সুয়েজ খাল কোথায় অবস্থিত, এর জাতীয়করণ ও সংযুক্ত করেছ

সুয়েজ খাল

সুয়েজ খাল সম্পর্কে জানার আগ্রহ আমাদের অনেকের রয়েছে, কেননা এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় খাল। যে কারনে এর আবস্থান, জাতীয়করণ ও সংযুক্ত করা সহ নানা প্রশ্ন আমাদের মনে জাগে। যদি আপনিও সুয়েজ খাল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে আজকের এই পোষ্টি আপনার জন্য। তাহলে চলুন নিচে থেকে জেনে নেওয়া যাক সুয়েজ খাল সম্পর্কে।

সুয়েজ খাল

বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম খালের নাম হল সুয়েজ খাল। সুয়েজ খাল হল মিশরের সিনাই উপদ্বীপের পশ্চিমে অবস্থিত একটি কৃত্তিম সামুদ্রিক খাল। খালটি নির্মাণের উদ্দেশ্যে ফার্দিনান্দ দে লেসেপস ১৮৫৮ সালে একটি কোম্পানি গঠন করেন এবং তার নাম দেন সুয়েজ খাল। ১৮৫৯ - ১৮৬৯ সাল পর্যন্ত খালটির নির্মাণ কাজ চলে এবং ১৮৬৯ সালের ১৭ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। এই খালটি দিয়ে জাহাজ লোহিত সাগর ও ভূমধ্যসাগর হয়ে উত্তর ভারত ও উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে দিয়ে সরাসরি চলাচল করে। ফলে দক্ষিণ ভারত ও দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরকে এড়িয়ে চলা যায় এবং লন্ডন থেকে আরব সাগর পর্যন্ত যাত্রার দূরত্ব প্রায় ৮,৯০০ কিলোমিটার (৫,৫০০ মাইল) কমে গেছে। খালটি সুয়েজ শহরের বন্দর তৌফিকের দক্ষিণ টার্মিনাস থেকে পোর্ট সৈয়দের উত্তর টার্মিনাস পর্যন্ত বিস্তৃত।

সুয়েজ খাল কোথায় অবস্থিত

সুয়েজ খাল মিশরে অবস্থিত।

পুরো দশ বছর এক টানা খনন করার পর খালটি সর্বসাধারণের জন্য ১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দে খুলে দেয়া হয়। খালটি দক্ষিণ এশিয়া থেকে উত্তর ইউরোপ উভয় প্রান্তের পণ্যপরিবহনে একটি জলপথ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। খালটি উন্মুক্ত হবার পূর্বে সম্পূর্ণ আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে আসতে হতো। কখনো কখনো পণ্য জাহাজ থেকে নামিয়ে মিশরের স্থলপথ অতিক্রম করতে হত, লোহিত সাগর থেকে ভূমধ্যসাগর এবং ভূমধ্যসাগর থেকে লোহিত সাগরে অপেক্ষমাণ জাহাজে পারাপার করা হত।

সুয়েজ খাল সংযুক্ত করেছে:

সুয়েজ খাল ইস্তমাসের মাধ্যমে ভূমধ্যসাগরকে লোহিত সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। এই খালটি এশিয়া ও আফ্রিকাকে বিভক্ত করেছে। সিল্ক রোডের একটি অংশ খালটি যা ইউরোপকে এশিয়ার সাথে সংযুক্ত করে।

মূল খালটিতে গ্রেট বিটার ও বাল্লা বাইপাস লেকের স্থানগুলি সহ একটি এক লেনের জলপথ রয়েছে। এতে অ্যালোইস নেগ্রেলির পরিকল্পনা অনুসারে, সমুদ্রের পানি অবাধে প্রবাহিত হওয়ার পথে বাধা দেওয়ার জন্য কোন জলকপাট ব্যবস্থা নেই। সাধারণত বিটার লেকের উত্তরের খালের পানি গ্রীষ্মকালে দক্ষিণে এবং শীতকালে উত্তরে প্রবাহিত হয়। খালের দক্ষিণ সুয়েজে জোয়ার-ভাটার সাথে প্রবাহ পরিবর্তিত হয়।

সুয়েজ খাল জাতীয়করণ:

মিশর সরকার সুয়েজ খালকে ১৯৫৬ সালে জাতীয়করণ করেন।

খালটি যদিও মিশরীয় সরকারের সম্পত্তি, তবে ১৯৫৬ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ইউরোপীয় অংশীদাররা (যাদের বেশিরভাগ ছিল ফরাসি ও ব্রিটিশ) এই সংস্থার মালিক ছিল এবং এটি তারা পরিচালনা করতো। পরবর্তীতে জামাল আবদেল নাসের মিশরের রাষ্ট্রপতি এটিকে জাতীয়করণ করলে ১৯৫৬ সালের অক্টোবর-নভেম্বরের সুয়েজ সংকট দেখা দেয়।

মিশরের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষ বর্তমানে খালটির রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করেন। কনস্টান্টিনোপল কনভেনশনের অধীনে এই খালটি "যুদ্ধের সময়ও শান্তির সময়ের মতো প্রতিটি যুদ্ধ জাহাজ বা বাণিজ্য পতাকার পার্থক্য ছাড়াই" ব্যবহার করতে পারবে। তবুও খালটি একটি নৌ-হ্রস্বতর পথ এবং চোকপয়েন্ট হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কৌশলগত ভূমিকা পালন করে। লোহিত সাগর এবং ভূমধ্যসাগর উভয়ের উপকূলরেখা এবং ঘাঁটি সহ নৌবাহিনীর (মিশর এবং ইসরায়েল) সুয়েজ খালের প্রতি বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। ১৯৬৭ সালের ৫ জুন ৬ দিনের যুদ্ধের শুরুতে সুয়েজ খাল বন্ধ করে দেওয়ার পরে আট বছর বন্ধ ছিল এবং পুনরায় ৫ জুন ১৯৭৫ সালে খালটি চালু করা হয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url