কাঠের কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট

কাঠের কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট

ঘুন পোকা কাঠের প্রধান শত্রু। সাধারণত পরিবেশের আর্দ্রতার কারণে কাঠের এই সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই সমস্যার সমাধান করার জন্য কাঠের কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট করে প্রস্তুত করে নিতে হবে। তাহলে সেই কাঠ দিয়ে যে ফার্নিচার তৈরি করা হবে, সেই কাঠে ঘুণ পোকার আক্রমণের সম্ভবনা কমে যায়। কাঠের কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট বা কাঠের প্রক্রিয়াকরণ সম্পর্কে আজ আপনাদের বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব।

কাঠের কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট কি জিনিস?

কাঠের কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট হলো এক ধরনের রাসায়নিক চিকিৎসা। যেখানে রাসায়নিক মিশ্রিত ফুটন্ত গরম পানিতে কাঠগুলোকে সিদ্ধ করে কাঠের ট্রিটমেন্ট করা হয়। এটা করলে কাঠের মধ্যে থাকা ক্ষতিকর জীবাণু গুলো সব ধ্বংস হয়ে যায় ফলে কাঠের ফার্নিচারে ঘুন পোকা বা ফাংগাশ জন্মাতে পারে না।

কাঠের কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট করলে কি হয়?

কাঠগুলো সিদ্ধ করার পর, সেই কাঠ গুলো স্বাভাবিক মাত্রায় ঠান্ডা করে নিলেই কাঠ ২৫ থেকে ৩০ বছরেও নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা থাকে না। এছাড়াও উঁইপোকা বা টারমাইট, ঘুন পোকা বা কাঠ ধ্বংসকারী পোকাকে টারমাইন বলে। এসব পোকা থেকে মুক্তি মিলবে কাঠের কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট করলে।

কীটপতঙ্গ ও ছত্রাকের কারণে কাঠ নষ্ট হয়ে যায়। কারণ কাঠ হল ঘুন, ছত্রাক ও উইপোকার বাসা বাঁধার উপযুক্ত স্থান এবং বাসা বাঁধার কারণেই কাঠ নষ্ট হয়ে যায়। এই কারণে কাঠ ব্যবহার কারার আগেই প্রক্রিয়াকরণ করা জরুরি।

কাঠের কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট

দুইটি পদ্ধতিতে কাঠের কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট করা যায়। চলুন দেখে নেওয়া যাক কিভাবে এটি করা হয়:

আধুনিক পদ্ধতি:

একটি নির্দিষ্ট আবদ্ধ পাত্রে কাঠ গুলো রেখে পাত্রটি প্রথমে পাম্পের মাধ্যমে বায়ুশূন্য করে কাঠের ভেতরের কষ ও বাতাস নিষ্কাশন করা হয়। তার পর অন্য আর একটি পাম্প চালিয়ে আগে থেকে তৈরি করা কেমিক্যাল মিশ্রিত দ্রবণ আবদ্ধ পাত্রে অধিক চাপে প্রবেশ করানো হয়। যাতে করে কেমিক্যালের দ্রবণ কাঠের মধ্যে একবাড়ে গভীর পর্যন্ত সমস্ত জায়গায় প্রবেশ করতে পারে। এই অবস্থায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা রাখে এবং কেমিক্যালের দ্রবণটি পাম্পের মাধ্যমেই আবার বের করে ফেলা হয়। একবারে, একটি পাত্রের আকার অনুসারে ৫০ থেকে ৬০০ CFT পর্যন্ত কাঠের কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট করা যায়। কিন্তু এই পদ্ধতি ব্যয় বহুল ফলে যারা ছোট বা মাঝারি আকারের ব্যবসায়ী আছেন তাদের পক্ষ্যে এটি ব্যবহার করা সম্ভব নয়। কারণ একটি ৫০ CFT ক্যাপাসিটির ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করতে ও ট্রেনিং সহ খরচ পরবে ২৫ লক্ষ টাকারও বেশি।

সনাতন বা চুবানো পদ্ধতি:

সনাতন বা চুবানো পদ্ধতিতে কোন প্রকার আবদ্ধ পাত্র বা বাহ্যিক চাপের প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে সুবিধামত যেকোন চৌবাচ্চায় প্রস্তুতকৃত কেমিক্যালের দ্রবণে কাঠ ডুবিয়ে রাখা হয়। তবে লক্ষ্য রাখবেন কাঠ চৌবাচ্চায় রাখার পর যেন সংরক্ষণী দ্রবণ পানি অন্তত ০৬ ইঞ্চি কাঠগুলোর উপরে থাকে। সংরক্ষণী দ্রবণের প্রয়োজন অনুসারে কাঠ গুলো ১ থেকে ৩ দিন পর্যান্ত ডুবিয়ে রাখা হয়। এরপর তা শুকিয়ে নিয়ে ব্যবহার করা হয়।

নোট: যেহেতু সনাতন পদ্ধতিতে কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ করা হয়না, সেহেতু কেমিক্যাল কাঠের গভীরে পৌঁছাতে পারেনা। কেমিক্যাল কাঠের সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ মিমি পর্যন্ত গভীরে পৌঁছাতে পারে। ফলে এই পদ্ধতিতে পরিপক্ক কাঠ না হলে ট্রিটমেন্ট করার পরেও কাঠের ভিতরে কীটপতঙ্গ ঢুকে নষ্ট করতে পারো।

কেমিক্যাল দ্রবণের মিশ্রণ

আধুনিক পদ্ধিত ও সনাতন পদ্ধিত উভয় ক্ষেত্ৰেই প্রায় একই ধরণের কেমিক্যালের দ্রবণ ব্যবহৃত করা হয়ে থাকে এবং এগুলো পরীক্ষা সাপেক্ষে মাননিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে একই দ্রবণ অনেকবার ব্যবহার করা যেতে পারে। কেমিক্যালের দ্রবণ কাঠ প্রক্রিয়াকরণের জন্য ব্যবহার করা হয় তা দরজা, চৌকাঠ বা আসবাবপত্র ভেদে বিভিন্ন মাপের হয়ে থাকে। যেমন:

ঘরের ভেতরে ব্যবহৃত আসবাবপত্রের জন্য দ্রবণের মিশ্রণ নিন্মরূপ:

১০% ঘনত্বের জন্য:
  • বোরাক্স - ০৫ কেজি
  • বোরিক এসিড - ০৫ কেজি এবং
  • পানি ৯০ লিটার
  • মোট ১০০ লিটার
২০% ঘনত্বের জন্য:
  • বোরাক্স - ১০ কেজি
  • বোরিক এসিড - ১০ কেজি এবং
  • পানি ৮০ লিটার
  • মোট ১০০ লিটার

ঘরের বাহিরে ব্যবহৃত আসবাবপত্রের জন্য দ্রবণের মিশ্রণ নিন্মরূপ:

১০% ঘনত্বের জন্য:
  • কপার সালফেট - ০৪ কেজি
  • সোডিয়াম ডাই ক্রোমেট - ০৪ কেজি
  • বোরিক এসিড - ০২ কেজি এবং
  • পানি ৯০ লিটার
  • মোট ১০০ লিটার
২০% ঘনত্বের জন্য:
  • কপার সালফেট - ০৮ কেজি
  • সোডিয়াম ডাই ক্রোমেট - ০৮ কেজি
  • বোরিক এসিড - ০৪ কেজি এবং
  • পানি ৮০ লিটার
  • মোট ১০০ লিটার
নোট: আমাদের দেশে ১০% ঘনত্বের দ্রবণ সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url