জারা ঘাস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

জারা ঘাস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

জারা ঘাস একটি দ্রুত বর্ধনশীল এবং উচ্চ ফলনশীল ঘাস যা চীনের একটি ঘাস।

ঘাসটি মূলত একটি পাহাড়ি ঘাস। গবাদি পশুর জন্য জারা ঘাসটি একটি উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ উন্নত মানের ঘাস। বর্তমানে বাংলাদেশের সব খামারিদের কাছে এই ঘাসটি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

জারা ঘাস চাষ পদ্ধতি

জারা ঘাস সব মৌসুমেই লাগাতে পারবেন তবে শুকনো মৌসুমে লাগাতে পারলে ভালো হয়, তাতে প্রতিটি ঘাসের চারা অংকুরিত ভালো ভাবে হতে পারে।
  1. জারা ঘাসের কাটিং লাগানোর আগে জমি ভাল করে প্রস্তুত করে নিতে হবে।
  2. শুকনো কিংবা পঁচা গোবর সার জমিতে ছিটিয়ে দিতে হবে।
  3. তারপর ২ থেকে ৩টা চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
  4. কাটিং লাগানোর জন্য প্রথমেই ভাল মানের পরিপক্ক কাটিং সংগ্রহ করতে হবে।
  5. একসাথে ২ টি করে কাটিং নিয়ে ২ ইঞ্চি গ্যাপ রেখে পাশাপাশি লাগাতে হবে।
  6. কাটিং এর গিট মাটির ১ ইঞ্চি নিচে পুঁতে দিতে হবে।
  7. যদি কাটিং এ চারা গজিয়ে যায়, তাহলে একই নিয়মে যত্ন সহকারে কুশি সহ কাটিং লাগাতে হবে।
  8. ৩০ ডিগ্রি এঙ্গেল করে কাটিং গুলো লাগাতে হবে।
  9. কাটিং এর একটা লাইন থেকে আরেকটা লাইনের দূরত্ব হবে ২ ফুট এবং কাটিং থেকে কাটিং এর দূরত্ব হবে ২ ফুট।
  10. কাটিং লাগানো শেষ হলে সেই দিনই অথবা পরের দিন জমিতে সেচ দিতে হবে, তবে পানি জমে থাকলে ক্ষতি হতে পারে তাই সে দিকে লক্ষ্য রাখবেন।
  11. কাটিং লাগানোর ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যেই মাটির উপর চারা দেখা যাবে।
  12. ১২ ফিড প্রযান্ত উঁচু হয়ে থাকে জারা ঘাস।

জারা ঘাসে সার ব্যবস্থাপনা:

  1. প্রতি ৬ মাস বা ১ বছর পর পর জমিতে শুকনো গোবর (কাঁচা গোবর দেওয়া যাবে না) অথবা কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) প্রয়োগ করতে হবে।
  2. গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত রোদ্রের সময় প্রতি ১০ দিন পর পর সেচ দিতে হবে।
  3. বৃষ্টি হলে তার ওপর নির্ভর করে সেচ দিতে হবে, আবার পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে সেচ না দিলও হবে।
  4. আশানুরূপ ফলন পেতে হলে, প্রতি ১০ শতাংশ জমির জন্য রাসায়নিক সারের পরিমান নিচে দেওয়া হল।
    • ইউরিয়া - ৫ কেজি
    • এমওপি - ৩ কেজি
    • সালফার - ২ কেজি
    • ডিএপি/ টিএসপি - ৫ কেজি
  5. সাথে সরিষার খৈল গুড়া করে স্যারের সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
  6. বর্ণিত রাসায়নিক সার গুলো সম পরিমাণে একসাথে মিশিয়ে প্রতিবার সেচ দেওয়ার পূর্বে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
নোট: সার সরাসরি ঘাসের গোড়ায় দিবেন না। গাছের গোড়া থেকে কিছুটা দূরে চারিদিকে গোল করে ছিটিয়ে দিতে হবে। অথবা সারা জমিতে ছিটিয়ে দিতে পারেন। সকালে সার দিবেন না কারণ সকালে ঘাসের পাতায় শিশির জমে থাকে। যে কারণে সেচ দেওয়ার আগের দিন দুপুরে বা বিকালে সার ছিটায়ে দিতে হবে।

ঘাসের জমিকে ২ ভাগে ভাগ করে নিবেন তারপর অর্ধেক জমিতে সার দিবেন এবং বাকি অর্ধেক জমির ঘাস গবাদি পশুকে খাওয়াবেন। যে অর্ধেক জমিতে সার প্রয়োগ করবেন তারপর থেকে সেই জমির ঘাস ৭ - ১০ দিনের মধ্যে গবাদি পশুকে খাওয়াবেন না।

জারা ঘাসের রোগ ব্যাধি:

জারা ঘাসের সাধারণত কোন রোগ-বালাই হয় না বললেই চলে। তবে, নতুন ঘাস লাগানোর পর এবং প্রতিবার ঘাস কাটার পর ছত্রাকের আক্রমন হতে পারে। যদি দেখেন ঘাসের পাতা পচে যাচ্ছে বা পুড়ে যাওয়ার রোগ দেখা দিচ্ছে তাহলে কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ভালো কোম্পানির ওষুধ কিনে গাছের গোড়ায় এবং পাতায় স্প্রে করে দিতে হবে। প্রতিবার ঘাস কাটার পর ছাই ছিটিয়ে দিলে ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক থেকে মুক্ত রাখতে পারবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url