কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত এবং কি খাওয়া উচিত না
নারীদের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা ০.৫ - ১.১ মিলিগ্রাম এবং পুরুষের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা ০.৬ - ১.২ মিলিগ্রাম। যাদের একটা কিডনি নেই তাদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা ১.৮ মিলিগ্রাম। রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা এর থেকে বেশি হলে কিডনির সমস্যা রয়েছে।
উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ঘন ঘন ইউরিন ইনফেকশন, অনিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়া, অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, অতিরিক্ত ওজনসহ নানা কারণে কিডনির সমস্যা হতে পারে। যে কারণেই কিডনির সমস্যা হোক না কেন, কিডনি রোগের চিকিৎসার প্রধান হল সঠিক খাবার নির্বাচন। অন্যান্য রোগের থেকেও খুব হিসাব-নিকাশ করে কিডনি রোগীর খাবার নির্ধারণ করা হয়।
কিডনির সমস্যা হলে যেসব খাবার খাবেন
কিডনি আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। কিডনির সমস্যা হলে আমাদের শরীরের সধারণ নিয়মে বাধা ঘটে ফলে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। যে কারণে কিডনির সমস্যা ধরা পড়লে খাবার নিয়ম মেনে খেতে হবে। কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত তা নিচে তুলে ধরা হলো-
- শাক: ডাটা শাক, লাউ শাক, কচুশাক, হেলেঞ্চা শাক, কলমি শাক ও লাল শাক খেতে পারবেন৷
- সবজি: ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, পটল, চাল কুমড়া, সজনে, ডাটা, লাউ ও শসা খেতে পারবেন।
- মিষ্টি কুমড়া, আলু, কাঁচা পেঁপে, কাঁচকলা, করলা, টমেটো বেশি করে পানি দিয়ে সিদ্ধ করে পানি ফেলে দিয়ে তারপর রান্না করে খেতে পারবেন।
- ফল: পেয়ারা, আপেল, নাশপাতি, পাকা পেঁপে, কমলা, আনারস ও বেল। এই সব ফল থেকে প্রতিদিন যে কোনো এক প্রকারের ফল ৫০ – ১০০ গ্রাম পরিমান খেতে পারবেন।
- কার্বোহাইড্রেট: ময়দার রুটি, ভাত, চিড়া, চালের রুটি, সুজি, সাগু, সেমাই ইত্যাদি কিডনি রোগীর জন্য উত্তম কার্বোহাইড্রেট।
- প্রোটিন: ডিমের সাদা অংশ (কুসুম খাবেন না), মাছ (সামুদ্রকিক মাছ বাদে) ও মুরগির মাংস, দুধ পরিমান মত খাবেন।
- চর্বি জাতীয় খাবার: সূর্যমুখী তেল, কর্ন অয়েল, ক্যানোলা অয়েল রান্নায় ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়। প্রতিদিনের রান্নায় চার চা চামচ বা ২০ এমএল তেল ব্যবহার করতে পারবেন।
- তরল বা পানীয়: পানি, চা, দুধ সব মিলিয়ে তরলের হিসাব করা হয়। শরীরের "ইডিমা, সোডিয়ামের মাত্রা, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা, ইজিএসআর" এসবের উপর ভিত্তি করে এক - দেড় লিটার, কখনও কখনও দুই লিটার পর্যন্ত তরল বা পানীয় খেতে দেওয়া হয়।
- কোন রোগীকে কতটুকু তরল বরাদ্দ করা হবে তা নির্ভর করবে রোগীর অবস্থার ওপর। অনেকেই্ অসুস্থ কিডনিকে সুস্থ করার জন্য অতিরিক্ত পানি খায়, এটি ভুল।
- লবণ: সাধারণত দুই - পাঁচ গ্রাম লবণ নির্ধারণ করা হয়। তবে তা আপনার শারীরিক অবস্থা ও ডায়েটেশিয়ানের ওপর নির্ভর করবে।
কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত না
কিডনির সমস্যা হলে কিছু খাবার খাওয়া যাবে না বা মেনে চলতে হবে। নিচে কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত না তা উল্লেখ করা হলো-
- শাক-সবজি: ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, মুলা, ঢেঁড়শ, বরবটি, কচু, মিষ্টি আলু, কাঁঠালের বিচি, শিমের বিচি, মুলাশাক, পালং শাক, পুঁই শাক ও ধনে পাতা খাবেন না।
- ফল: কলা, কামরাঙ্গা, আনার, লেবু, আমরা, বড়ই, খেজুর, আঙুর, পাকা আম, কাঁঠাল ও শুকনো ফল খাওয়া যাবে না।
- বিভিন্ন প্রকার ডাল, বাদাম, ডাবের পানি, নারিকেলের তৈরি খাবার ও বিচি জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে।
- গরু, খাসি, ভেড়া, মহিষের মাংস, কলিজা, মগজ, শুটকি, পনির, সামুদ্রিক মাছ ও চিংড়ি বাদ দিতে হবে।
- প্যাকেট বা প্রসেসিং করা খাবারে চিনি ও লবণের পরিমান বেশি থাকে তাই এই সব খাবার বাদ দিতে হবে।
- হরলিক্স,কমপ্লেন, বা কোনো প্রকার কোমল পানীয় (কোক, সেভেন আপ) খাওয়া যাবে না।
- ভাজাপোড়া, ফাস্ট ফুড, ডিমের কুসুম, কাঁচা সবজির সালাদ, সবজি স্যুপ ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে।
নোট: কিডনি রোগীদের খাবার নির্ধারণ করা হয় তার শরীরের অক্সালিক অ্যাসিড, ইউরিক অ্যাসিড, পটাশিয়ামসহ আরও অনেক কিছুর উপর বিবেচনা করে। কারো রক্তে যদি পটাশিয়াম, ইউরিক অ্যাসিড নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকে তাহলে সে নির্দিষ্ট মাত্রায় আম খেতে পারবে। আবার যারা ডায়ালাইসিস করে তারা ডায়ালাইসিসের দিন একটি করে আম খেতে পারবে। তাই সব থেকে বেশি ভালো হয় আপনি আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ আনুযায়ী খাবার গ্রহন করলে। কারণ আপনার সমস্যা ঠিক কত টুকু গুরুতর তা আপনার চিকিৎসক সব থেকে ভালো বুঝবেন।