সেন্টমার্টিন দ্বীপ সম্পর্কে কিছু তথ্য
দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে যেতে কে না ভালোবাসে। আপনিও যদি দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে ভালবাসেন তাহলে কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে ঘুরে আসতে পারেন। ঘোরাঘুরির জন্য উপযুক্ত ও অন্যতম দর্শনীয় স্থান হল সেন্টমার্টিন দ্বীপ। কারণ এখানে ঘুরতে এসে আপনি কখনো ক্লান্ত হবেন না, চারিদিকের মনোরম পরিবেশ ও অপরূপ সৌন্দর্য্য দেখে আপনি হারিয়ে যাবেন স্বপ্নের দুনিয়ায়। যে কোন সময় এখানে ঘুরতে যেতে পারেন তবে, এখানে ঘুরতে যাওয়ার সঠিক বা উপযুক্ত সময় হলো নবেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত।
আমাদের দেশের অন্যতম দর্শনীয় একটি স্থান হলো সেন্টমার্টিন দ্বীপ। সেই দ্বীপের অবস্থান, আয়তন, নাম করণ কিভাবে হল, কত জন জনসংখ্যা বসবাস করে, কিসের জন্য বিখ্যাত, কিভাবে সেখানে যাবেন, সেখানে গিয়ে কি কি দেখবেন এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপে থাকার কোন ব্যবস্থা আছে কিনা সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের অবস্থান:
চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলা থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে ও মায়ানমার হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মাঝে অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপটি। এছাড়া বঙ্গোপসাগরের উত্তর - পূর্বাংশে সেন্টমার্টিন দ্বীপ অবস্থিত।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ আয়তন কত
সেন্টমার্টিন দ্বীপ আয়তন মাত্র ৮ বর্গ কিলোমিটার।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের নাম করণ:
কিছু আরব বণিক চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণ - পূর্ব এশিয়ায় বাণিজ্য করতেন এবং বাণিজ্যের উদ্দেশে যাতাযাত করার সময় তারা এই দ্বীপে বিশ্রাম করতেন। ওই সময় দ্বীপে অধিক নারিকেল গাছ থাকার কারণে আরব বণিকগন প্রথম দ্বীপের নাম করণ করে জিঞ্জিরা। কালক্রমে চট্টগ্রাম বাসি ও দ্বীপের বসবাসকারী মানুষ এই দ্বীপটিকে জিঞ্জিরা নামেই জানতেন। কিন্তু ১৯০০ সালে ব্রিটিশ ভূমি বিভাগের সদস্যরা ব্রিটিশ - ভারতের অংশ হিসাবে এই দ্বীপকে গ্রহণ করেন এবং তারা তখন এই দ্বীপের নতুন নাম করণ করেন সেন্টমার্টিন দ্বীপ। তবে দ্বীপের ইতিহাস থেকে জানা যায় ব্রিটিশ ভূমি বিভাগের সদস্যরা একজন ব্রিটিশ খ্রিস্টানের নাম অনুসারে এই দ্বীপের নতুন নাম করণ করে ছিলেন। তার পরে থেকে এই দ্বীপটি সেন্টমার্টিন দ্বীপ নামেই বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন ও জনসংখ্যা:
সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন ৮ বর্গ কিলোমিটার যার দৈর্ঘ্য ৬ কিলোমিটার ও প্রস্থ ০.৫ কিলোমিটার। এই দ্বীপে বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ যে কারণে বিখ্যাত:
শাড়ি শাড়ি নারিকেল গাছের অপরূপ সৌন্দর্য ও মনোরম পরিবেশ সেন্টমার্টিন দ্বীপকে বিখ্যাত করে তুলেছে। এছাড়া ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১৮৭ প্রজাতির শামুক - ঝিনুক, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির গুপ্তজিবি, ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ১২০ প্রজাতির পাখি, আকাশের নীল রং ও সমুদ্রের নীল পানির জন্য এই দ্বীপটি বিখ্যাত। যা দেখার জন্য প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক পাড়ি জমান দ্বীপটিতে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাতাযাত ব্যাবস্থা:
আপনি যদি ঢাকা থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যেতে চান, তাহলে আপনাকে ঢাকা থেকে বাসে করে টেকনাফ যেতে হবে। ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও গাবতলী থেকে টেকনাফ যাওয়ার বাস পাওয়া যায়। শ্যামলী, ঈগল, এস আলম ও মর্ডান লাইনের গাড়ি গুলোর ঢাকা টু টেকনাফ সার্ভিস রহেছে। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাস গুলো টেকনাফ শহরে যেতে ১০ - ১২ ঘণ্টা সময় লাগে। বাসের ভাড়া নন এসি ৭০০-৮০০ টাকা আর এসি ৯০০-১০০০ টাকা।
আর আপনি যদি ঢাকার বাহির থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যেতে চান তাহলে আপনাকে যেতে হবে চট্টগ্রাম বা কক্সবাজার এবং তার পরে ওখান থেকে যেতে হবে টেকনাফ। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে সময় লাগে ৪-৫ ঘণ্টা (ভাড়া ৩০০ টাকা) আর চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ যেতে সময় লাগবে ৬-৭ ঘণ্টা (ভাড়া ৪৫০ টাকা)।
টেকনাফ শহরে যাওয়ার পরে ওখান থেকে সিএনজি করে যেতে হবে দমদমিয়া ঘাট বা জেটি ঘাট। দমদমিয়া ঘাট বা জেটি ঘাট থেকে প্রতিদিন ৯.৩০ টায় ট্রলার ছেরে যায় সেন্টমার্টিন দ্বীপের উদ্দেশে। ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যেতে দুই ঘণ্টা থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগবে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান:
আসলে অনেকেই ঘুরতে যেতে চান সেন্টমার্টিন দ্বীপে আবার অনেকে ঘুরেও এসেছেন কিন্তু তার পরেও অনেকে জানেন না সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান গুলো কোথায় ও তার নাম কি? আর যারা জানেন না তাদের জানানোর চেষ্টা করবো আজকের এই পোষ্টটির মাধ্যমে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান গুলোর নাম।
- শাহপরীর দ্বীপ।
- সেন্টমার্টিন বাংলাদেশ।
- সেন্টমার্টিন দ্বীপ।
- পশ্চিম দ্বীপ বাংলাদেশ।
- টাঙ্গুয়ার হাওড়।
- জাতীয় উদ্যান।
যদি কখনো সেন্টমার্টিন দ্বীপ যাওয়ার সৌভাগ্য হয় তাহলে অবশ্যই উপরের উল্লেখিত স্থান গুলোর সুন্দর্য উপভোগ করতে ভূল করবেন না।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের রিসোর্ট:
আপনারা অনেকেই ভাবছেন সেন্টমার্টিন দ্বীপে ঘুরতে যাবেন কিন্তু কোথায় রাত্রি জাপন করবেন বা সেখানে থাকার মতন কোনো ব্যাবস্থা আছে কিনা সেটা নিয়ে অনেক চিন্তিত! আপনার চিন্তার কোনো কারণ নেই, সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনেক গুলো রিসোর্ট রয়েছে রাত্রি জাপন করার জন্য। চলুন যেনে নেওয়া যাক রিসোর্ট গুলোর নাম ও ভাড়া সম্পর্কে।
১। শাহারি ইকো রিসোর্ট।
ভাড়া: ৩০০০-৩৫০০ টাকা।
২। গোধূলী ইকো রিসোর্ট।
ভাড়া: ২৫০০-৩৫০০।
৩। সিটিভি রিসোর্ট।
ভাড়া: ৩০০০-৬০০০ টাকা
৪। ডায়মন্ড সি রিসোর্ট।
ভাড়া: ২৫০০-৩৫০০ টাকা।
৫। হোটেল শোর।
ভাড়া: ২২০০-৩০০০।
৬। লাবিবা বিলাস রিসোর্ট।
ভাড়া: ৩৫০০-১২০০০।
৭। নীল দিগন্ত হোটেল।
ভাড়া: ৪০০০-৫০০০।
৮। মিউজিক ইকো হোটেল।
ভাড়া: ৩৫০০-৪৫০০।
৯। সমুদ্র কুটির রিসোর্ট।
ভাড়া: ২৫০০-৩৫০০টাকা।
১০। আটলান্টিক রিসোর্ট
ভাড়া: ৪০০০-৫০০০টাকা।
তাহলে আর দেরি কিসের এখুনি ঘুরে আসুন আপনার স্বপ্নের দ্বীপে। তবে যদি আপনারা ব্যাস্ত না থাকেন তাহলে শুক্র বার ও শনিবার বাদ দিয়ে অন্য যে কোনোদিন ঘুরতে যাবেন। তাহলে একটু সস্তির সাথে ঘুরতে পারবেন কারণ এই দুই দিন এখানে অনেক পর্যটকের আগমন ঘটে।