ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের দৈনিক খাদ্য তালিকা
আমাদের দেশে ছাগলের যেসব জাত রয়েছে তার মধ্যে ব্ল্যাক বেঙ্গল একটি উন্নত মানের জাত। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মাংস যেমন সুস্বাদু, তেমনি চামড়াও আন্তর্জাতিকভাবে উন্নতমানের স্বীকৃত। তাছাড়াও ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বাচ্চা উৎপাদন ক্ষমতা অধিক। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল প্রধানত গোশত ও চামড়া উৎপাদনকারী জাত হিসেবে সারা বিশ্বে স্বীকৃত। এদের গড় ওজন ১৫ কেজি এবং কখনও কখনও ৩০-৩২ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ছাগল পালন করে প্রান্তিক খামারিরা বা একজন ভূমিহীন বাড়তি আয় করতে পারেন।
একটি ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলকে দৈনিক কতটুকু খাবার প্রয়োজন:
ফলপ্রসূ উৎপাদনের জন্য ছাগলকে প্রতিদিন সঠিক পরিমাণ খাদ্য দিতে হবে। আশানুরূপ ফল পেতে ছাগলকে প্রতিদিন দুই ধরনের খাবার দিতে হবে "আঁশযুক্ত বা আঁশজাতীয় খাবার এবং দানাদার খাবার"। নিচে একটি ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের দৈনিক খাদ্য তালিকা তুলে ধরা হলো-
ছাগলের ওজন | দানাদার খাদ্য | আঁশজাতীয় খাদ্য |
---|---|---|
৪ কেজি | ১০০ গ্রাম | ০.৫ কেজি |
৬ কেজি | ১৫০ গ্রাম | ০.৮ কেজি |
৮ কেজি | ২০০ গ্রাম | ১.০ কেজি |
১০ কেজি | ২৫০ গ্রাম | ১.৫ কেজি |
১২ কেজি | ৩০০ গ্রাম | ২.০ কেজি |
১৪ কেজি | ৩৫০ গ্রাম | ২.৫ কেজি |
১৬ কেজি | ৩৫০ গ্রাম | ৩.০ কেজি |
১৮ কেজি বা তার উপরে | ৩৫০ গ্রাম | ৩.৫ কেজি |
নোট: সাধারনত ৩ থেকে ১২ মাস বয়স কালকে ছাগলের বাড়ন্ত বয়স বলা হয়। এজন্য এ সময়ে পর্যাপ্ত পরিমান আঁশ জাতীয় ও প্রোটিন সমৃদ্ধ দানাদার খাদ্য দিতে হবে। ঘাসের পরিমাণ পর্যাপ্ত হলে দানাদার খাদ্য কম হলেও সমস্যা নেয়।
আঁশজাতীয় খাদ্য:
গ্রামাঞ্চলের মানুষ সাধারণত দিনের বেলাতে ছাগল মাঠে রেখে আসে এবং তারা তাদের মতো করে ঘুরে ঘুরে সারা দিন ঘাস খেয়ে থাকে। কাজে তাদেরকে আঁশজাতীয় খাবার দেবার প্রয়োজন হয় না। তবে অনেক সময় মাঠে চড়ানো সম্ভব হয় না, তখন আঁশযুক্ত খাবার অবশ্যই দিতে হবে।
ক্ষুদ্র খামারিরা বাড়ির আঙিনায়, রাস্তার পাশে ও জমির আইলে কাঁঠালপাতা, নেপিয়ার, শিম, আলফালফা, ইপিল ইপিল গাছের চারা রোপণ করতে পারেন। এ থেকে সারা বছর ছাগলের জন্য আঁশযুক্ত খাবার সংগ্রহ করতে পারবেন।
দানাদার খাদ্য:
শুধু আঁশযুক্ত খাবার ছাগলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের চাহিদা মেটাতে পারে না। আশানুরূপ উৎপাদন পেতে হলে আঁশযুক্ত খাবারের পাশাপাশি দানাদার খাবার অবশ্যই দিতে হবে।
পানি:
বিশুদ্ধ পানি পরিমিত পরিমাণে নিয়মিত দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন পানি বিশুদ্ধ হয়। সে কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
দানাদার খাদ্যের সাধারণ মিশ্রণ:
যেসব খাবারে আয়তনের তুলনায় গুনগত মান বেশি থাকে এবং সহজপাচ্য হয় তাকে দানাদার খাদ্য বলা হয়। পশুর দানাদার খাদ্যগুলো হল গমের ভুসি, চালের কুঁড়া, ভুট্টা, বিভিন্ন প্রকার খৈল, ছোলা, কলাই, খেসারি, শুকনো মাছের গুঁড়া, সয়াবিন ইত্যাদি। নিচের ছকে ১০০ কেজি দানাদার খাদ্য তালিকা দেওয়া হলো।
খাবারের নাম | পরিমাণ |
---|---|
গমের ভূষি/আটা কুড়া | ৪৫ কেজি |
সয়াবিন খৈল | ২০ কেজি |
গম/ভূট্টা ভাঙ্গা/চাল | ১৫ কেজি |
খেসারী/মাসকালাই/অন্য ডালের ভূষি | ১৫ কেজি |
শুটকি মাছের গুড়া | ১.৫ কেজি |
ডাই-ক্যালসিয়াম ফসফেট | ২ কেজি |
লবণ | ১ কেজি |
ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স | ০.৫ কেজি |
মোট- | ১০০ কেজি |
ছাগলকে খাবার খাওয়ানো পদ্ধতি:
পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার সুবিধামতো সময়ে দিনে দুই বা প্রয়োজন অনুযায়ী দিতে হবে। আর দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ প্রাপ্ত বয়স্ক প্রতি ছাগলকে প্রতিদিন ১৬ গ্রাম অর্ধেক করে ৮ গ্রাম সকালে এবং ৮ গ্রাম বিকালে খাওয়াতে হবে। ছাগলের বাচ্চাকে তিন মাস বয়স পর্যন্ত প্রতিদিন ১০ গ্রাম (৫ গ্রাম সকালে এবং ৫ গ্রাম বিকালে) দিতে হবে।
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বাচ্চাকে খাওয়ানোর নিয়ম:
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বাচ্চাকে খাবার খাওয়ানোর ক্ষেত্রে যেসব বিষয় গুলো খেয়াল করবেন তা হলো-
- ছাগলের বাচ্চা জন্ম নেওয়ার সাথে সাথেই ভালোভাবে পরিস্কার করে দিতে হবে এবং ১ ঘন্টার মধ্যেই তাকে মায়ের শাল দুধ খাওয়াতে হবে।
- দুই বা তারও বেশি বাচ্চা হলে প্রতিটা বাচ্চায় যেন সমান ভাবে শাল দুধ খেতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
- প্রতিটি বাচ্চাকে ওজন প্রতি ১০ থেকে ২০ গ্রাম দুধ খাওয়ানো প্রয়োজন।
- বাচ্চাকে সম পরিমাণ দুধ দিনে ৫ থেকে ৮ বার খাওয়াতে হবে।
- ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে দুধ খাওয়া ছেড়ে দেয়।
- বাচ্চার পরিমাণ বেশি হলে বা মায়ের দুধ কম হলে অন্য ছাগল বা গরুর দুধ খাওয়াতে হবে এবং সব বাচ্চা যেন সমান পরিমাণ দুধ পায় সে দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
- বাচ্চাকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি অল্প অল্প করে ঘাস ও দানাদার খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে হবে।
সতর্কতা:
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন করলে যেসব সতর্কতা আবলম্বন করতে হবে তা নিচে তুলে ধরা হলো-
- নিয়মিত ছাগলের ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে ঘর যাতে ভেজা স্যাঁতসেঁতে না হয়।
- ছাগলের পানি ও খাবারে যাতে রোগ-জীবাণু না থাকে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
- নতুন ছাগল কিনে বাড়িতে আনার পর কমপক্ষে ৭ দিন আলাদা করে রাখতে হবে। এছাড়াও যেসব রোগের টিকা পাওয়া যায় সেই সব টিকা দিয়ে নিতে হবে। তারপরে অনান্য ছাগলের সাথে মিশাবেন।
- কোনো রোগের লক্ষণ দেখা দিলে সাথে সাথে রোগাক্রান্ত ছাগলকে আলাদা করে রাখতে হবে এবং রোগাক্রান্ত ছাগলকে যত তারাতারি সম্ভব পশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
- যেসব ছাগল রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় সেগুলোকে মাটিতে পুঁতে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
- ছাগলের স্বাস্থ্য নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে।
- মনে রাখতে হবে, রোগ হওয়ার পর চিকিৎসা করার থেকে, রোগ হওয়ার আগেই নিয়ন্ত্রণ করা ভালো হবে। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকা দিতে হবে।