গর্ভাবস্থায় ব্যায়ামের নিয়ম

গর্ভাবস্থায় ব্যায়ামের নিয়ম

গর্ভাবস্থায় যদি আপনি নিয়মিত ব্যায়াম করেন তবে আপনার সিজারিয়ান অপারেশনের সম্ভাবনা কমে গিয়ে নরমাল ডেলিভেরি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। এছাড়াও গর্ভকালীন সময় ফিটনেস ধরে রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত ব্যায়াম করায় নানারকম জটিলতার সম্ভাবনা কমে আসে এবং শরীর ও মন প্রফুল্ল থাকে। তবে কারো যদি শারীরিক জটিলতা বা কোনো সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে ভিন্ন।

আমরা আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানাব গর্ভাবস্থায় কোন ধরনের ব্যায়াম করা উচিত?, ব্যায়াম করার সময় কোন সমস্যাগুলো দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং ঘরে বসে কোন কোন ব্যায়াম করা যায়?

গর্ভাবস্থায় কেন ব্যায়াম করা উচিত ?

গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে নানা রকম উপকার হয়ে থাকে। যেমন:

  • গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত ওজন বাড়ার সমস্যা প্রতিরোধ করে।
  • পেশি শক্তিশালী করার মধ্যেমে কোমর ব্যথার পাশাপাশি গর্ভকালীন সময়ে হওয়া বিভিন্ন ধরনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  • গর্ভকালীন জটিলতা কমাতে সাহায্য করে। যেমন: গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ও প্রি-এক্লাম্পসিয়া।
  • সিজারিয়ান অপারেশনের সম্ভাবনা কমায় এবং নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে।
  • মন মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • ডেলিভারির পরে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে।
  • শরীরের কর্মদক্ষতা ও শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায় কতক্ষণ ধরে ব্যায়াম করা উচিত?

গর্ভবতী নারীদের জন্য সপ্তাহে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট 'অ্যারোবিক' ব্যায়াম করাকে আর্দশ বলে ধরা হয়। আপনি যদি এই লক্ষ্য মাত্রায় পৌছাতে চান তাহলে সপ্তাহে পাঁচ দিন ৩০ মিনিট করে 'অ্যারোবিক' ব্যায়াম করতে পারেন। এছাড়াও প্রতিদিন ১০ মিনিট ধরে ভাগ করে 'অ্যারোবিক' ব্যায়াম করতে পারেন। তবে এই রুটিন পুরোপুরি র্নিভর করে আপনার স্বাচ্ছন্দ্যের ওপর।

গর্ভাবস্থায় কোন ধরনের ব্যায়াম করা উচিত?

গর্ভবতী নারীদের জন্য 'অ্যারোবিক' শরীরচর্চাকে আর্দশ শরীরচর্চা হিসেবে ধরা হয়। এই 'অ্যারোবিক' শরীরচর্চাকে আবার কার্ডিও' বলা হয়। অ্যারোবিক শরীরচর্চায় হাত ও পায়ের পেশিগুলোকে নিদিষ্ট ছন্দে নাড়াচড়া করতে হয়। এতে করে হৃদস্পন্দন বা হার্ট রেট বেড়ে যায়। আর অ্যারোবিক ব্যায়ামগুলো হলো- বাগান করা, নাচ করা, সাঁতার কাটা, দ্রুত হাঁটা ও সাইকেল চালানো। গর্ভকালীন সময় এই সকল ব্যায়াম বেছে নিতে পারেন।

অ্যারোবিক' ব্যায়ামের পাশাপাশি আপনি আরো অনেক ব্যায়াম করতে পারেন। এতে করে শরীরের শক্তি বাড়াতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে। যেমন- পিলাটেস (Pilates), আপার বডি এক্সারসাইজ, তাই-চি ও ইয়োগা। এই ব্যায়ামগুলো অ্যারেবিক ব্যায়ামের পাশাপাশি সপ্তাহে কয়েকবার করতে পারেন। তবে ব্যায়াম করার আগে অবশ্যই গাইনি ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।

গর্ভবতী হওয়ার আগে থেকে ব্যায়াম করার অভ্যাস না থাকলে কীভাবে শুরু করবেন?

আপনার যদি গর্ভধারণের আগে থেকে ব্যায়াম করার অভ্যাস না থাকে তাতে কোনো সমস্যা নেই। গর্ভকালীন সময়ে আপনি ব্যায়াম শুরু করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ধীরে ধীরে ব্যায়াম করা শুরু করবেন এবং সময়ের সাথে সাথে সহনশীলতা বাড়াবেন।

প্রথম দিকে দিনে ৫ থেকে ১০ মিনিট করে ব্যায়াম করা শুরু করতে পারেন। এভাবে ৩ - ৪ সপ্তাহ ব্যায়াম করার পর ৫ মিনিট করে ব্যায়াম করার সময় বাড়িয়ে দিন। এভাবে ব্যায়ামের সময় বাড়াতে বাড়াতে এমন এক পর্যায় নিয়ে আসুন যেন দিনে ৩০ মিনিট স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যায়াম করতে পারেন।

কেননা আপনার যদি আগে থেকে ব্যায়াম করার অভ্যাস না থাকে তাহলে হঠাৎ করে ব্যায়াম শুরু করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। এই জন্য প্রতিদিনের রুটিনে কিছু সহজ কাজ যোগ করতে পারেন। যেমন- বাজার করতে গেলে একুটু বেশি হাঁটার রাস্তাটি বেছে নিতে পারেন, লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ব্যবহার করতে পারেন ইত্যাদি। মূল কথা হলো ব্যায়ামের সকল প্রকারের উপকারীতা পেতে একুটু একুটু করে ব্যায়ামের পরিমাণ বাড়াতে চেষ্টা করুন এবং এটিকে প্রতিদিনের রুটিনের মধ্যে নিয়ে আসুন।

গর্ভাবস্থায় ভারী ব্যায়াম করা উচিত কি?

গর্ভবতী হওয়ার আগে থেকে আপনার যদি ভারী ব্যায়াম করার অভ্যাস থাকে তাহলে আপনি গর্ভবতী অবস্থায় ভারী ব্যায়াম করতে পারবেন। এছাড়া মনে রাখবেন গর্ভকাল বাড়ার সাথে সাথে আপনার সহনশীলতা কমতে থাকবে। তাই সহ্যক্ষমতা চেয়ে বেশি ভারী ব্যায়াম করবেন না, এতে করে আপনার পেটে আঘাত লাগতে পারে।

এছাড়াও ভারী ব্যায়াম করলে গর্ভাবস্থায় যতটুকু ওজন থাকার কথা তার চেয়ে কমে যেতে পারে। এরকম হলে আপনাকে খাবার গ্রহণের মাধ্যমে ক্যালরির পরিমাণ বাড়াতে হবে।

গর্ভাবস্থায় ঘরে বসে নিরাপদে ব্যায়াম করার কিছু পরামর্শ

আপনারা যদি গর্ভাবস্থায় নিরাপদে ব্যায়াম করাতে চান তা্হলে ঘরোরা কিছু উপায় বা পরামর্শ মেনে চলা উচিত। যেমন-

  • ব্যায়াম শুরু করার আগে সবসময় ওয়ার্ম আপ করে গা গরম করে নিতে হবে এবং ব্যায়াম করার পরে গা ঠান্ডা করে নিতে হবে। এর জন্য ব্যায়াম করার আগে এবং পরে ৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি করতে হবে। সেই সঙ্গে ঘাড়, হাত, কোমর ও পা স্ট্রেচিং বা নাড়াচাড়া করে নিতে পারেন।
  • ব্যায়াম করার সময় অবশ্যই ভালো সাপোর্ট দেয় এমন স্পোর্টস ব্রা ও আরামদায়ক জুতা পরতে হবে। এছাড়া গর্ভাবস্থার শেষের দিকে গর্ভকালীন সময় পড়া হয় এমন বেল্ট পরতে পরেন। এতে করে দৌড়ানো বা হাঁটার সময় অস্তিত্ব বোধ কম হবে। তবে দৃষ্টি রাখবেন জামা কাপড়ের অংশ ঠিক থাকে ও জুতার ফিতা ঠিক মতো বাঁধা থাকে এবং পড়ে যাওয়ার কোনো সম্ভবনা না থাকে।
  • কার্পেট বিছানো ফ্লোর বা কাঠের তৈরি ফ্লোরে ব্যায়াম করতে হবে। এতে করে ভারসাম্য বজায় রাখতে ভালো হবে। তা না হলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এছাড়া ব্যায়াম করার জন্য এমন জায়গা বেছে নিতে হবে যেন কোনো কিছুতে বেধে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে। আর জিমে গেলে কোথায় কি যন্ত্রপাতি আছে তা দেখে চলা ফেরা করতে হবে।
  • গর্ভাবস্থায় বিশেষ করে প্রথম তিন মাসে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়া প্রতিরোধ করতে যা করবেন-
    • গরমের সময় বন্ধ, স্যাঁতস্যাঁতে অথবা বাতাস চলাচল করে না এমন পরিবেশে ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকুন। এছাড়া অতিরিক্ত গরমে ভারী ব্যায়াম করা থেকে দূরে থাকুন। ব্যায়াম করার জন্য আলো বাতাস প্রবেশ করে এমন জায়গা বেছে নিন অথবা বাসার ভিতরে ঠান্ডা পরিবেশ বেছে নিন।
    • ব্যায়াম করার সময় অবশ্যই হাতের নাগালে পানি বোতেল রাখবেন। পানিশূন্যতা দূর করার জন্য ব্যায়াম করার আগে-পরে অথবা ব্যায়াম করার মাঝে মাঝে পানি পান করুন।
    • ব্যায়াম করার সময় অবশ্যই ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক জামা কাপড় পরিধান করবেন

উল্লেখ্য, গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করার সময় যে কাজগুলো করা উচিত নয়।

  • গর্ভকালীন সময় হঠাৎ করে দেহের অঙ্গ-ভঙ্গি পাল্টাতে হয় বা লাফঝাঁপ করতে হয় এমন ব্যায়াম করবেন না। এই ব্যায়ামগুলো হাঁটু বা জয়েন্টে চাপ ফেলে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
  • হাঁটু ভেঙে পুরোপুরি মাটিতে বসে আবার দাঁড়ানো এমন ব্যায়াম, দুই পা একত্রে নামাতে অথবা উঠাতে হয় এমন ব্যায়াম এবং হাঁটু বেশি ভাঁজ করা লাগে এমন ব্যায়াম করা যাবে না।
  • বসা অবস্থা থেকে বা ফ্লোরে শুয়া অবস্থা থেকে হঠাৎ করে দাড়িয়ে যাবেন না। এতে করে মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারেন। এজন্য ধীরে ধীরে উঠে এক জায়গায় কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করবেন।
  • ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে ভারউত্তলন ব্যায়াম করবেন না। আপনি কতটুকু তীব্র ব্যায়াম করতে পারবেন বা আপনার শরীরের অবস্থা কি রকম এই বিষয়গুলো পরীক্ষা করে ভারোত্তলন ব্যায়াম করার পারমিশন দেবেন একজন গাইনি ডাক্তার।

গর্ভাবস্থায় যে ব্যায়ামগুলো করা উচিত নয়?

গর্ভাবস্থায় সব ধরনের ব্যায়াম করা গেলেও কিছু ব্যায়াম না করা ভালো। এমন কিছু ব্যায়াম আছে যেগুলো আপনার শিশুর জন্য ঝুঁকি থাকতে পারে। যেমন-

  • যে সকল খেলায় প্রতিপক্ষ থাকে বা পেটে আঘাত পাওয়া সম্ভাবনা থাকে। যেমন- ফুটবল, বক্সিং, হকি, কুস্তি, বাস্কেটবল, তাইকোয়ান্দো, জুডো ও কারাতে।
  • আগে থেকে অ্যাভাস না থাকলে লাফাতে বা পুরো শরীর ঝুকতে হয় এমন ব্যায়াম বা খেলা থেকে বিরত থাকা উচিত। যেমন- র‍্যাকেট, টেনিস ও ব্যাডমিন্টন। এতে পড়ে গিয়ে গর্ভের শিশু আঘাত পেতে পারে। তবে আগে থেকে অভ্যাস থাকলে শরীর বদলে যাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে অতি সাবধানে খেলা যেতে পারে।
  • যেসব ব্যায়ামে পড়ে গিয়ে পেটে ব্যথা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তা না করাই উচিত। যেমন- ঘোড়ায় চড়া, জিমন্যাস্টিকস, বাঞ্জি জাম্পিং, ডাইভিং। এছাড়াও পাকা রাস্তা ছাড়া উঁচু-নিচু রাস্তায় সাইকেল চালানো উচিত নয়।
  • যে সকল ব্যায়ামে অনেক সময় চিত হয়ে শুয়ে থাকতে হয় সেই সকল ব্যায়াম না করাই উচিত। বিশেষ করে যখন থেকে পেট বাড়তে থাকে। কারণ ভারি পেট নিয়ে অনেক সময় চিত হয়ে শুয়ে থাকলে রক্তনালীতে চাপ পড়ে রক্ত চলাচলে বাধাঁ পেতে পারে। এছাড়া অনেক সময় দাড়িয়ে থাকতে হয় এমন কাজ না করাই উচিত।
  • যে সকল খেলাধুলায় বা ব্যায়ামে শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয় সেগুলো না করাই উচিত। যেমন- হট ইয়োগা। এর কারণ হলো আপনার শরীরের অতিরিক্ত তাপে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হতে পারে।বিশেষ করে প্রথম তিন মাসে যখন শিশু অঙ্গ-পতঙ্গ সৃষ্টি হয়, এতে করে আপনার শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় পানির নিচে ঝাঁপ দিতে হয় এমন ব্যায়াম করা নিরাপদ নয়। যেমন: স্কুবা ডাইভিং। কারণ এতে শিশুর ‘ডিকমপ্রেশন সিকনেস’ মতো জটিল সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও শিশুর মস্তিকের সমস্যা, রক্তে গ্যাস ঢুকে যাওয়া বা জন্মগত ত্রুটির মতো জটিল রোগের ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করার সময় যে বিষয়গুলো নিয়ে সতর্ক থাকবেন?

একজন গর্ভবতী নারী যদি সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকেন তবে তিনি সকল ধরনের ব্যায়াম করতে পারবেন। কিন্তু তার যদি শরীরিক কোন সমস্যা থাকে তাহলে ডাক্তার তাকে দ্রুত হাঁটা, সাঁতার কাঁটা বা দৌড়ানোর মতো ব্যায়াম করতে নিষেধ করে থাকেন।

শরীরের জটিল সমস্যাগুলো হলো:

  • অতিরিক্ত রক্তশূন্যতা,
  • ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডের সমস্যা,
  • জরায়ু মুখ অস্বাভাবিক বা দুর্বল থাকা। যেমন- জরায়ু ওজন ধরনের ক্ষমতা কম থাকা বা প্রসবের সময় হওয়ার আগে জরায়ু মুখ খুলে যাওয়া,
  • যোনিপথে রক্তপাত,
  • সময়ের আগে পানি ভেঙে যাওয়া,
  • প্রি-এক্লাম্পসিয়া বা গর্ভাবস্থায় উচ্চরক্ত চাপ,
  • সময়ের আগে শিশু জন্মের ঝুঁকি থাকা। যেমন- জমজ বাচ্চা ধারন করা
  • ২৬ তম মাসের পরে প্লাসেন্টা বা গর্ভফুলের স্বাভাবিক অবস্থান থেকে নিচে নেমে জরায়ু মুখে চলে আসা, যার জন্য মা ও শিশু দুজনের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরে।

ব্যায়াম করার সময় যে সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে

গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করার সময় কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত গইনী ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সমস্যাগুলো হলো-

  • অজ্ঞান বা মাথা ঘুরে পড়ে যাবেন এমন মনে হওয়া,
  • মাথা ব্যথা হওয়া,
  • যোনিপথ দিয়ে তরলের মতো পানি বা রক্ত বের হওয়া,
  • ব্যায়াম করার আগে থেকে শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা হওয়া,
  • গর্ভের বাচ্চা কম নড়াচড়া করা,
  • কাফ মাসেলে, পায়ের পিছনে বা হাটুর উপরে ফুলে যাওয়া অথবা ব্যথা হওয়া,
  • নিয়মিত এবং বিরতিতে পেট কামাড়ানো অথবা প্রসবদানের মতো ব্যথা হওয়া ইত্যাদি।

গর্ভাবস্থার জন্য কিছু ঘরোয়া ব্যায়াম

গর্ভকালীন সময় নিরাপদে করতে পারবেন এমন কিছু ঘরোয়া ব্যায়াম হলো-

  • পেলভিক টিল্ট,
  • হাত ব্যায়াম,
  • পায়ের ব্যায়াম,
  • পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ বা কেগেল এক্সারসাইজ,
  • ভারসাম্য রক্ষার ব্যায়াম,
  • পেট, কোমর ও পিঠের পেশি শক্তিশালী করার ব্যায়াম।

গর্ভাবস্থায় ঘরোয়া ব্যায়াম করার নিয়ম

এখানে এমন কিছু ঘরোয়া ব্যায়ামের নিয়ম উল্লেখ্য করা হয়েছে। যেগুলো অনুশীলনী করলে হাত-পায়ের পেশি শক্তিশালী হবে, অতিরিক্ত ওজন বহনে সাহায্য করবে, ব্যথা কমাবে, জয়েন্টের শক্তি বাড়ায় এবং রক্ত চলাচল উন্নত করবে।

পেলভিক টিল্ট

  1. প্রথমে আলতোভাবে দেয়ালের সাথে ঘেষে দাড়ান। তবে লক্ষ্য রাখবেন কাঁধ এবং শরীরের নিচের অংশ যেন দেয়ালের সাথে লেগে থাকে।
  2. হাঁটু রিল্যাক্স ভাবে রাখুন।
  3. এরপর পেট নিজে নিজে এমন ভাবে ভিতরে ঢুকানোর চেষ্টা করুন পিঠ যেন দেয়ালের সাথে ঘেষে যায়। এভাবে ৪ সেকেন্ড রেখে পেট স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসুন।
  4. এভাবে ১০ বার চেষ্টা করুন।

পেটের পেশির ব্যায়াম

গর্ভের শিশু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পেট সামনের দিকে বড় হতে থাকে। এতে করে কোমের অংশ বেঁকে যেতে পরে। যার ফলে কোমরে ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই ব্যায়ামটি করতে পারেন।

  1. প্রথমে চার হাত-পা এমন ভাবে রাখুন যেন-
    • হাতের তালু কাঁধ বরাবর থাকে,
    • হাঁটু কোমর বরাবর থাকে,
    • আঙুলগুলো সামনের দিকে থাকে,
    • মেঝের সমান্তরালে এবং পিঠ সোজা থাকে,
    • পেটের পেশি টানটান অবস্থায় থাকে,
  2. এবার পেটের পেশিগুলোকে টানটান অবস্থায় করে পিঠের কাছে নিয়ে আসুন। এরপর পিঠ উপরে দিকে উঁচু করুন। ঘাড় ও মাথা কিছুটা রিলাক্স করুক, এতে মাথা সামনে দিকে ঝুলে পারতে পারে। তবে লক্ষ্য রাখবে হাত জানি সোজা থাকে।
  3. পিঠ উপরে দিকে উঁচু করা অবস্থা কিছু সময় বসে থাকুন। এরপর পিঠ আসতে আসতে নিচু করে পূর্বে অবস্থায় ফিরে আসুন। এসময় লক্ষ্য রাখবেন পেটের ভারে পিঠ যেন বেশি বেঁকে না যায়। ব্যায়াম করার পরে পিঠ সোজা অবস্থানে আনতে হবে।
  4. এভাবে ১০ বার ধীরে ধীরে পিঠ উঁচু করুন আবার নিচু করুন। তবে লক্ষ্য রাখবেন পেট জানি টানটান অবস্থা থাকে।

উল্লেখ্য, পিঠে ব্যথা বা ব্যাকপেইন থাকলে সাবধানে উঠা নামা করাবেন।যতটুকু উপরে ওঠাতে কষ্ট না হয় ততটুকু উপরে উঠাবেন।

ভারসাম্য ঠিক রাখার ব্যায়াম

গর্ভাবস্থায়, বিশেষ করে শেষের তিন মাসে পেট সামনের দিকে অনেক বড় হয়ে যায়। এসময় শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে কষ্ট হয়। এই সমস্যা সমাধান করার জন্য নিম্নোক্ত ব্যায়াম করতে পারেন।

  1. প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এরপর দাঁড়ানো অবস্থায় দুই হাত পিছনে নিয়ে কোমরের ওপর রাখুন।
  2. এরপর দুই হাতের উপর ভর দিয়ে শরীর পিছনের দিকে বাঁকানোর চেষ্টা করুন। তবে ঘাঁড় পুরোপুরি বাঁকানোর দরকার নেই।
  3. এভাবে ২০ সেকেন্ড ধরে রাখুন।
  4. একইভাবে ব্যায়ামটি ৫-৬ বার করুন। তবে ব্যায়ামটি করার সময় সাপোর্ট হিসেবে একটি চেয়ার রাখবেন।

কোমর ও পিঠের পেশির ব্যায়াম

এই ব্যায়ামটি কোমর, পেট ও পিঠের পেশিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

  1. প্রথমে ফ্লোরে হাঁটু ভাঁজ করে বসুন।
  2. এরপর আসতে আসতে শরীরের উপর অংশ ডানদিকে ঘুরানো চেষ্টা করুন এবং ডান হাত পিছনে নিয়ে বাম পায়ের গোড়ালি ধরুন। এমন সময় শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য বাম হাত ওপরে তুলে রাখতে পারেন।
  3. কিছু সময় পরে ধীরে ধীরে আগে অবস্থায় ফিরে আসুন। একেই ভাবে বামদিকে ঘুরানো চেষ্টা করুন এবং বাম হাত পিছনে নিয়ে ডান পায়ের গোড়ালি স্পর্শ করুন।
  4. এভাবে উভয় পাশে ৪-৬ বার করুন এবং প্রতিবার করার পরে দিক পরিবর্তন করুন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url