সুষম খাদ্য কী কী

সুষম খাদ্য কী কী

পুষ্টিকর খাবার বলতে আমরা বেশির ভাগ মানুষ মাছ, মাংস, দুধ ও ডিমকে বুঝে থাকি। কিন্তু না সুষম খাবারের পুষ্টিগুণ আমাদের আশেপাশে চাষ করা শাকসবজি, ফলমূল এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ডালের মধ্যেও বিদ্যমান থাকে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সুষম খাদ্য সম্পর্কে

সুষম খাদ্য কি

যে সকল খাবার মানবদেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে তাকেই সুষম খাদ্য বলে। সুষম খাদ্য বলতে শর্করা, আমিষ, ভিটামিন, স্নেহ, খনিজ লবণ ও পানিকে বুঝায়। এই ছয়টি উপাদান থেকে আমরা যদি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আমিষ, শর্করা ও স্নেহ জাতীয় খাবার রাখতে পারি তাহলে পুষ্টিহীনতা দূর করা সম্ভব। আমাদের শরীরে ক্যালরির চাহিদা বয়স ও পরিশ্রম ভেদে প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাই প্রতিদিন দেহের চাহিদা পূরণ করার জন্য সুষম খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন।

সুষম খাদ্যের উপাদান

শর্করা, আমিষ, ভিটামিন, স্নেহ বা চর্বি, খনিজ লবণ, পানি এই ছয়টি উপাদানকে এক সাথে সুষম খাদ্য বলা হয়। তাই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই ছয়টি উপাদান রাখা খুবি প্রয়োজন।

শর্করা

শর্করা জাতীয় খাবারের প্রধান কাজ হলো দেহে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তাপ শক্তি উৎপাদন। সাধারণত শর্করা জাতীয় খাবার হলো ভাত, চিড়া, রুটি, খই, নুডলস, মুড়ি, ওটস, আলু, পাস্তা ইত্যাদি। এই খাবার গুলো থেকে আমরা প্রতিদিনের শক্তি চাহিদার ৬০-৭০% পেয়ে থাকি। শর্করার প্রধান উৎস হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে গমের আটার রুটি, লাল চাল, ওটস ইত্যাদি খাবারকে।

আমিষ

আমিষ জাতীয় খাদ্য আমাদের দেহের বৃদ্ধি ও গঠন সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। প্রত্যেকের দেহ ও ওজনের পার্থক্য অনুযায়ী আমিষের চাহিদার পার্থক্য রয়েছে। সাধারণ হিসেবে দেহের প্রতি কেজি ওজন অনুযায়ী প্রতিদিন ০.৮৩ গ্রাম আমিষ খাওয়া প্রয়োজন। প্রাণিজ আমিষ হিসেবে আমরা খেতে পারি মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ যাকে প্রথম শ্রেণীর আমিষ বলা হয়। আর দ্বিতীয় শ্রেণীর আমিষ বলা হয় উদ্ভিজ্জ আমিষকে যেমন- সীমের বীচি, বিভিন্ন ধরনের ডাল, মটর শুঁটি, কাঁঠালের বীচি, বাদাম ইত্যাদি। প্রতি ১ গ্রাম আমিষ থেকে ৪ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিনের শক্তি চাহিদার ২০-২৪% আমিষ থেকে গ্রহণ করা উচিত।

স্নেহ বা চর্বিজাতীয় খাবার

তেল, মাখন ও ঘি এই শ্রেণীর খাদ্যগুলো কে স্নেহ বা চর্বিজাতীয় খাবার বলা হয়। আমরা প্রতিদিনের স্নেহ বা চর্বিজাতীয় খাবার থেকে ২০-২৪% শক্তি পেয়ে থাকি। বিশেষ ফ্যাট হিসেবে আমরা সরিষা, সানফ্লাওয়ার বা বাদামের তেলকেও ব্যবহার করতে পারি।

ভিটামিন

ভিটামিন আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান। ভিটামিনের অভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যাই। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় সবুজ শাক, কাঁচামরিচ, পাকা পেঁপে, পুদিনা পাতা, সজনে পাতা, ধনে পাতা, মূলাশাক ইত্যাদি রাখা দারকার। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফল রাখতে পারেন যেমন- আমলকি, জাম্বুরা, আপেল, কমলালেবু, আমড়া, লেবু, কলা, আঙ্গুর, পেঁয়ারা, চেরি, কিউই, আম ইত্যাদি।

খনিজ লবণ

সুস্বাস্থ্য থাকার জন্য মিনারেল বা খনিজ লবণ (যেমন- ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। টাটকা ফলমূল, সবুজ শাকসবজি, ডিম, দুধ, ডাল, গোশত ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ মিনারেল থাকে। এছাড়া ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদির জন্য শুকনো খাবার, ছোট মাছ, শুকনো ফল, সরষে, সবুজ শাক, কলার মোচা, কাঁচকলা ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।

পানি

একজন মানুষের প্রতিদিন কি পরিমাণ পানি পান করা প্রয়োজন তা নির্ভর করে তার ওজন, বয়স, পরিশ্রম ও ভৌগলিক আবহাওয়া উপর। কিন্তু একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস বা ৩-৩.৫ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন।

সুষম খাদ্যের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

সুস্বাস্থ্যের জন্য সুষম খাদ্যের প্রয়োজন অপরিসীম। প্রতিদিনের কাজকর্ম করার জন্য আমাদের শরীলে শক্তির প্রয়োজন হয়। আর আমরা এই শক্তি পেয়ে থাকি সুষম খাদ্য থেকে। তাই আমরাদের প্রতিদিন সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে, তাহলেই আমাদের দেহের পুষ্টি ও ক্যালরির চাহিদা পূরণ হবে। সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তাছাড়া পুষ্টি ও ক্যালরির চাহিদা সঠিক ভাবে পূরণ না হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাই। যে কারণে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে এবং শিশুদের ক্ষেত্রে আরো বিপদজনক সমস্যা দেখা দিতে পারে। শিশুরা পুষ্টিহীনতায় ভোগার কারণে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাঁধা সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যাই, যে কারণে শিশুরা অপুষ্টিজানিত রোগে আক্রান্ত হয়। তাই আমাদের সকলের উচিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করা।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url