কাঠ বাদামের উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম

কাঠ বাদাম এর উপকারিতা ও অপকারিতা

কাঠবাদাম খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে অনেকেই মনে করেন যে কাঠবাদাম খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। সত্যি বলতে নিয়মিত কাঠবাদাম খেলে ওজন বাড়বে না, উল্টো ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

কাঠ বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, জিংক, ফসফরাস, সেলেনিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, কপার ও আয়রন। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই কাঠবাদাম শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা কমায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, রক্তস্বল্পতা দূর করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। তবে এই সব উপকারিতা পেতে হলে কাঠবাদাম সঠিক নিয়ম মেনে খেতে হবে।

আপনারা যারা প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কাঠবাদাম রাখতে চান তারা এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন। কেননা এই আর্টিকেল কাঠ বাদামের উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

কাঠ বাদাম এর উপকারিতা

কাঠ বাদাম এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, যা এক কথায় বলে শেষ করা যাবে না। কাঠ বাদাম স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু একটি খাবার। নিচে কাঠ বাদাম এর উপকারিতা সমূহ তুলে ধরা হলো-

  1. হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে প্রতিদিন ভেজানো কাঠবাদাম খান উপকার পাবেন।
  2. ওজন কামাতে কাঠবাদাম বেশ কার্যকারী। কেননা এতে থাকা মোনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রয়োজন পরে না।
  3. কাঠবাদাম খেলে হার্ট ভালো থাকে। এতে থাকা উপাদান সমূহ হার্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  4. কাঠ বাদাম ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, খাবারের পর কাঠবাদাম খেলে ইনসুলিনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে।
  5. কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে কাঠবাদাম কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কোলন ক্যান্সার থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত কাঠ বাদাম খাওয়া উচিত।
  6. কাঠবাদামে থাকা ফসফরাস উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে থাকা সোডিয়াম উচ্চ রক্তচাপ ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
  7. কাঠবাদাম শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। কারণ নিয়মিত কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়, ফলে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক ভাবেই কমে যাই।
  8. নিয়মিত কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে দাঁত ও হাড় মজবুত হয় এবং হাড়ের ক্ষয় বা অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  9. কাঠ বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সহয়তা করে।
  10. কাঠবাদাম খেলে মানসিক চাপ কমে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

নোট: কাঠ বাদামের যতই উপকারিতা থাক না কেনো একজন ব্যক্তির দিনে ৪০ গ্রামের বেশি কাঠ বাদাম খাওয়া কেন ভাবেই উচিত নয়।

কাঠ বাদাম এর অপকারিতা

কাঠবাদাম পুষ্টিকর একটি খাবার হলেও এর বেশ কিছু অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। তবে অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিকের থেকে উপকারিতাই বেশি। নিয়মিত পরিমাণ মতো কাঠবাদাম খেলে তা শরীরের কোনো ক্ষতি করে না। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে কাঠবাদাম খেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিচে কাঠ বাদাম এর অপকারিতা সমূহ তুলে ধরা হলো-

  • কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে অনেকের এলার্জির সমস্যা হতে পারে (তাদের ক্ষেত্রে কাঠবাদাম খাওয়া উচিত নয়)।
  • কাঠবাদাম বেশি পরিমাণে খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • যাদের আগে থেকে পেটের সমস্যা রয়েছে তারা কাঠবাদাম খেলে সমস্যা আরে বেড়ে যেতে পারে।
  • বেশি পরিমাণে কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্য কমার বদলে আরো বেড়ে যেতে পারে।
  • কাঠ বাদামে ফাইবার কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করতে সাহায্য করে, তবে অতিরিক্ত পরিমানে কাঠ বাদাম খেলে কোষ্ঠকাঠিণ্যের সমস্যা দূর করার পরিবর্তে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • যাদের অ্যাজমার সমস্যা রয়েছে তারা কাঠবাদাম খেলে, অ্যাজমার সমস্যা আরো বেরিয়ে দিতে পারে। কারণ এতে হাইড্রোকার্বন অ্যাসিড রয়েছে, আর হাইড্রোকার্বন অ্যাসিড দেহে বেশি জমলে নার্ভের সমস্যা হয়, শ্বাসকষ্ট হয় এমনকী মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
  • প্রতি ১০০ গ্রাম কাঠ বাদামে ভিটামিন-ই রয়েছে ২৫ মিলিগ্রাম। যেখানে একজন মানুষের দৈনিক মাত্র ১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই প্রয়োজন। যে কারনে অতিরিক্ত কাঠ বাদাম খেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে।

নোট: এই সব অপকারিতার হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রতিদিন মাত্র ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম কাঠ বাদাম গ্রহন করুন এবং সুস্থ খাকুন।

কাঠ বাদাম খাওয়ার নিয়ম

যারা নিয়মিত কাঠ বাদাম খেতে চান তাদের অবশ্যই কাঠ বাদাম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। নিচে কাঠ বাদাম খাওয়ার নিয়ম গুলো উল্লেখ করা হলো-

  • সাধারণত একজন ব্যাক্তির প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ টি কাঠবাদাম খাওয়া উচিত। এর বেশি খেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • কাঠ বাদাম ৬-৭ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং খাওয়ার আগে কাঠবাদামের ওপরে থাকা পাতলা খোসা তুলে ফলতে হবে।
  • কাঠ বাদাম পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া উচিচ। কারণ শুকনো কাঠ বাদাম থেকে ভেজানো কাঠবাদাম এর গুণগত মান অনেক বেশি থাকে।
  • রাতে কাঠ বাদাম খাওয়া উচিত নয়। তবে সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে ভেজানো কাঠবাদাম এবং কাঠবাদাম ভেজানো পানি দুইটোয় খেতে পারেন।
  • কাঠবাদাম গুঁড়া করে বিভিন্ন খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। বিশেষ করে উষ্ণ গরম দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে ভালো ফলাফল পাবেন।
  • যাদের গ্যাসের সমস্যা রয়েছে, তারা খালি পেটে কাঠ বাদাম খাবেন না ভরা পেটে খাবেন। কারণ কাঠবাদামে অনেক ভিটামিন থাকার কারণে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
  • বাচ্চাদেরকে যেকোনো ফলের সথে কাঠবাদাম দিয়ে জুস বানিয়ে খেতে দিন।

কাঠবাদাম এর সকল উপকারিতা যদি উপভোগ করতে চান তাহলে উপরের উল্লেখিত নিয়ম গুলো মেনে চলুন। তবে কারো যদি শারীরিক কোনো সমস্যা থেকে থাকে তাহলে পুষ্টিবিদ বা ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন।

কাঠ বাদামের পুষ্টিগুণ

কাঠবাদামে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ রয়েছে, যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারি। নিচে কাঠ বাদামের পুষ্টিগুণ গুলো তুলে ধরা হলো-

  1. কাঠ বাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি রয়েছে। যা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং মস্তিষ্কের কোষ উন্নতি করতে সাহায্য করে।
  2. কাঠ বাদামে প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম রয়েছে, যা হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে করে এবং হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে থাকা ভিটামিন ই হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
  3. কাঠবাদামে ফসফরাস রয়েছে, যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে থাকা সোডিয়াম উচ্চ রক্তচাপ ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করে।
  4. কাঠ বাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ফসফরাস ও মিনারেল রয়েছে, যা দাঁত ও হাড়কে মজবুত করে। ফসফরাস হাড় ও দাঁত মজবুত করার পাশাপাশি হাড়ের ক্ষয় বা অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করে।
  5. কাঠবাদাম আঁশ জাতীয় খাবার। তাই নিয়মিত কাঠবাদাম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
  6. কাঠবাদামে ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ রয়েছে, যা চুলপড়া বন্ধ করে এবং মাথার ত্বক সুস্থ রাখে।
  7. কাঠবাদামে থাকা ভিটামিন ই ত্বকের রুক্ষতা ও শুষ্কতা দূর করতে বেশ কার্যকারি। কাঠবাদাম বেটে দুধ বের করে নিয়ে তা ত্বকে ব্যবহার করলে আপনা ত্বক হয়ে ওঠবে মসৃণ, সুন্দর এবং উজ্জ্বল।

কাঠ বাদামের দাম

বাজার অথবা অনলাইনের বিশ্বস্ত পেজ থেকে কাঠবাদাম ক্রয় করতে পারেন। অন্যান্য বাদাম থেকে কাঠ বাদামের দাম বেশি হয়ে থাকে। নিচে ভালো ব্রান্ডের কাঠবাদামের দাম তুলে ধরা হলো-

ব্রান্ডের নাম ওজন দাম
আলমন্ড নাটস কাঠবাদাম ৫০০ গ্রাম ৬৯৯ টাকা
আলমন্ড নাটস কাঠবাদাম ২৫০ গ্রাম ৩৪৫ টাকা
আলমন্ড কাঠ বাদাম ১০০ গ্রাম ১৩৫ টাকা
আলমন্ড কাঠ বাদাম ১ কেজি ১২৯৯ টাকা
ভাজা কাঠবাদাম ৫০০ গ্রাম ৭৫০ টাকা

ব্রান্ড হিসেবে বা বাজার পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে কাঠবাদাম দাম ওপরে উল্লেখ্য করা দামের থেকে কম বেশি হতে পারে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url