চেউয়া মাছ খাওয়ার উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক
বাংলাদেশে শুকনা চেউয়া বা চেউয়া শুটকি খুবই জনপ্রিয়। বিশেষ করে চট্টগ্রামের অধিবাসীরা টাটকা চেউয়া মাছ ও চেউয়া শুটকি দুটোয় খুব পছন্দ করে। জোয়ার-ভাঁটার নদীতে এ মাছ গুলো উল্লেখয্যোগ পরিমানে পাওয়া যায়। চট্টগ্রামের ডাকাতিয়া নদীতে এই মাছ প্রচুর পরিমান পাওয়া যায়। আজকে আমরা আপনাদের সাথে এই চেউয়া মাছ নিযে আলোচনা করব।
উপকূলীয় এলাকার তাজা লোনা বা সামুদ্রিক জলের তলে চেউয়া মাছ বসসবাস করেন৷ চেউয়া মাছ দুই ধরনের হয় একটা সাদা এবং অন্যটা লাল। লালটা বেশ বড় বড় হয়।
চেউয়া মাছের উপকারিতা:
চেউয়া মাছের অনেক উপকারিতা রয়েছে। যারা নিয়মিত চেউয়া মাছ খান তারা অনেক রোগ থেকে মুক্ত থাকেন। নিচে চেউয়া মাছের উপকারিতা তুলে ধরা হলো-
- নিয়মিত চেউয়া মাছ খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়।
- যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত চেউয়া মাছ খেতে পারেন, চেউয়া মাছ থাকা উপাদান রক্তচাপের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
- নিয়মিত চেউয়া মাছ খেলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে।
- স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত চেউয়া মাছ গ্রহন করুন, কারণ চেউয়া মাছ স্ট্রোকের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
- চেউয়া মাছ বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- নিয়মিত চেউয়া মাছ খেলে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পাবে। যাদের ভুলে যাওয়ার সমস্যা আছে তারা নিয়মিত চেউয়া মাছ খেতে পারেন উপকার পাবেন।
- চেউয়া মাছ নিয়মিত খেলে ডিমনেশিয়া বা অ্যালজাইমারের মত রোগ প্রতিরোধ করতে পারবেন।
- নিয়মিত চেউয়া মাছ খেলে শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক থাকবে এবং যাদের আতিরিক্ত কোলেস্টেরলের সমস্যা রয়েছে তা কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত চেউয়া মাছ গ্রহন করুন।
- গলগণ্ড রোগ প্রতিরোধ করতে নিয়মিত চেউয়া মাছ খান।
- চেউয়া মাছ নিয়মিত খেতে পারলে নার্ভের রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
- চোখের রেটিনার কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নিয়মিত চেউয়া মাছ খান।
- চেউয়া মাছে ক্যান্সার প্রতিরোধক উপাদান রয়েছে, তাই নিয়মিত চেউয়া মাছ খেলে ক্যান্সার থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।
- নিয়মিত চেউয়া মাছ খেলে সেলেনিয়াম অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
চেউয়া মাছের ক্ষতিকর দিক:
কিছু কিছু ক্ষেত্রে চেউয়া মাছ খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে চেউয়া মাছ ক্ষতিকর হতে পারে তা নিচে তুলে ধরা হলো-
- হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা অতিরিক্ত পরিমাণে এই মাছ খাবেন না। তাহলে উপকারের পরিনর্তে ক্ষতি হতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় এই মাছ খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে। এই আবস্থায় আপনি যদি চেউয়া মাছ খেতে চান তার আগে আবশ্যয় ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করবেন।
- কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এটা ক্ষতিকর। তাই যাদের কিডনিতে সমস্যা আছে তারা এই মাছ এড়িয়ে চলুন।
- যাদের বাতের সমস্যা রয়েছে তারা সামুদ্রিক মাছ এড়িয়ে চলুন।
চেউয়া মাছ রান্না রেসিপি:
অনেকেই চেউয়া মাছ রান্নার রেসিপি সম্পর্কে জানতে চান। আপনিও যদি চেউয়া মাছের রেসিপি জানতে চান তাহলে নিচের থেকে জেনে নিতে পারেন। নিচে চেউয়া মাছ রান্না রেসিপি আলোচনা করা হলো-
উপকরণ:
চেউয়া মাছ রান্না করতে যেসব উপকরন লাগবে তা হলো-
- ৫০০ গ্রাম চেউয়া মাছ
- ১ কাপ পরিমান বা মাঝারি সাইজের তিনটা পেঁয়াজ কুচি
- ১টা বড় সাইজের টমোটো কুচি
- ১ চা চামচ হলুদ গুড়া
- ১ চা চামচ লাল মরিচ গুড়ো (ঝাল বুঝে কম বেশী)
- ১ চা চামচ রসুন বাটা
- হাফ চা চামচ আদা বাটা
- ৬-১০ টা কাঁচা মরিচ
- ১ চামচ ধনেগুড়ো
- ১ চামচ জিরা গুড়া
- লবণ পরিমান মত (দুই ধাপে)
- হাফ কাপ ধনিয়া পাতা
- হাফ কাপ মত তেল
- পরিমান মত পানি।
নির্দেশাবলী:
- প্রথমে চেউয়া মাছ গুলো কেটে সাইজ করে নিতে হবে।
- তারপর লবন দিয়ে ভাল করে ধুঁয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে।
- এরপর চেউয়া মাছ গুলো হাফ চামচ হলুদ গুঁড়া, হাফ চামচ মরিচ গুঁড়া ও পরিমান মত লবণ (চাইলে ২ চা চামচ পরিমান লেবুর রস দিতে পারেন) দিয়ে মেখে নিতে হবে।
- তারপর কড়াইতে অল্প পরিমাণ তেল দিয়ে মাছগুলো লাল লাল করে ভেজে নিতে হবে।
- ভাজা মাছগুলো তুলে নিয়ে তার মধ্যে আরো কিছুটা তেল দিয়ে তার মধ্যে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ব্রাউন কালার করে ভেজে নিতে হবে।
- তারপর তাতে ১ চা চামচ রসুন বাটা, হাফ চা চামচ আদা বাটা, ৬-১০ টা কাঁচা মরিচ ফালি করে দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে।
- এরপর একটা বড় সাইজের টমেটো কুচি, হাফ চা চামচ হলুদ গুড়া, হাফ চা চামচ মরিচ গুড়ো, ১ চামচ ধনেগুড়ো, ১ চা চামচ জিরা গুড়া, স্বাদমত লবন ও হাফ কাপ পানি দিয়ে মসলা গুলো ভালো করে কষিয়ে নিতে হবে।
- মসলা কষানো হয়ে গেলে তার মধ্যে ভেজে রাখা মাছ গুলো দিয়ে আলতো হাতে নেড়ে মসলার সাথে মিশিয়ে নিতে হবে।
- তারপর তার মধ্যে আরো হাফ কাপ পানি দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ডেকে দিন।
- এরপরে পানি শুকিয়ে আসলে তার মধ্যে হাফ কাপ ধনিয়া পাতা দিয়ে দু মিনিট পর নামিয়ে নিন।
- চেউয়া মাছের এই রেসিপিটা গরম ভাতের সাথে খেতে খুবই ভালো লাগে।