ সৃষ্টিকারী রোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
  3. ফাইবার যুক্ত একটি খাবার হলো বিটরুট। ফাইবার যুক্ত খাবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  4. বিটরুটে লুটেইন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা চোখের সমস্যার ঝুঁকি কমায়।
  5. বিটরুটে থাকা বিটেইন লিভারে চর্বি জমতে দেয় না এবং সহজেই শরীর ডিটক্সিফাই করে।
  6. বিটরুটে থাকা পুষ্টি উপাদান ত্বককে সুন্দর রাখে এবং বলিরেখা দূর করতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
  7. বিটরুটে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে এবং রক্তশূন্যতার ঝুঁকি কমাতে সাহ্যায্য করে।
  8. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে বিটরুটের জুস খেতে পারেন।
  9. ডাইভার্টিকুলাইটিস এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে বিটরুট বেশ কার্যকারি।
  10. রক্তে যদি কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায় তাহলে তা কমাতে বিটরুটের জুস বেশ কার্যকারি।

গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। গর্ভবতী মা ও গর্বের বাচ্ছার সুস্থতার জন্য নিয়মিত বিটরুট খাওয়া জরুলি। নিচে গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা গুলো তুলে ধরা হলো-

  1. অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি কমায়: গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের অ্যানিমিয়া ঝুঁকি থাকে। তবে এই সময় নিয়মিত বিটরুট খেলে অ্যানিমিয়া ঝুঁকি কমে যায়। কারণ বিটরুট এ প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে, যা রক্তে লোহিত কণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়, ফলে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা কমে যায়।
  2. অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমায়: গর্ভবতী নারীদের অস্টিওপোরোসিস ঝুঁকি বেশি থাকে। অস্টিওপোরোসিস এর মানে হলো হাড় দুর্বল এবং ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত বিটরুট খাওয়া জরুরি। কেননা এতে ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা হাড় ও দাঁতকে মজবুত করতে সহায়তা করে।
  3. যকৃত / লিভার উন্নীত করে: বিটরুট এর মধ্যে থাকা বিটাসায়ানিন "যকৃত / লিভার এবং রক্তকে" বিষমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও দেহ থেকে ফ্যাটি এসিড এবং বিষাক্ত পদার্থ দূর করে স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করে।
  4. প্রদাহ রোধ করা: বিটরুটের ভিতরে টালাইন নামক এক ধরনের প্রদাহ রোধী এন্টিজেন রয়েছে। যা গর্ভাবস্থায় জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা হওয়া বা ফুলে ওঠা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  5. প্রি-এক্লাম্পসিয়া ঝুঁকি কমায়: বিটরুট রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, ফলে গর্ভবতী নারীদের প্রি-ইক্ল্যাম্পসিয়ার ঝুঁকি কমে।
  6. অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি করে: বিটরুট থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো অনাক্রম্যতা উন্নত করে এবং গর্ভাবস্থায় সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করে।
  7. ওজন কমানো: গর্ভাবস্থায় অনেকর অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাই। এই অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য খাদ্য তালিকায় বিটরুট রাখতে পারেন।
  8. নিউরাল টিউবের ত্রুটি প্রতিরোধ করে: বিটরুটের ভিতরে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড রয়েছে, যা শিশুর বিকাশ জনিত সমস্যার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও ভ্রূণের সঠিক বৃদ্ধি এবং বিকাশে সাহায্য করে।

বিটরুট এর দাম কত

আমাদের দেশে বিটরুট সচরাচর পাওয়া যায় না। তাই এর দাম কোথায় বেশি আবার কোথায় কম। তবে বর্তমানে আমাদের দেশের চাষীরা বিটরুট চাষ করছেন, তাদের কাছ থেকে কিনলে একটু কম টাকায় কিনতে পারবেন।

আমাদের দেশের চাষীদের কাছ থেকে বিটরুট কিনলে এক কেজি ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা দরে পেয়ে যাবেন। আবার কেউ যদি অনলাইনের কোনো পেজ থেকে কিনতে চান তাহলে সেখান থেকেও কিনতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ৬০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮৫০ টাকার মধ্যে বিটরুট পেয়ে যাবেন।

তবে বিটরুটের গুণ এবং মানের উপর ভিত্তি করে উপরে উল্লেখিত দামের থেকে কম বেশি হতে পারে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url