সীতার অগ্নিপরীক্ষা ও পাতাল প্রবেশ

সীতার অগ্নিপরীক্ষা

সীতা হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণের প্রধান নারী চরিত্র। যাকে জনকপুরের রাজা জনক ভূমি গহ্বরে খুজে পান এবং তাকে নিজের মেয়ের স্নেহে লালন পালন করেন। রাজা জনকের মেয়ে হওয়ায় সীতার অপর নাম জানকী। তিনি শ্রীরামের (বিষ্ণুর সপ্তম অবতার) ধর্মপত্নী এবং ধনসম্পদের দেবী মা লক্ষ্মীর অবতার ছিলেন। হিন্দুসমাজে মাতা সীতাকে আদর্শ স্ত্রীর (আদর্শ নারীর) উদাহরণ হিসেবে মনে করা হয়। সীতা দেবী মূলত তার আত্মবিসর্জন, উৎসর্গীকরণ, সাহসিকতা এবং বিশুদ্ধতার জন্যে পরিচিত। আজকে আমরা মাতা সীতার পাতাল প্রবেশ ও অগ্নিপরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করব।

সীতা কেন অগ্নিপরীক্ষা দিয়েছিলেন?

রামচন্দ্র চৌদ্দ বছরের জন্য বনবাসে যাওয়ার সময় লক্ষণ ও মাতা সীতা তার বনবাসের সঙ্গী হন। বনবাসে শ্রী রাম চন্দ্র বিপদের আভাস পেয়ে সীতাকে অগ্নি দেবতার কাছে সুরক্ষিত রাখেন। যাওয়ার সময় সীতা তার ছায়াকে রামের কাছে রেখে যান। তারপর রাবণ সীতাকে অপহরণ করে লঙ্কায় নিয়ে যায়। তখন থেকে রাম ও রাবণের মধ্যে সংঘাতের সূত্রপাত হয়। রাম কিষ্কিন্ধ্যার বানরদের সাহায্যে রাবণকে পরাজিত ও নিহত করে সীতাকে উদ্ধার করেন। শ্রীরামচন্দ্র তারপর রাবণের ছোট ভাই বিভীষণকে লঙ্কার রাজা করেন এবং বনবাসের দিন শেষ করে নিজের রাজ্যে ফিরে আসেন। নিজ রাজ্যে ফেরার আগে শ্রীরামচন্দ্র মাতা সীতাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আগ্নী পরিক্ষার ব্যবস্থা করেন। মূলত এই কারণেই সীতার অগ্নিপরীক্ষা হয়। কারণ অগ্নিপরীক্ষার সময় অগ্নিদেব ছায়া সীতাকে নিয়ে যান এবং আসল সীতাকে প্রকট করে রেখে যান।

সীতার অগ্নি পরীক্ষার স্থান:

সীতার অগ্নি পরীক্ষার স্থান হলো বাড়বকুন্ড (অগ্নিকুন্ড)।

বাড়বকুন্ডের সবচেয়ে আকর্ষনীয় স্থান হচ্ছে "অগ্নিকুণ্ড" মন্দির। পানির উপর আগুন জ্বলছে যা দেখতে খুবি আকর্শনীয়। অনেক গল্প প্রচলিত আছে এই মন্দির নিয়ে।

সীতার পাতাল প্রবেশ:

শ্রীরাম বনবাসের জীবন কাটিয়ে নিজ রাজ্য অযোধ্যায় ফিরে রাজ সিংহাসনে বসেন। শ্রীরামচন্দ্র রাজা হওয়ার পর কিছুকাল খুব ভালো ভাবে রাজ্য পরিচালনা করছিলেন। তার কিছু দিন পর অযোধ্যার নাগরিকগন মাতা সীতার নামে নিন্দা করতে শুরু করেন। দিন দিন সেই লোক নিন্দা বারতেই থাকে। তখন রাজগুরুর আদেশে শ্রীরাম লক্ষণকে আদেশ দেন সীতাকে বনে রেখে আশার জন্য। সেই সময় সীতা গর্ভবতী ছিলেন। মহর্ষি বাল্মীকির তপোবনে সীতা আশ্রয় নেয় এবং সেখানেই লব ও কুশ নামে যমজ দুই পুত্র সন্তানের জন্ম দেন।

লব কুশ বড় হলে তাদের পরিচয় জানতে পারে এবং পিতা মাতাকে এক করার জন্য অযোধ্যায় যান। সেখানে গিয়ে তারা সেখানকার মানুষদের মনের ভূল ধারনা দূর করার জন্য রাম সীতার কাহিনী শুনাতে চান। কিন্তু কুচক্রি মানুষগন তাদের গল্প শুনতে চান না এবং তাদেরকে অযোধ্যায় থেকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করেন। ছেলেদের বিপদের কথা শুনে মাতা সীতা তাদের রক্ষা করতে অযোধ্যার ফিরে যান এবং শ্রী রামচন্দ্রকে জানান যে লবকুশ তাদের সন্তান। তখন রামচন্দ্র সীতাকে আবারও অগ্নিপরীক্ষা দিতে বলেন। রামের মুখে এমন কথা শুনে সীতা মর্মাহত হয়ে মাটির বুকে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তখন ভূগর্ভ থেকে ভূদেবী উত্থিত হয়ে মাতা সীতাকে নিয়ে পাতালে প্রবেশ করেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url