নীলগিরি বান্দরবান - Bandarban Nilgiri

নীলগিরি বান্দরবান পর্যটন কেন্দ্রের নাম কম বেশি আপনারা অনেকেই শুনেছেন কিন্তু এখনও যাওয়া হয়নি। ভাবছেন ঘুরতে যাবেন মেঘের রাজ্যে কিন্তু কিভাবে যাবেন সেটা নিয়ে চিন্তায় আছেন। তাহলে চলুন এই পোষ্টটি মাধ্যমে জেনে নেয়া যাক কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কি খাবেন বা কোথায় গুরবেন সেই সব সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করব।


নীলগিরি বান্দরবান

নীলগিরি সম্পর্কে ধারণা:

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের বান্দরবান জেলায় নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রটি অবস্থিত। এই পর্যটন কেন্দ্রটি বান্দরবান জেলা শহর থেকে পঞ্চাশ কি:মি: দূরে অবস্থিত। এই নীলগিরি পাহাড়ের উচ্চতা ২২০০ ফুট এবং এই পাহাড়ের চূড়ায় পরিচালনায় রয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবহিনী। এই পর্যটন কেন্দ্রে গিয়ে আপনি দেখতে পাবেন মেঘের খেলা, আলোর খেলা, বিকালের সূর্যস্ত ও জ্যোৎস্না রাতের আলোতে আলোকিত চারপাশ যা আপনাকে মুগ্ধ করবে। বাংলাদেশের সুন্দর পর্যটন কেন্দ্রের ভিতরে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র অন্যতম একটি স্থান।

নীলগিরিতে যাতাযাত ব্যবস্থা:

আপনার এলাকা থেকে সরাসরি বান্দরবান কোনো বাস সার্ভিস থাকলে সরাসরি বান্দরবান চলে যাবেন। আর যদি না থাকে তাহলে আপনাকে যেতে হবে চট্টগ্রাম হয়ে। আর যদি চট্টগ্রামের বাসও না থাকে তাহলে আপনাকে যেতে হবে ঢাকা হয়ে। আপনি ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবানের টিকিট নিবেন এবং চলে যাবেন বান্দরবান। ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ থেকে সেন্টমার্টিন পরিবহন, এস- আলম পরিবহন, হানিফ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন ইত্যাদি পরিবহণ প্রতিদিন বান্দরবানের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এই সব গাড়ির ভাড়া নন এসি ৫০০-৬০০ টাকা আর এসি ৯০০-১২০০ টাকা। ঢাকা থেকে বান্দরবান জেলা শহর যেতে সময় লাগবে ৮-১০ ঘণ্টা।

আর যারা ঢাকা থেকে ট্রেনে যেতে চান তারা ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে যেতে হবে চট্টগ্রাম ট্রেন স্টেশন। ঢাকা থেকে মহানগর গোধূলী, সোনার বাংলা, তূর্ণা নিশিতা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়ে যায় চট্টগ্রামের উদ্দেশে। চট্টগ্রাম থেকে বাসে করে যেতে হবে বান্দরবান। চট্টগ্রামের দামপাড়া ও বদ্দারহাট থেকে বাস ছেড়ে যায় বান্দরবানের উদ্দেশে। এই সকল বাসের ভাড়া ২২০-২৫০ টাকা নিয়ে থাকে।

বান্দরবান থেকে নীলগিরি:

বান্দরবান থেকে নীলগিরি যাবার জন্য বান্দরবান শহর থেকে লোকাল বাস, সিএনজি, জীপ, চান্দের গাড়ি, মহেন্দ্র ইত্যাদি গাড়ি করে যেতে হবে। তবে আপনে যদি বান্দরবান থেকে যাবার পথে কিছু দর্শনীয় স্থান ঘুরতে চান তাহলে আপনাকে গাড়ি রিজার্ভ করে নিতে হবে। আর গাড়ি যদি রিজার্ভ করতে চান, তাহলে আপনাকে বান্দরবান জীপ স্টেশন থেকে গাড়ি রিজার্ভ করতে হবে (ভাড়া নিবে ৩০০০-৫০০০ টাকা)। যদি আপনাদের লোক বেশি হয় তাহলে আপনারা নিতে পারেন চাঁদের গাড়ি (১২-১৪ জন) এক সাথে যেতে পারবেন আর যদি আপনাদের লোক কম হয় তাহলে নিতে পারেন সিএনজি (৪-৫ জন) যেতে পারবেন। তবে যদি আপনারা কম খরচে যেতে চান তাহলে লোকাল বাসে করে যেতে পারেন এতে খরচ পরবে ১২০ টাকার মতন জন প্রতি। বান্দরবান থানচি থেকে এক ঘন্টা পর পর গাড়ি ছেড়ে যায় নীলগিরির উদ্দেশে। সিএনজি, চান্দের গাড়িতে বা বাসে যেতে সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মতন। তবে নীলগিরির মেঘের খেলার সুন্দর্য যদি দেখতে চান তাহলে সকাল ৭-৮ টার মধ্যে নীলগিরিতে থাকতে হবে।

নীলগিরির নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান গুলো:

বান্দরবান ;নীলগিরিতে দেখার মত অনেক কিছু রয়েছে। সব জায়গা ; দেখার মত সময় হয়ে উঠে না। কিন্তু যেসব জায়গা না দেখলেই নয় নিচে সেই সব জায়গার কথা তুলে ধরা হলো-

  • স্বর্ণমন্দির
  • শৈলপ্রপাত ঝর্ণা
  • মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র
  • সাইরু হিল রিসোর্ট
  • চিম্বুক পাহাড়
  • নীলাচল
  • বগালেক
  • মিলনছড়ি ভিউ পয়েন্ট

ভ্রমণ পরিকল্পনা:

বান্দরবান থেকে নীলগিরি যাবার পথে নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থানে গুলোতে ঘুরতে হলে আপনাকে গাড়ি রিজার্ভ করে নিতে হবে তাহলেই আপনি শৈলপ্রপাত ঝর্ণা, সাইরু হিল রিসোর্ট, মিলনছড়ি ভিউ পয়েন্ট ও চিম্বুক পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে যেতে পারবেন। তবে যখন আপনি গাড়ি রিজার্ভ করবেন তখনি বলে নিবেন না হলে পড়ে জামেলা করতে পারে টাকা নিয়ে। আপনারা সকালে যখন বের হবেন তখন সরাসরি চলে যাবেন নীলগিরি তাহলে মেঘের দেখা মিলবে এবং ফিরে আসার সময় এক এক করে পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে নেমে তার সুন্দর্য উপভোগ করতে করতে ফিরবেন।

ভোজন ব্যবস্থা:

একটি রেস্তোরাঁ আছে নীলগিরিতে তবে সেখান থেকে যদি খাবার খেতে চান তাহলে আগে থেকে অর্ডার করতে হবে। আর যদি ওখানে খেতে না চান তাহলে আপনাকে ভ্রমণ শেষ করে বান্দরবান শহরে এসে খাবার খেতে হবে এবং সকালে যখন বের হবেন তখন কিছু শুকনা খাবার সাথে নিতে হবে। তবে বান্দরবান শহরে বেশ কিছু খাবার রেস্তোরাঁ রহেছে যেমন:

  • কলাপাতা রেস্তোরাঁ
  • রী সং সং রেস্তোরাঁ
  • রূপসী বাংলা রেস্তোরাঁ
  • তাজিং ডং ক্যাফে
  • মেঘদূত ক্যাফে
  • ফুড প্লেস রেস্তোরাঁ ইত্যাদি।

রাতে থাকার স্থান:

নীলগিরির কটেজে থাকার ব্যবস্থা আছে কোনো সমস্যা হবে না কারণ এখানের পুরো এলাকা সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত। তবে এই কটেজে থাকতে হলে আপনাকে আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখতে হবে এবং বুকিং দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর রেফারেন্স প্রয়োজন হবে। এই কাটেজ গুলো আকর্ষণীয় হবার কারণে দুই মাস আগে থেকে বুকিং করে রাখতে হয় না হলে সময় মতন বুকিং পাওয়া যাবে না। এখানে মোট ছয়টি কটেজ রয়েছে এবং প্রতিটির ভাড়া পড়বে ৪,০০০ - ১০,০০০ টাকার মতন।

আর যদি নীলগিরিতে থাকতে না চান বা বুকিং দিতে না পারেন তাহলে আপনাকে ফিরে যেতে হবে বান্দরবান শহরে। ওখানে থাকার মতন অনেক হোটেল রয়েছে। মূলত এখানে যারা ঘুরতে আসে তাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ সারাদিন ঘুরে এসে বান্দরবান শহরে গিয়ে থাকে।

বান্দরবান হোটেল সমূহ:

বান্দরবানে থাকার জন্য অনেক গুলো হোটেল রয়েছে। যেখানে প্রতিনিয়ত ;পর্যটকেরা রাত কাটান। তার মধ্য থেকে কয়েকটি হোটেলের নাম নিচে তুলে ধরা হলো-

১। পর্যটন হোটেল।

অবস্থান: পাহাড় ও লেকের পাশে এবং ৪ কিলোমিটার দূরে শহর থেকে।
ভাড়া: ১,৩০০-২,৫০০ টাকা।

২। হোটেল হিল ভিউ।

অবস্থান: বান্দরবন শহরের বাস স্ট্যান্ডের পাশে।
ভাড়া: ১,০০০-২,৫০০ টাকা।

৩। হোটেল হিলটন।

অবস্থান: বান্দরবন শহরের বাস স্ট্যান্ডের পাশে।
ভাড়া: ১,০০০-৩,০০০ টাকা

৪। রিভার ভিউ।

অবস্থান: শহরের সাঙ্গু নদী তীরে।
ভাড়া: ৬,০০-২,০০০ টাকা।

৫। হোটেল প্লাজা।

অবস্থান: শহরের বাস স্ট্যান্ড থেকে ৪ মিনিটের দূরত্বে।
ভাড়া: ৮,০০-৩,০০০ টাকা।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url