অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানুন
নারীদের জীবনে অনিয়মিত মাসিক একটি প্রচলিত সমস্যা। এই সমস্যার কারণে বিবাহিত মেয়েদের গর্ভধারণ করতে সমস্যা হয়। ফলে বিবাহিত জীবনে শুরু হয় অশান্তি, এমনকি বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত হয়ে থাকে। আপনিও যদি অনিয়মিত মাসিকের সমস্যায় ভুগেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কারণ আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করব। আশা করছি সবাই উপকৃত হবেন।
অনিয়মিত মাসিকের কারণ ও প্রতিকার
সাধারণত একজন নারীর পিরিয়ড বা মাসিক ২৮ দিন পরপর হয়ে থাকে। ২৮ দিনের সাত দিন পরে বা আগে অর্থাৎ ২১-৩৫ দিনের মধ্যে হলে এবং তা যদি নিয়মিত ব্যবধানে হয়ে থাকে, তখন তাকে স্বাভাবিক মাসিক ধরা হয়। তবে ২১ দিনের আগে বা ৩৫ দিনের পরে যদি হয় এবং তা ৩ দিনের কম থাকে অথবা ৭ দিনের বেশি সময় থাকে তাহলে তাকে অনিয়মিত মাসিক বলা হয়। এই অনিয়মিত মাসিক হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে অনিয়মিত মাসিক মানেই যে ভয় পেতে হবে বিষয়টা এমন নয়। কারণ সমস্যা থাকলে তার সমাধানও থাকে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে-
অনিয়মিত মাসিকের কারণ
অনিয়মিত মাসিক বিভিন্ন কারণে হতে পারে। নিচে সেইসব কারণগুলো তুলে ধরা হলো-
- শরীরে প্রোজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন হরমোনের তারতম্য
- জরায়ুতে ক্যান্সার বা টিউমার হওয়া
- মানসিক চাপ
- থাইরয়েডের সমস্যা
- প্রি মেনোপজের সময়ে
- শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া
- হঠাৎ করে শরীরের ওজন কমিয়ে ফেলা
- শরীরের রক্তের পরিমাণ কম থাকা
- শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো
- অতিরিক্ত মাত্রায় শরীরচর্চা করা
- বিবাহিত মেয়েরা হঠাৎ করে জন্ম নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া
- সহবাসের সময় পুরুষের শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের যৌনবাহিত রোগ (যেমন- সিফিলিস, গনোরিয়া ইত্যাদি) আশা।
অনিয়মিত মাসিকের প্রতিকার
একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর নিয়মিত মাসিক বা পিরিয়ড হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে হঠাৎ করে যদি মাসিক অনিয়মিত হয়ে যায়, তাহলে তার প্রতিকার করতে হবে। নিচে ঘরোয়া পদ্ধতিতে কয়েকটি প্রতিকারের উপায় তুলে ধরা হলো-
- আদা: ১ কাপ পানিতে ২ চা চামচ আদা কুচি নিয়ে ৫-৭ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এই ফুটানো পানিটি তিনবেলা খাবার খাওয়ার পরে পান করুন। এভাবে ১ মাস পান করলে মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং অনিয়মিত মাসিক থেকে মুক্তি পাবেন।
- ধনেগুঁড়া: যারা অনিয়মিত মাসিকের সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য ধনে গুঁড়া অনেক উপকারি। কারণ এতে রয়েছে এমেইনাগোগ নামক একটি ঔষধি উপাদান, যা ঋতুস্রাব বা মাসিক নিয়মিত করতে সাহায্য করে।
- ১ চা চামচ ধনেগুঁড়া ২ কাপ পানিতে ফুটিয়ে নিন। পানি ফুটে ১ কাপ পরিমাণে হয়ে গেলে ছেঁকে নামিয়ে ফেলুন। পিরিয়ডের দিন এগিয়ে আসার কিছুদিন আগে থেকে প্রতিদিন তিনবার করে এই পানিটি পান করুন।
- মৌরি: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মৌরি পানিতে ফুটিয়ে সুগন্ধি চায়ের মতো করে খেলে অনিয়মিত মাসিক থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাব। এছাড়াও প্রতিদিন রাতে ১ গ্লাস পানিতে ২ চা চামচ মৌরি ভিজিয়ে রেখে তা পরের দিন সকালে পান করুন উপকার পাবেন।
- অ্যালোভেরার শরবত: পরিমাণ মতো অ্যালোভেরার নিয়ে তার সাথে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে সকালের খাবার খাওয়ার আগে খেলে মাসিকের সমস্যা কমে আসবে। কারণ অ্যালোভেরার রসে এমেইনাগোগ নামক একটি উপাদান রয়েছে। যা নিয়মিত মাসিক হতে সাহায্য করে।
- আজওয়াইন: আজওয়াইন মাসিক চক্র দ্রুত করার সাথে সাথে এই সময়ে হওয়া অস্বস্তি এবং পেটে ব্যথা দূর করতে সহায্য করে। ১ চা চামচ আজওয়াইন দানা ১ গ্লাস পানিতে ফুটিয়ে নিন। ফুটানো পানির সাথে ১ চা চামচ গুড় মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
১৫ দিন পর পর বা ঘন ঘন মাসিক হওয়ার কারণ
১৫ দিন পর পর বা ঘন ঘন মাসিক হওয়ার সমস্যা বা কারণ সমূহ নিচে তুলে ধরা হলো-
- কেউ যদি হঠাৎ করে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া শুরু করে বা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া বাদ দিয়ে দেয় তাহলে এমন হতে পারে। এটি মূলত হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হয়ে থাকে। আবার যখন হরমোনের ভারসাম্যতা ফিরে আসবে তখন মাসিকের এই সমস্যা ঠিক হয়ে যায়। কারণ এটা একটি অস্থীয় সমস্যা।
- থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিলে এমন হতে পারে।
- অস্বাভাবিক গর্ভপাত বা মিসক্যারেজ হলেও এই সমস্যাটি দেখা দিতে পারে।
- জরায়ুতে ক্যান্সার বা টিউমার হওয়ার কারণেও সমস্যাটি দেখা দিতে পারে।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেব-
১৫ দিন পর পর করে একটানা তিন মাস হলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করতে হবে। এছাড়াও ঘন ঘন মাসিকের সাথে যদি নিচের উল্লেখিত সমস্যা গুলো থাকে তাহলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করেন-
- ভারী রক্তপাত,
- বমি বমি ভাব,
- জ্বর,
- মাথা ঘোরা,
- কান্তি,
- তীব্র পেট ব্যথা।
দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ
পর পর দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণগুলো নিচে তুলে ধরা হলো-
- রক্তস্বল্পতা থাকলে
- থাইরয়েড সমস্যা থাকলে
- হরমোনের ভারসাম্যহীনতা হলে
- শরীরে পুরুষ হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে
- প্রি মেনোপজের সময় হলে
- পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হলে
- শারীরিক পরিশ্রম কম করলে
- অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পেলে বা ওজন হ্রাস পেলে
- অতিরিক্ত টেনশনের কারণে
- প্রারম্ভিক গর্ভাবস্থা হলে
- ক্যাফেইন জাতীয় খাবার গ্রহণের করলে
- অত্যধিক ব্যায়াম করলে
- অতিরিক্ত চিনি এবং চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে
- ধূমপান বা মদ্যপান করার অভ্যাস থাকলে
- জরায়ুর পলিপ, জরায়ুর প্রদাহ, ফাইব্রয়েড টিউমার ও এন্ডোমেট্রোসিস রোগ হলে।