মিয়া খলিফার জীবন ইতিহাস

মিয়া খলিফার জীবন ইতিহাস

সংক্ষিপ্ত কর্ম জীবনে পর্নোগ্রাফি অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিত মিয়া খলিফা কিন্তু তিনি বেশিদিন পর্নোগ্রাফি অভিনেত্রী হিসেবে কাজ করেনি। চলুন যেনে নেওয়া যাক মিয়া খলিফার সম্পর্কে।

মিয়া খলিফার জীবনী

একজন আমেরিকান প্রাক্তন পর্নোগ্রাফি মুভির অভিনেত্রী হলেন মিয়া খালিফা। মূলত মিয়া খালিফা পর্নোগ্রাফি মুভি করার জন্যই পরিচিত। নিচে মিয়া খালিফা সংক্ষিপ্ত জীবন ইতিহাস তুলে ধরা হলো-

জন্ম তথ্য:

মিয়া খলিফার জন্ম লেবাননের বৈরুতে ১৯৯৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করে। পরবর্তীতে দক্ষিণ লেবাননের দ্বন্দ্বের কারণে পরিবারের সাথে ২০০১ সালের জানুয়ারি মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হয়।

শিক্ষা জীবন:

মিয়া খলিফা লেবাননের বৈরুতে একটি বেসরকারি ফরাসি বিদ্যালয়ে লেখা পড়া করতো এবং সেখানেই তিনি ইংরেজি শিখেন।

পরবর্তীতে পরিবারের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসার পরে মেরিল্যান্ড ও মন্টগোমেরি কাউন্টিরতে বসবাস করতেন এবং সেখানে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। মিয়া খলিফা বিদ্যালয়ে ল্যাক্রোসি বাজাতেন।

মিয়া খলিফা খণ্ডকালীন "ম্যাসানুনটেন মিলিটারি একাডেমি" থেকে লেখাপড়া শেষ করে কলেজে পড়ার জন্য টেক্সাসে চলে যান। এর কিছু বছর পরে ইতিহাসের উপর বিএ ডিগ্রি লাভ করেন ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট এল পাসো থেকে।

কর্ম জীবন:

মিয়া খলিফা কলেজে পড়ার সময় থেকে বারটেন্ডার হিসেবে কাজ করতেন এবং এর পাশাপাশি কিছু মডেলিংয়েও কাজ করছেন। মিয়া খলিফা ডিল অ্যান্ড নো ডিলের মতন স্থানীয় টেলিভিশন গেমসে "ব্রিফকেস গার্ল" হিসাবে কাজ করতেন। লেখাপড়া শেষ করে একেবারে চলে আসে ওখানে নগ্ন মডেলিং করার জন্য।

মিয়া খলিফা পর্নোগ্রাফি চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন ২০১৪ সালে অক্টোবর মাসে। মিয়ামিতে হেঁটে বেড়ানোর সময় তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি পর্নোগ্রাফি চলচ্চিত্র করতে ইচ্ছুক কিনা। হিজাব পরিহিত অবস্থায় একটি পর্নোগ্রাফি ভিডিও করার কারণে তিনি অনেক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। এই ভিডিওটি মিয়া খলিফা কে যেমনি জনপ্রিয় করেছিল তার পাশাপাশি তাকে ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গের সামনে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। ওই ভিডিওর প্রযোজক বলেন, আমি খলিফার জাতিগোষ্ঠীর সুযোগ সদব্যবহার করতে চাইনি এবং এই কাজের নৈতিবাচক চিন্তা ও কল্পনা করিনি। এক্সহ্যামস্টারের উপ- সভাপতি "অ্যালেক্স" বলেছিল যে, আরব বিশ্বে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে তা কিছুটা স্ট্রাইস্যাল্ড এফেক্ট হয়ে দাড়িয়েছে। হঠাৎ সবাই মিয়া খলিফা সার্চ করতে শুরু করেছে যার কারণে খলিফা আরো বেশি বিশ্ব ব্যাপী পরিচিতি পেতে থাকে। মিয়া খলিফার অ্যাডাল্ট পর্ণ ভিডিও ওয়েবসাইট পর্ণহাবে ২০১৫ সালে ১.৫ মিলিয়নের অধিক মানুষ মিয়া খলিফা সার্চ করেছিল যার কারণে ২২ বছর বয়সি খলিফা পর্নোগ্রাফি মডেল হিসাবে উন্নতি হয়। ফলস্বরূপ ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে পর্নোগ্রাফি মডেল ১ নাম্বার হিসাবে মিয়া খলিফার নাম প্রকাশ করা হয়।

মিয়া খলিফার এই খ্যাতি মধ্যপ্রাচ্যের রক্ষণশীল জনমতের কঠোর সমালোচনা সম্মুখীন হয়, যে মিয়া খলিফার পেশাজীবন অনেক খারাপ ও লজ্জাজনক। যার ফলে মিয়া খলিফার দেশে অনেক সম্মানহানি ঘটে। মিয়া খলিফা পর্ণহাবে যখন শীর্ষ স্থানে ছিল, তার পর পরেই অনলাইনে সে মৃত্যুর হুমকি পায়। এমনকি ইসলামিক "স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট" তাকে শিরচ্ছেদ করার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে এমন ছবি প্রকাশ করা হয়। মিয়া খলিফা কে একটি সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, তাকে নরকে যাবার দাবি জানায় কিন্তু এর জবাবে তিনি বলেন, "আমি সম্প্রতি একটু চিন্তিত"। মিয়া খলিফার এই সকল সমালোচনা গুলো সংবাদ পত্রে নিবন্ধনও ছাপা হয় কিন্তু তার এই ঘটনাগুলো দেশের অন্যান্য ঘটনা থেকে তুচ্ছ মনে করা হয়।

মিয়া খলিফা "দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে"র একটি সাক্ষাৎকারে বলেন বিতর্কিত ও সমালোচিত এই দৃশ্যটি ছিল বিদ্রুপাত্মক তাই সেটাকে সেই ভাবেই গ্রহণ করা উচিত। তিনি আরো দাবি জানিয়ে বলেন, হলিউড চলচ্চিত্ররে পর্নোগ্রাফির থেকেও ইসলামকে আরো বিচিত্র করে দেখানো হয়। মিয়া খলিফার প্রাপ্তবয়স্ক পরিবেশ হয়ে ওঠার সিদ্ধান্তে যারা সর্বজনীন সমর্থন করতেন তাদের মধ্যে একজন হলো ব্রিটিশ নেবানিয়া লেখক "নাসরি আতাল্লাহ"।

৩-৪ জানুয়ারি ২০১৫ সালে পর্ণহাবে উপাত্ত অনুসারে মিয়া খলিফা অনুসন্ধান পাঁচ দফা উন্নতি হয় যার এক চতুর্থাংশ অনুসন্ধানকারী ছিল লেবানন থেকে। মূলত লেবানন থেকে অনুসন্ধানকারী ছিল মধ্যপ্রাচ্যের সিরিয়া ও জর্দান অঞ্চলের কাছাকাছি থেকে।

মিয়া খলিফা ২০১৫ সালে জানুয়ারিতে প্রতি মাসে বহু চলচ্চিত্রে অভিনয় করার জন্য বহু কোম্পানির সাথে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে কিন্তু দুই সপ্তাহ চলচ্চিত্রে অভিনয় করার পর তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এবং সকল চুক্তি বাতিল করেন। বিশ্ব জুড়ে তার এই পেশজীবন নিয়ে যে নৈতিবাচক মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে সেই জন্য সে এই পেশা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। মিয়া খলিফা বলেছিল, আমার এই সিদ্ধান্ত ইতিবাচক বা নৈতিবাচক সেটা আমি জানি না এমনকি আমার এই সিদ্ধান্তের কারণে আমার বন্ধু - বান্ধব ও পরিবার কি ভুগসে সেটা নিয়েও আমি বেশি কখনো ভাবি নাই।

২০১৬ সালে "দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে"র একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন আমি মাত্র তিন মাস পর্নোগ্রাফি কাছে অভিনয় করছি এবং এক বছর আগে ওই পেশা ছেড়ে দিয়েছি। তিনি আরো বলেন সত্যি এই পেশা আমার জন্য ছিল না এবং আমি নিজেকে ধীরে ধীরে এই পেশা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছি। ২০১৬ সালের মে মাসে মিয়া খলিফা একজন "ওয়েবক্যাম মডেল" হিসাবে কাজ শুরু করে।

২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে এক্সাহ্যামস্টার এক প্রতিবেদনে জানায় ২০১৬ সালে প্রাপ্তবয়স্ক অনুসন্ধানে শীর্ষে মিয়া খলিফা। পর্নোগ্রাফি ছাড়ার পরেও ২০১৮ সালে তিন বছর পরেও পর্ণহাবের দ্বিতীয় স্থানে ছিল খলিফা। তিনি ২০১৯ সালে আগস্ট মাসে প্রকাশ করে যে, আমি শুধু পর্ণহাবের কাজ থেকে টাকা নিয়েছি অন্য কোনো সাইট থেকে বাড়তি টাকা গ্রহণ করিনি এবং তিনি আরো বলেন পর্নোগ্রাফি কাজ করে পর্ণহাব থেকে মার্কিন $১২,০০০ ডলার উপার্জন করেছি।

পর্নোগ্রাফি পরবর্তী জীবন:

মিয়া খলিফা কর্মজীবনে পর্নোগ্রাফি পেশা থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পরে নিয়মিত ভাবে প্যারালিগাল ও বুককিপার হিসেবে কাজ করছে। নিজেকে একজন সামাজিক মাধ্যমে ব্যাক্তিত্ব প্রকাশ করার জন্য এর পাশাপাশি ক্রীড়া ভাষ্যকার ও ওয়েবক্যাম মডেল হিসেবে কাজ শুরু করেছে। খলিফা একটা ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনা করেন। খলিফা "গিলবার্ট অ্যারেনাস কমপ্লেক্স"র একটি নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে অক্টোবর ২০১৭ সাল থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সাল পর্যন্ত দৈনিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে আউট অব বাউন্ডস সঞ্চালনের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল।

খলিফাকে টাইলার কো এর পাশাপাশি স্পোর্টসবল এর সহ- আয়োজক হিসেবে ঘোষণা করা হয় যা ১৬ জুলাই ২০১৮ সালে দ্বিতীয় মৌসুমে একক ভাবে রোস্টারটিথে প্রচার করা হয় এবং এর ফাইনাল পর্বটি ৩০ অক্টোবর ২০১৮ সালে প্রকাশ করা হয়।

ব্যাক্তিগত জীবন:

২০১১ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে মাত্র ১৮ বছর বয়সে তার স্কুল প্রেমিককে বিয়ে করেন এবং ২০১৪ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।

তিনি ২০১৬ সালে পর্নোগ্রাফি পেশা শুরু করার সময় নিয়ামত ভাবে ফ্লোরিডার বসবাস করত এবং পরে টেক্সাসে চলে আসেন। খলিফা ছিল ফুটবলের খুব ভক্ত। তিনি পর্ণপেশা থেকে ইতি টানার পরে ডি সি অঞ্চল, ওয়াশিংটন, ওয়াশিংটন রেডস্কিন্স, ওয়াশিংটন উইজার্ডস ও ন্যাশনাল হকি‌ লীগের ওয়াশিংটন ক্যাপিটাল সহ তার প্রিয় ক্রীয়া দল গুলোকে সমর্থন করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইনস্টাগ্রামে ১১ মিলিয়ন ও টুইটারে ২.৩ মিলিয়নের অধিক ভক্ত সৃষ্টি হয়।খলিফার প্রিয় খেলোয়াড় হলো "আন্দ্রে বুরাভস্কি"। দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের ড্যান‌ স্টাইনবার্গ পর্যবেক্ষণ করে দেখেন যে খলিফার পেশা পরিবর্তন হলেও সামাজিক যোগাযোগ আগের চেয়ে কিছুটা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

মিয়া খলিফা ২০১৯ সালে সিয়াডিয় রন্ধনশিল্পী রবার্ট স্যান্ডবার্গের সাথে আবদ্ধ হয় প্রণয়ে এবং ২০১৯ সালের ১২ মার্চ তাদের বাগদান সম্পূর্ণ হয়। এর কিছুদিন পর তাদের বিবাহ করার পরিকল্পনা ছিল কিন্তু ২০১৯-২০২০ সালের করোনা ভাইরাস জনিত সমস্যার কারণে তাদের বিবাহ স্থাগিত হয়ে যায়।

বর্তমানে খলিফা "লস অ্যানঞ্জেলেসে" শহরে বসবাস করে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url